Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

Pic-03-11খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭: মোঃ রাসেল মিয়া, জেলা প্রতিনিধি : নরসিংদী জেলায় বিগত সময়ে লেভেল ক্রসিং পারাপার করতে গিয়ে দুঃখজনকভাবে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিগত সময়ে ঝুকিপূর্ণভাবে লেভেল ক্রসিং পারাপার করতে যাওয়ার সময় প্রায় শতাধিক মানুষের ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে। রেলের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার অন্যতম একটি হলো অবৈধ ও অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং, যা কিছুদিন পরপরই মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। গত কিছুদিন আগেও নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাড়ির সামনে একটি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ২ জন ব্যক্তি মারা যায়। এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তাড়াহুড়া করে ঐ ২ ব্যাক্তি রেললাইন অতিক্রম করার চেষ্টা করার সময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে যায়।

এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, প্রতিবছর লেভেল ক্রসিং নামের মৃত্যুফাঁদে পড়ে নরসিংদীতে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন মারা যায়। নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র আরশিনগর ও বাসাইল নামক স্থানে লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিবন্ধক ও গেটম্যান আছে। জিনারদী, মেথিকান্দা, শ্রীনিধি, হাসনাবাদ, আমিরগঞ্জ, ঘোড়াশাল লেভেল ক্রসিং সম্পূর্ন অরক্ষিত, সব সময় খোলা থাকে। কিছু ক্রসিংয়ে নামমাত্র প্রতিবন্ধক থাকলেও সেগুলো দেখার মতো কেউ নেই। এসব জায়গার ক্রসিংগুলোতে নেই গেট ব্যারিয়ার, নেই গেটম্যান। এলাকাবাসী পথ চলেন এক রকম জীবন হাতে নিয়ে। ২-৩টি লেভেল ক্রসিংয়ের পাশে ‘সাবধান! এই লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই, নিজ দায়িত্বে পার হোন’ লেখা সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হলেও বাকিগুলোতে টাঙানো হয়নি সাইনবোর্ডও। নরসিংদীতে গত ৫ বছরে লেভেল ক্রসিং এলাকায় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে প্রায় শতাধিক লোক প্রাণ হারিয়েছেন। পঙ্গু হয়েছেন অনেকেই। অরক্ষিত ওই ক্রসিংগুলোতে গেটম্যান ও গেট ব্যারিয়ারের দাবিতে এলাকাবাসী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও কোনো ফল পাননি।
অনুমোদনহীনভাবেই ক্রসিং বানানো প্রসঙ্গে নরসিংদী রেল কর্তৃপক্ষের সাথে গণমাধ্যম কর্মীরা কথা বলতে চাইলে তারা অনীহা প্রকাশ করেন। জানা যায়, রেলকে না জানিয়ে বা অনুমোদন না নিয়ে যত্রতত্র এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, ইউপি, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনসহ প্রয়োজনে প্রাইভেট পর্যায়ে রেলের ওপর দিয়ে ক্রসিং বানানো হয়েছে। এসবের জন্য বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। আর এর জন্য রেলওয়ে শতাধিক মামলা করেছে, যা বিচারাধীন রয়েছে। কথা হলো মামলা ঝুলে থাকার সময়কালে কি বেআইনিভাবে স্থাপিত রেল ক্রসিংগুলো অরক্ষিত মৃত্যুফাঁদ হয়ে থাকবে। এই সব ক্রসিং হয় নির্বাহী আদেশে বন্ধ করতে হবে, না হয় সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে- এর বাইরে আসলেই কোনো পথ নেই। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোতে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আমাদের যে দেশে রেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান রেখেই দুর্ঘটনা এড়ানো যায় না সেখানে শুধু সাইনবোর্ড টানিয়ে কতটা কী করা যাবে সেটা একটা প্রশ্ন বৈকি।
ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে অকার্যকর সিগন্যাল ব্যবস্থা, লেভেল ক্রসিংয়ের অব্যবস্থা এবং চালকের সিগন্যাল অমান্য করাকে দায়ী করা হয়। এ ছাড়া দায়িত্বহীন গেটম্যান লেভেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ না করার কারণে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষ বাধে। এসব ট্রেন দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী হতাহত হন, মারা যান ও অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেন। এসব দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে রেল ক্রসিং সুরক্ষিত করতেই হবে। এর জন্য অবৈধ রেল ক্রসিংগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাস্তব প্রয়োজন বিবেচনা করে এগুলো রাখা বা বন্ধ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং দ্রুত কার্যকর করতে হবে। সব লেভেল ক্রসিংয়ে অন্তত একজন সার্বক্ষণিক গেটম্যান রাখার কোনো বিকল্প পথ নেই বলে নরসিংদীর সচেতন মহল মত প্রকাশ করেন।