খােলা বাজার২৪।।সোমবার, ১৬ই অক্টোবর, ২০১৭: বখাটেপনা সামাজিক ব্যাধির রূপ নিয়েছে। গণমাধ্যমের খবর পড়ে বা শুনে এই সমস্যার গভীরতা পরিমাপ করা কঠিন।
কারণ এখনো লোকলজ্জার ভয় মানুষের মধ্যে কাজ করে। ফলে অনেক ঘটনাই চাপা থেকে যায়। এটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের ফল। এ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে সমাজকে সচেতন ও সরব হতে হবে, পুলিশ ও প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে, রাজনৈতিক প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে এবং সরকারকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে। টেলিফোন ও ই-মেইলে কালের কণ্ঠ’র পাঠকরা এসব অভিমত জানিয়েছেন
► বখাটেদের উৎপাত বন্ধ করার জন্য সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আরো কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যেমন—ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি মাসে একবার করে সেমিনার বা আলোচনাসভা করতে হবে। জেলা পরিষদের শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন স্কুল ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক সচেতনতামূলক এই সেমিনার বা আলোচনাসভার আয়োজন করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জনপ্রিয় শিক্ষক, সমাজকর্মী, সিভিল সোসাইটি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আলোচনা করবেন। শিক্ষার্থীদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।
এমনটা করতে পারলে শিক্ষার্থীদের মনোবল যেমন দৃঢ় হবে, তেমনি নিজে অন্যায় ও অন্যকে অন্যায় করা থেকে বিরত রাখবে। ব্যক্তির সংগঠিত হওয়ার বোধ তৈরি হবে।
টিটো রহমান
রাধানগর, যুগিপাড়া, পাবনা।
► সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকাল ঘটছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আর এর সর্বশেষ শিকার বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার কিশোরী রোজিফা। লেখাপড়া করে বড় হওয়ার স্বপ্নকে ভেঙে দিল বখাটে ইয়ামিন। আসলে জন্ম থেকে কেউ বখাটে হয়ে জন্ম নেয় না। দেখা যায় একের পর এক মামলা হচ্ছে, পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ পুলিশ নাকি তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, একজন অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই গণ্য করতে হবে, সে যত বড় রাজনীতিকই হোক না কেন।
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা
ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।
► বখাটেদের উৎপাত রোধ করতে হলে অতি দ্রুত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে, দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে, অপরাধীকে বয়স বিবেচনায় ছাড় দেওয়া যাবে না। এ জঘন্য অপরাধের জন্য কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে এবং জনসমক্ষে শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
হুমায়ুন কবির
হাজারীবাগ, ঢাকা।
► রাষ্ট্র ও প্রশাসন বখাটেদের নির্মূল করতে সহায়ক ভূমিকা নিতে পারে মাত্র। এ জন্য সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিষদ, গ্রাম ও মহল্লার সালিসি পরিষদ, শহর-ওয়ার্ড ও পৌর এলাকার পঞ্চায়েত ও ওয়ার্ড কমিশনারদের নেতৃত্বাধীন কমিটি বা পরিষদ বখাটেদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিলে তাদের উৎপাত অচিরেই বন্ধ ও নির্মূল হবে বলে আশা করি।
ভূঁইয়া কিসলু বেগমগঞ্জী
বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী।
► ইদানীং সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে অন্যকে অনুকরণপ্রিয়তা লক্ষণীয়। তবে এ অনুকরণ যদি ভালো কিছুর প্রতি হতো, তাহলে চিন্তা করার কিছুই ছিল না। ভারতীয় স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের কুরুচিপূর্ণ সিরিয়াল প্রচারই সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টির জন্য প্রধানত দায়ী। তাই এখনই ভারতীয় চ্যানেলগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা সময়ের দাবি।
এস এম ছাইফুল্লাহ খালেদ
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।
► বর্তমানে সমাজে পারিবারিক সম্পর্কগুলোও অনেকটা আলগা। এটি একটি বড় কারণ। আরেকটা কারণ হচ্ছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া। তাই বখাটেপনা রুখতে সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক জোরালো করতে হবে। মানুষকে নৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।
আজহার আবেদ
লাকসাম, কুমিল্লা।
► বখাটেরা আমাদের সমাজ জীবন স্বস্তিহীন করে তুলছে। বখাটেদের কারণে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জনতার ঐক্য শক্তি পারে না এমন কোনো অসাধ্য কাজ নেই। গোটা সমাজ জেগে উঠলে বখাটেরা থাকে অল্প লোক। তাদের চিহ্নিত করতে হবে সমাজ, রাষ্ট্র থেকে। তাদের শেকড় যত বড়ই হোক না কেন, তা উৎপাটন করতে হবে। তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। সমাজের দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বেকার সমস্যা, মাদকাশক্তি ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করাও জরুরি। কারণ এই সমস্যার কারণ আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে হবে।
মো. জামরুল ইসলাম
দক্ষিণগাঁও, সবুজবাগ, ঢাকা।
► বখাটের উৎপাত দূর করতে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ছাত্র সংগঠন ও প্রভাবশালী মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এর প্রতিরোধে তৈরি আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। পারিবারিকভাবে পিতা-মাতার জ্ঞান ও উপযুক্ত মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সামাজিক নানা কর্মসূচি গ্রহণ, সাংস্কৃতিক কাজে উদ্বুদ্ধ করা, পর্যাপ্ত খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি করতে পারলে বখাটেদের বখাটেপনা কমে আসবে।
কামরুজ্জামান
কলাবাগান, ঝিনাইদহ সদর।
► সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোতে মেয়েরা এমনিতেই পড়ালেখা করার ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটে ভোগে। তার ওপর যদি বখাটেরা উত্ত্যক্ত করে, তাহলে তো কথাই নেই। ওই মেয়েকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। ইভ টিজিংয়ের শাস্তি পায় নিরীহ মেয়েটি। এখানেই সমাজের কিছু করার রয়েছে। অপরাধী শাস্তি না পেয়ে পাচ্ছে নিরপরাধী। এটা মোটের ওপর অবক্ষয়। এই অবক্ষয় থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।
আবদুল মোতালেব ভূঁইয়া
ছয়ানী টবগা, চাটখিল, নোয়াখালী।
► দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। ধর্মীয় বিষয় মেনে চলতে হবে।
মোকাদ্দেস হোসাইন
গ্রামপাঙ্গাসী, রায়গঞ্জ।
► রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারকে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। সমাজ ও প্রশাসনের মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে এদের রাজনৈতিক শেল্টার মুক্ত করে ভালোবাসা ও আইনের মাধ্যমে সুপথে আনতে হবে।
এইচ বাঙ্গালী
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
► বখাটের নিপীড়নের স্বীকার হয়ে একটি মেয়েকে যখন আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়, তখন স্বাধীনতা শব্দটিই যেন অর্থহীন হয়ে পড়ে। যে স্বাধীনতা একটি কিশোরীর নিরাপদে চলাচলের নিশ্চয়তা দিতে পারে না, সেই স্বাধীনতার মূল্য কোথায়? এ ধরনের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রয়ন্ত্রকে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবারের ছেলে ও মেয়ে প্রতিটি শিশুকেই নিজেদের আত্মসম্মান বোধের ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। সাধারণত দেখা যায়, বখাটেদের নিপীড়নের ঘটনাগুলো অনেকে এড়িয়ে যায়। এতে বখাটেরা আরো দুঃসাহসী হয়ে ওঠে। তাই প্রথম থেকেই এই ধরনের ঘটনা সমাজ ও পরিবার থেকে রুখে দেওয়া হলে আমাদের আর এত মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে হবে না বা তার খেসারত দিতে হবে না। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে তা বখাটেদের জন্য চরম সতর্কবাণী।
এম এ সাক্কুর আলম
জিনজিরা, ঢাকা।
► নৈতিক চরিত্রের চরম অবক্ষয় বিরাজ করছে সমাজে তথা দেশব্যাপী। বিচারহীনতায় ভুগছে সাধারণ জনগণ। অনন্যোপায় হয়ে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে আত্মহননের পথ। চরিত্রহীন বখাটের দ্বারা নির্যাতিত মেয়েরা, নারীরা। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় মাত্র এক দিনের ব্যবধানে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মিলি খাতুন আত্মহত্যা করেছে। ছাত্রী আত্মহননের তিন দিন পরেও ইভ টিজার গ্রেপ্তার হয়নি। প্রশাসন থেকে গ্রেপ্তার করতে গেলে ইভ টিজারের সমর্থকরা হামলা করে। ওয়্যারলেস সেটটিও ছিনিয়ে নেয়। জনপ্রতিরোধ, সামাজিক প্রতিবাদসহ প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে বখাটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সক্ষম বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসন থাকবে রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত। কোনো বখাটেকে আটকের পর যেন স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বিত্তশালী ব্যক্তির দ্বারা প্রশাসন প্রভাবিত না হয়। সর্বোপরি নিরপেক্ষ প্রশাসনের প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নীতিমালা প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে নীতিবোধ, দায়িত্ববোধ, মানবিকতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা দিতে হবে। শুধু জিপিএ ৫ পাওয়ার দিকে নজর দিলে নৈতিক চরিত্র গঠিত হবে না।
নিমাই কৃষ্ণ সেন
মেইন রোড, বাগেরহাট।
► বখাটেদের সমাজ থেকে চিহ্নিত করে তাদের বিতাড়িত করতে হবে। তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যা দেখে অন্যরা সাবধান হয়। এ ছাড়া সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সেমিনারের মাধ্যমে এলাকায় আলোচনা করতে হবে। মোট কথা তাদের শাস্তি ও আইনের আওতায় আনতে হবে।
এম এ মতিন
বেগুনবাড়ী, বাসাবো।
► আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় অব্যস্থাপনা বখাটেপনার জন্য দায়ী। মাদকাসক্ত, আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেট, ফেসবুক, অসামাজিক নাটক, যাত্রা, সিনেমার মিছিলে বখাটেদের উত্থান এবং দৌরাত্ম্য বাড়ছে ব্যাপক হারে। তা ছাড়া আছে বখাটেদের ওপর আইনের প্রয়োগের অভাব। তাই সব পর্যায়ে সব ধরনের নেশামুক্ত সুশৃঙ্খল পরিবেশ, ধর্মীয় মূল্যবোধের নৈতিকতার চর্চা করতে হবে। এ জন্য সুধীসমাজ, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।
আবদুর রাজ্জাক নাছিম
চান্দাইকোনা, শেরপুর, বগুড়া।
► ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে’ এসব ঘটনার দ্রুত বিচার করার কথা থাকলেও তা বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক সময় বখাটেরা প্রভাবশালী কিংবা কোনো দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে পুলিশ মামলা নিতে বা ঘটনার বিচার করতে গড়িমসি করে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের কোনো ধরনের শৈথিল্য থাকা কাম্য নয়। তবে শুধু আইনের ভয় দেখিয়ে বখাটেপনা রোধ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সমাজের সবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। যেকোনো বখাটেপনার ঘটনায় প্রশাসনকে সবার আগে আন্তরিকভাবে তৎপর হতে হবে।
সাধন সরকার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
► প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর সব কিছুর তথ্য মুহূর্তের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে ভালোর সঙ্গে খারাপও আসে। ইন্টারনেট জগতের ভালো দিকে নজর না দিয়ে যারা খারাপ দিকে নজর রাখে তারাই বর্তমান সময়ের বখাটে। ইভ টিজার আর ধর্ষণকারীরা বড় বখাটে। তারা দেশ, সমাজ ও জাতির শত্রু। তাদের দমন করতেই হবে। শুধু প্রশাসনের ভূমিকায় বখাটেদের দমন সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সামাজিক ঐকমত্য। সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে পিতা-মাতাকে।
মো. আজিনুর রহমান লিমন
ডিমলা, নীলফামারী।
► অনেক সময় মানসম্মানের ভয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। বখাটেদের উৎপাত বন্ধ করতে সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। মানুষ একটু সচেতন হলে তাদের নিবৃত্ত করা কঠিন কাজ নয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও তৎপর হতে হবে। বখাটেরা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
মাহফুজুর রহমান খান
চিনিতোলা, মেলান্দহ, জামালপুর।
► বখাটেদের উৎপাত বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হবে। একটি মেয়ে যখন ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়, তখন পরিবার সহায়ক ভূমিকা পালন না করলে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি ইভ টিজিংয়ের শিকার তরুণীকেও যতটুকু সম্ভব বখাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
মোহাম্মদ অংকন
ঢাকা।
► ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনের ৭৬ ধারা অনুযায়ী বখাটেপনার শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ নম্বর ধারায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানির শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড। কিন্তু এসব আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এভাবে তো চলতে পারে না। এসব বখাটে যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
হাবিবুর রনি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
► জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, সাংবাদিক, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি করতে হবে। প্রয়োজন বোধে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে বখাটেদের বিষয়ে গোপন প্রতিবেদন নিতে হবে।
মো. আতিকুল্লাহ
গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
► অ্যানড্রয়েড ফোন, নেশার বিস্তার কমিয়ে এবং পারিবারিক সচেতনতাই পারে সন্তানদের সঠিক পথে রাখতে।
সাঈদ চৌধুরী
শ্রীপুর, গাজীপুর।
► বখাটেদের সুপথে ফেরানোর জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিজ্ঞ, দেশ ও মানবপ্রেমিক চিন্তক-গবেষকদের পরামর্শ নিয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। বখাটেদের রাজনৈতিক প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা এবং সমাজ ও প্রশাসনযন্ত্রকে শক্তিশালী করার উপায় বের করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এইচ কে নাথ
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
► বখাটেদের উৎপাত বন্ধ করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ে কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া যাবে না। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও বিভিন্ন মিডিয়ায় বখাটেদের শাস্তি সম্পর্কিত প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে।
জাহাঙ্গীর কবীর পলাশ
শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালী, মুন্সীগঞ্জ।
► অভিভাবককে সতর্ক থাকতে হবে। সন্তান যা চায় তা-ই পাইয়ে দেওয়ার প্রবণতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। তাহলে কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রকেও তৎপর হতে হবে। বখাটেদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের তাত্ক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মো. দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া
লাকসাম, কুমিল্লা।
► বখাটেদের উৎপাতে কিশোরী-তরুণীদের আত্মহননের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে। মফস্বলে বা শহরের পাড়া-মহল্লায় এই উৎপাত দিনকে দিন বাড়ছে। এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনেরই উচিত এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে নিজ থেকেই উদ্যোগী হয়ে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা। জোরালোভাবে এগিয়ে আসতে হবে সরকারের প্রশাসনকেও।
এম আনিসুর রহমান
শেখেরখীল, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।
► এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে বখাটেসহ বিভিন্ন সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের তাত্ক্ষণিকভাবে সাজা দেওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পারিবারিক, সামাজিক ও আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে বখাটেদের রোধ করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ফরহাদ বোগদাদী
লাকসাম, কুমিল্লা।
► বখাটেদের উৎপাত অনেক বেড়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া। যদি অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হতো, তাহলে কেউ নতুন করে অপরাধ করার সুযোগ বা সাহস পেত না। একটি ধর্ষণের বিচার পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়, তত দিনে অপরাধী হয়ে ওঠে আরো বেপরোয়া।
মো. আবু তাহের মিয়া
কুতুবপুর, পীরগঞ্জ, রংপুর।
► ছোট ছোট অবহেলা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তার নজির বর্তমান সময়। এ সময় এবং বখাটেদের মোকাবেলা করা জন্য অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসন ও সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা খুবই জরুরি।
ওয়াহিদ মুরাদ
নিউ ইস্কাটন, ঢাকা।
► হঠাৎ করে বখাটেপনা বেড়ে গেছে। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার রাফিজা ও মিলি মেধাবী ছাত্রী ছিল। বখাটেদের উৎপাতে তাদের আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়েছে। সেখানে বখাটেদের উৎপাতে মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে ভয় পাচ্ছে। রাফিজা-মিলিকে উত্ত্যক্তকারী বখাটে ইয়ামিন, ভুলু মণ্ডল ও সদরুলকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছত্রচ্ছায়ায় তারা এসব করছিল। ওই তিন বখাটে ও কাউন্সিলরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তদন্তের নামে কেন মামলাটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, সরকারের উচিত পুলিশের কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া।
মিজানুর রহমান
বানাসুয়া, কুমিল্লা।
► বখাটেদের উৎপাত সারা দেশেই বেড়ে গেছে। পুলিশের নাকের ডগায় এসব চলছে। রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়ও পায় তারা। ফলে প্রতিবাদ করার সাহস অনেকে পায় না। পুলিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। সমাজকে তৎপর হতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে।
নাদিম খান
ভাইজোড়া, পিরোজপুর।
► আমাদের ছেলে-মেয়েরা বখাটের উৎপাতে অতিষ্ঠ। শুধু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী নয়, উঠতি বয়সের যেকোনো কিশোরী বখাটের উৎপাতের শিকার হচ্ছে। তাদের উৎপাত অজপাড়াগাঁ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। তাদের কারণে পথেঘাটে চলতে বিব্রতবোধ করে তরুণীরা। বখাটেরা উত্ত্যক্ত করার পাশাপাশি অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। বখাটেদের দমন করার ব্যাপারে সরকারকে আরো সক্রিয় হতে হবে। সমাজ ও পরিবারকেও ভূমিকা পালন করতে হবে।
ফারুক আহমেদ
বাগমারা, রাজশাহী।
► সমাজ ও পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি স্কুল-কলেজে ইভ টিজিং বিরোধী সেল গঠন করতে হবে। এ সেল উত্ত্যক্তের শিকার কিশোরী-তরুণীদের অভিযোগ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হবে। জনপ্রতিনিধিদের সহায়তাও নেবে তারা। বিড়ম্বনার শিকার মেয়েদের কাউন্সেলিং সহায়তাও দিতে পারে তারা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন দরকার। প্রায়ই আমরা ভিকটিমকেই দায়ী করে বসি। এ মনোভাব বদলাতে হবে। পরিবার থেকেই ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
ইমরান হোসেন তপু
জিনজিরা, ঢাকা।