Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন – খােলা বাজার২৪। শনিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০১৭: এই প্রস্তাবটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে থার্ড কমিটিতে পেশ করা হয়েছে। এ ধরণের প্রস্তাব বা কার্যক্রম জাতিসংঘের রুটিনমাফিক কাজ। যখন রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের ব্যাপারে জাতিসংঘে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল, এরকম আরও বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে। এটা এক ধরণের নৈতিক চাপ প্রয়োগের জন্য করা হয়ে থাকে। বিশ্ববাসীকে এ ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে জানানোর জন্য, সচেতন করে তোলার জন্য এ ধরণের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এটি একটি দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, ১৩৫ টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে, যেটি খুবই আশাব্যঞ্জক। কারণ, এই মিয়ানমার নিয়ে গত পনেরো বছর ধরে এই ধরণের রেজুলেশন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আগেও করেছে এবং সেটা মিয়ানমারের বিপক্ষে অনেক দেশই কথা বলেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গত বছর এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনেনি। এর আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন স্ব-উদ্যোগে মিয়ানমারের ভেতরে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে সেটা আলোচনা করেছে এবং এটার বিপক্ষে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এবার বিষয়টা ওয়াইসির পক্ষে সৌদি আরব উত্থাপন করেছে এবং এটা আসলে বর্তমানে রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে বিশ্বের কাছে জাতিসংঘের যে ভূমিকা বা বিশ্ববাসীর মনোযোগ সেটাকে আরও বাড়াবে। সেদিক থেকে এই প্রস্তাবটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ১০ টি দেশ যারা এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করেছে তার মধ্যে চীন এবং রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আরও যে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র রয়েছে যারা এর বিপক্ষে রয়েছে। সে রাষ্ট্রগুলোও এই দুই পরাশক্তিরই ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্র। যেমন: ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সিরিয়া।

এই বিরোধীতার মাধ্যমে আসলে তেমন কোনো কূটনৈতিক অসুবিধা নেই। যেটা হচ্ছে, যে দেশগুলো বিরোধীতা করেছে সেই দেশগুলো তাদের নৈতিক মান বা তারা মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না। সেক্ষেত্রে আমরা এই দেশগুলোকে এ ব্যাপারে বলতে পারি। এখানে আরেকটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে, এ ধরণের ইস্যু, যে ইস্যুটা বাংলাদেশের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, অনেক দেশ বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছে। এটা যেহেতু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিষয় তাও আবার এটি কমিটি লেভেলে আলোচনার বিষয় ছিল, ফলে এই প্রস্তাবে ১৫০ টি রাষ্ট্রও যদি ভোট দিত, তাতে বড় কোনো পরিবর্তন হতো না। যেটি ১৩৫ টি দেশ ভোট দেওয়ার কারণে হচ্ছে না। এখানে এ রকম কোনো কারণ নেই যে, কম দেশ ভোট দিয়েছে বলে কোনো পরিবর্তন আসছে না। বিষয়টা হচ্ছে আসলে আমরা এই প্রস্তাবের মাধ্যমে যে বার্তাটি পাই সেটি হলো একটা বিশ্ব জনমত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিপক্ষে আছে।

এখানে জাতিসংঘ একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। অতীতে কখনই মিয়ানমারের বিপক্ষে এতোটা ভোট পরেনি। কারণটা হচ্ছে, এখানে মূলত বিষয়টা বেশি আলোচনা হয়েছে মানবাধিকার পরিস্থিতির কারণে। মানবাধিকার বিষয়ে মিয়ানমারের ভেতরে গত পনেরো বছরের মধ্যে চৌদ্দ বছরই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ ধরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। মিয়ানমার তাদের এ ধরণের কর্মকা- বন্ধ রাখেনি, তারা এই কাজগুলো ঠিকই চালিয়েছে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্বের অনেকগুলো রাষ্ট্র মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এখানে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে, তাদের সামরিক সহিংসতা বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। এই ইস্যুগুলোকে কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। যে সকল রাষ্ট্র এ ব্যাপারে বিপক্ষে বলেছে বা কোনো ধরণের মন্তব্য দেয়নি সেখানে ভারত অন্যতম। ভারত এখানে তাদের কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে যে, এই প্রস্তাবটি বাংলাদেশ দেয়নি বা এটা বাংলাদেশের কোনো ইস্যু নয়।

এটা মিয়ানমারের ভেতরে রোহিঙ্গা ইস্যু। ভারতের নিরবতা এখানে আমি তবুও একটা অগ্রগতিই বলবো। কারণ, মিয়ানমারের বিপক্ষে যাওয়াটা ভারতের জন্য একটা ঝুঁকি ছিল, যেখানে চীন মিয়ানমারের পক্ষে আছে। সার্বিকভাবেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের যে পদক্ষেপ ছিল, সেখানে আরেকটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে এ ধরণের প্রস্তাব বিশ্বব্যাপী নিয়মিতই হয়ে থাকে এবং এ ধরণের প্রস্তাবে তেমন কোনো প্রাইওরিটি অথবা আইনগত, বা কোনো ধরণের বাধ্যবাধকতা বা কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না। এটা জাতিসংঘের বিশ্বব্যাপী জনমতের বিষয়, কূটনৈতিক বিষয়। এটা একটা অগ্রগতি, যেখানে বাংলাদেশের একটা ভাল অবস্থান তৈরি হয়েছে, যেখানে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে একটা চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে রয়েছে, এটা বিশ্ববাসী স্বীকার করেছে, এটা তারই একটা বহিঃপ্রকাশ। এই বিষয়টিকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবেই আমি দেখি।

 

পরিচিতি : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাবি.
আমাদের সময়.কম