আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ যুবায়ের – খােলা বাজার২৪। সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭: ১১ ডিসেম্বর বি পি এলে রংপুর ও কুমিল্লার খেলা হয়েছে। রংপুর জিতেছে। ভালো খেলেছেন রংপুরের একজন অতিথি খেলোয়াড়। বৃষ্টির জন্যে কিছু সমস্যা থাকলেও, ভালো খেলেই মূলত রংপুর জিতেছে, এটাই সত্য।
খেলা পরবর্তী খেলার কিছু সমস্যাকে কেন্দ্র করে যেভাবে আঞ্চলিকতা শুরু হয়েছিল বিশেষ করে তরুণ সমাজের মাঝে তা অনাকাঙ্ক্ষিত।
রংপুর কি আর কুমিল্লা কি? দুটাই স্বাধীন বাংলাদেশের অংশ। সামান্য সমস্যাকে কেন্দ্র করে একে-অপরকে গালিগালাজ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এসব ছোট মানসিকতা। বরং উচিত ছিল, সব ক্রিকেটভক্ত এক হয়ে যিনি ভালো খেলা উপহার দিয়েছেন, যিনি দলকে বিজয়ী করেছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানানো। কিন্তু হায়, আজ সাধুবাদ নিয়েছে বিদায়। সময় কেটে যায় অন্যের সমালোচনায়!
প্রিয়, আঞ্চলিকতা নিয়ে তিরষ্কার বা তাচ্ছিল্য কাম্য নয়। রসিকতা ভিন্ন জিনিস, যদি সেটা হয় ভালোভাবে।
ডিজিটাল মেলা-২০১৭-এর কোনো এক বিশেষ আয়োজনে উপস্থাপক রসিকতা করছিলেন, বিভিন্নভাবে দর্শকদের পুরস্কৃত করার চেষ্টা করেছিলেন, উপস্থিত অনেকে এটা নিয়েও সমালোচনা করেছেন যে, এসব উপস্থাপক ও আয়োজকদের সাজানো নাটক। কোনটা সাজানো আর কোনটা গুছানো তা সহজেই বুঝা যায়, তারপরেও কাজ শেষে জিন্দাবাদ নয়, নিন্দাবাদ পেতে হয়।
এত নিন্দা জানালে তো একদিন সব প্রতিভা ধন্যবাদ জানিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাবে, বিদেশি প্রতিভার আগমনও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে কি আমাদের ক্ষতি হবে না লাভ?
উপরের দুটো ঘটনা দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি, আমরা কেন যেন সমালোচনাপ্রবণ জাতিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছি। সবকিছুতেই আমি ভালো, তুমি খারাপ। তুমি অধম, আমি উত্তম। এরকম মানসিকতা কাম্য নয়।
শত্রু-মিত্র নয়, যে ভালো করবে সে যেই হোক, তাঁকে ধন্যবাদ বা সাবাস জানাতে কেন কষ্ট হয়?
আমার বন্ধু সায়েম বেগ। বাবার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের হাল ধরেছে। প্রথম প্রথম তো সে কিছুই বুঝে না। শত টাকার হিসাব মেলাতে কোটিবার ভুল করত। আর এখন? সে অনেক কৌশল শিখেছে। অনেক টেকনিকে সে হাসপাতাল পরিচালনা করে। কিছুদিন আগে আমার সামনে বসে লাখ টাকার হিসেব করল নির্ভুলভাবে এবং অল্প সময়ে। আমি দেখছিলাম, আর ধন্যবাদ জানাচ্ছিলাম। বলেছি- অনেক অনেক উন্নতি হয়েছে। সেও অনেক কৃতজ্ঞ, আমাকে ইঙ্গিত করে বলল—কার সঙ্গে চলি, দেখতে হবে না। আজ তাঁর উন্নতির পেছনে রয়েছেন একজন ক্রেন, যিনি তাঁকে উপরে উঠানোর জন্য টেনে চলেছেন। শুরুতেই যদি তাঁকে হেয় করা হতো, আজ সে পরিণত সায়েম হতে পারত না।
মানুষকে পরিণত বানাতে হলে তাঁর গুণের প্রশংসা করতে হবে। তাঁর সমালোচনা নয়, তাঁকে সংশোধন করতে হবে, শেখাতে হবে, তাহলেই না সমাজটা জ্ঞানী-গুণীতে ভরপুর হয়ে যাবে।
ডিজিটাল মেলায় আমি ভিজিটর কার্ডের ফিতা ঠিকমতো লাগাতে পারিনি। একজন অনুজ বলল—আপনার আইডি কার্ডের ফিতা ঠিকমতো লাগানো হয়নি। আমি একদমই লজ্জা পাইনি অনুজের এই কথায়। বললাম- ঠিকমতো লাগিয়ে দিবে? সে লাগিয়ে দিল। আসলে অনুজই ঠিক ছিল, আমি ছিলাম ভুল। তাই যতভাবে পারলাম, অনুজকে ধন্যবাদ জানালাম, উত্সাহিত করলাম। আমি মনে করি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আমাদের এরকম করা উচিত। তাহলে জীবনে শেখা যাবে অনেক কিছু। গড়া যাবে অনেক প্রতিভাবান অনুজ।
মানুষ ভুল করবেই। মানুষই আবার মানুষের জন্য কাজে আসবে। কেউ আপাদমস্তক সাধু নয়, কেউ আপাদমস্তক অসাধুও নয়। দোষে-গুণে মানুষ। ভুল করলে সমালোচনা নয়, যদি সংশোধনের সাধ্য থাকে, তাহলে সংশোধন করতে হবে। অথবা সেই ভুল সংশোধন করার সাধ্য নিজের ভেতরে কিভাবে আনা যায় সেই চেষ্টায় ব্যস্ত হতে হবে। যে বিষয়টা নিয়ে আমরা সমালোচনা করি, সে বিষয়টা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে সেরকম বুদ্ধি আমার মাথায় আনতে হবে। কৌশল আবিষ্কার করতে হবে। সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেলে, বুদ্ধির জন্ম দেব কখন, আর কৌশলের আবিষ্কারও করব কখন, সমালোচক অবস্থায়ই হবে আমার মরণ!
আসছে নতুন বছর, নতুন বছরে আমরা নতুন জীবন গড়ি। নিজের দোষ দেখি, দেখি অন্যের গুণ। তাহলেই জ্বলবে না সংসারে, সমাজে, রাষ্ট্রে ও এ বিশ্বে অশান্তির আগুন।
সবাইকে নতুন বছরের অগ্রিম শুভেচ্ছা।
লেখক : এমফিল গবেষক, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি
ইমেইলঃ jobayarwriter¦gmail.com । ইত্তেফাক