খােলা বাজার২৪। বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭: ২০১৮ সালে দেশে বিভিন্ন ব্যান্ডের মোবাইল ফোনের হ্যান্ডসেট আমদানি করা হবে ১২ হাজার কোটি টাকার। হ্যান্ডসেটের সংখ্যা হবে ৩ কোটির বেশি। প্রায় ৫৫টি হ্যান্ডসেট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এক বছরের মধ্যে প্রায় ১৫শ’ মডেলের মোবাইল ফোন বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। এরইমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের টার্গেট অনুযায়ী হ্যান্ডসেটের অর্ডার দিয়েছেন। আগামী বছর পর্যায়ক্রমে ওইসব হ্যান্ডসেট দেশে এসে পৌঁছবে। এর ৮০ ভাগ থাকবে স্মার্টফোন।
২০১৮ সাল থেকে দেশে ফোরজি সেবা চালু হওয়ার ঘোষণায় মূলত স্মার্টফোনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, ২০১৬ সালে দেশে ৮ হাজার কোটি টাকার হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়। চলতি বছর তা বেড়ে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা হয়। এবার স্মার্টফোনের আমদানি বেশি হবে বলে টাকার পরিমাণও বেড়েছে। কারণ স্মার্টফোনের ন্যূনতম দাম ১০ হাজার টাকা। এদিকে হ্যান্ডসেটের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমদানিকারকরা মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা জানান, অপারেটরদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে পারলে দেশে অবৈধপথে আসা নিম্নমানের হ্যান্ডসেট বিক্রির দৌরাত্ম্য কমবে। এতে লাভবান হবেন গ্রাহক। প্রতারিত হওয়া থেকে তারা রেহায় পাবেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) প্রেসিডেন্ট রুহুল আলম আল মাহবুব (মানিক) বলেন, ১২ হাজার কোটি টাকার হ্যান্ডসেট আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে তারা ‘অপারেটর প্ল্যান’ চালু করতে পারে। এটা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রয়েছে। এ পদ্ধতিতে গ্রাহকরা অপারেটরদের কাছ থেকে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে ভালো হ্যান্ডসেট পাবে। পরে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারে। এতে গ্রাহক, অপারেটর ও হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীরা সমানভাবে লাভবান হতে পারেন।
তিনি জানান, আগামী বছর স্মার্টফোন আমদানি বেশি হবে। তখন অপারেটররা এটা করতে পারে। আপাতত স্বল্প পরিসরে হলেও ওই পদ্ধতিতে ব্যবসা করা যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই অপারেটরদের সংগঠন এমটবের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশে স্যামসাং-এর আমদানিকারক রুহুল আলম আল মাহবুব (মানিক) বলেন, বৈধপথে আসা হ্যান্ডসেটের বাজার বেশি বাড়ছে না। অথচ অবৈধপথে আসা হ্যান্ডসেট খুব দ্রত বাজারে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিটিআরসি ও কাস্টমসের সংশ্লিষ্টরা নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও অবৈধ হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। এ জন্য আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ জানাই। ২০১৮ সালকে টার্গেট করে স্মার্টফোনের আমদানিকারকরা এরইমধ্যে নানা ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। কিভাবে দ্রুত গ্রাহকদের হাতে ওই হ্যান্ডসেট পৌঁছানো যায় তা নিয়ে চলছে রীতিমতো গবেষণা। বিষয়টি নিয়ে আমদানিকারকদের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন আসা টেকনো মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রিতে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। মূলত সব ধরনের গ্রাহক উপযোগী হ্যান্ডসেট আমদানি করায় এ ধরনের অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে জানান ট্রান্সসিয়ন বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও রেজওয়ানুল হক।
তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের রুচি ও প্রয়োজন বাড়ছে। সে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে হ্যান্ডসেট বাজারজাত করছি। আশা করি আগামী বছর টেকনো মোবাইল হ্যান্ডসেট গ্রাহকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। তাছাড়া আগামী বছর আমরা যেসব হ্যান্ডসেট বাংলাদেশে নিয়ে আসছি তাতে নানা ধরনের চমকও থাকবে। এদিকে নকল হ্যান্ডসেট প্রসঙ্গে বিটিআরসি জানিয়েছে, অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির কারণে একদিকে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বৈধ আমদানিকারকরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ভোক্তা সাধারণ নকল ও নিম্নমানের হ্যান্ডসেট কেনার মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন। এসব সেটের মাধ্যমে ক্রমশই বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
এ ছাড়া অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির কারণে ভুয়া-নকল আইএমইআই সম্পন্ন সেট ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করছে। এ কারণে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। অন্যদিকে রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে অবৈধভাবে আমদানি করা হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। একইভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মোবাইল ভেন্ডার প্রতিষ্ঠান এবং তাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকে আবেদনও জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি বিদেশ থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে হ্যান্ডসেট আনার ক্ষেত্রে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করেছে বিটিআরসি। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বিদেশ থেকে ফেরার সময় ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একজন ব্যক্তি এখন থেকে সর্বোচ্চ আটটি মোবাইল ফোন দেশে আনতে পারবেন। এর মধ্যে দুটি ফোন আনা যাবে বিনা শুল্কে। আর বাকি ছয়টি ফোনের জন্য নির্ধারিত হারে শুল্ক দিতে হবে। বর্তমানে একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটি মোবাইল ফোন আনতে পারেন।
বিএমপিআই-এর হিসেবে ২০১৬ সালে দেশে বৈধপথে তিন কোটির বেশি মোবাইল ফোন সেট আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে স্মার্টফোনের সংখ্যা ছিল ৮২ লাখ, বাকিটা বেসিক বা ফিচার ফোন। আমদানি হওয়া এসব ফোনের বাজারমূল্য ছিল আট হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে স্মার্টফোনের বাজারমূল্য ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মানবজমিন