খােলা বাজার২৪। রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭: বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আমরণ অনশনে থাকা শিক্ষকরা এই শীতের রাতেও অবস্থান করছেন শহীদ মিনারে। তাদের দাবি একটাই বেতন বৈষম্য দূর করে ন্যায্য অধিকার দিতে হবে। যত বাধাই আসুক না কেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শহীদ মিনার ত্যাগ করবেন না শিক্ষকরা।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে শহীদ মিনারের সামনে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের ডাকে কয়েক হাজার শিক্ষক অনশনে অংশ গ্রহণ করেন। সারাদিন চলতে থাকে তাদের অনশন। শীত উপেক্ষা করে রাতেও তারা অবস্থান করছেন শহীদ মিনারে।
অনশনকারী শিক্ষকরা বলছেন, ১৯৭৩ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেডে এক ধাপ পার্থক্য ছিল। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে এসে দুই ধাপ পার্থক্য সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালে তিন ধাপ পার্থক্য সৃষ্টি হয়। প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডেই রয়ে গেছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষকদের একদফা দাবি, বেতন বৈষম্য নিরসন করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের ডাকে এই কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা।
টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বৈষম্যের শিকার। সংবাদ সম্মেলনে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা পূরণ করা হয়নি। বেতন বৈষম্য নিরসন না করলে আমরা শহীদ মিনার ছেড়ে পাঠ্যবই উৎসবেও অংশ নেবো না।’
অনশনে থাকা শিক্ষকরাশহীদ মিনারে রাতেও অনশনে রয়েছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শওকত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শনিবার সকালে শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছি প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক। এখনও রাতে প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার শিক্ষক রয়েছি। ঢাকার আশেপাশে যাদের বাড়ি তারা চলে গেছেন। রবিবার আবারও ফিরে আসবেন। কিন্তু আমরা যাইনি। দাবি আদায় করে তবেই বাড়ি ফিরবো।’
শীতের রাতের কষ্টের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বাড়ি থেকে এক কাপড়ে দাবি আদায়ে চলে এসেছেন। আবার কেউ কেউ কম্বল এনেছেন। কষ্ট করেই আছি। এখানে খাওয়ার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে নেয়, তাহলে এই কষ্ট মাথা পেতে নিতে রাজি আছি।’
তিনি বলেন, ‘কেউ পলিথিন টানিয়ে, কেউ পেপার বিছিয়ে, কেউবা মোমবাতি জ্বালিয়ে শুয়ে বসে আছেন। কেউ শীতে জবুথবু হয়ে পাতলা কম্বল কিংবা চাদর জড়িয়ে বসে আছেন। কেউ আবার এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করছেন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক চৈতি আহমেদ বলেন, ‘বাড়িতে দুটি ছোট সন্তান রেখে এসেছি। তারা আমার জন্য কান্নাকাটি করছে। বাড়ি থেকে বারবার ফোন করে বলছে, তাদের (সন্তানদের) থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কিন্তু এই আন্দোলনতো তাদের ভবিষ্যতের জন্য। ন্যায্য দাবির জন্য। দাবি আদায় না করে বাড়ি ফিরে যাবো না।’
ফেনির একটি স্কুল শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন প্রাথমিক শিক্ষকদের জাতীয়করণ করেছিলেন তখন প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের বেতনের পার্থক্য মাত্র ১০ টাকা ও বেতন স্কেল এক ধাপ নিচে ছিল। এরপর প্রধান শিক্ষকরা কয়েকধাপ ওপরের গ্রেডে যায়। অথচ আমাদের একটা গ্রেডও উন্নতি করা হয়নি।’ ফরিদ উদ্দিন জানান, আগের মতো প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপেই যেন তাদের বেতন স্কেল নির্ধারণ হয়।
রাতেও শিক্ষকদের বক্তব্য ও স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে শহীদ মিনার এলাকা। মাঝে মাঝে সংগীতও পরিবেশন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স শিক্ষকের এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন। বাংলাট্রিবিউন