খােলা বাজার২৪। রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭: সহকর্মী সাংবাদিক উৎপল ও সিজার এবং রাজনীতিক আমিনুর ফিরে এসেছেন। বদ্ধ-ঘরের বাইরে তাদের নি:শ্বাস নেয়ার সুযোগে যার-পর-নাই ভালো লাগছে। অঘোষিত বন্দী থাকার কষ্টের বিবরণ দেয়া কঠিন। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এমন অনিশ্চয়তার অভিজ্ঞতা আমারও আছে।
যাইহোক, যারা ফিরে এসেছেন, স্বাভাবিক হতে তাদের সময় লাগবে। শতভাগ স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও তাদেরকে যারা ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এভাবে সবাইকে ফিরিয়ে দিন। কেননা গুম হয়ে যাওয়া প্রিয়জনের ফেরার অপেক্ষায় সবাই। ওরা তিনজন ফিরে আসায় আশা জেগেছে সবাই ফিরবে।
ধরুন, ইলিয়াস আলীর শিশু মেয়ের কথা। এখন নিশ্চয়ই সে ভাবছে, সাড়ে পাঁচ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবা যে কোনো রাতে ফিরে আসবেন। হয়তো গত ক‘দিন সাইয়ারা নাওয়াল রাতে ঘুমায়নি। বাবার অপেক্ষায় দু‘চোখে বালিশ ভিজিয়েছে সে। দুই সপ্তাহ পর সে অস্টম শ্রেনীতে উঠবে। বাবা যখন হারিয়ে যায় তখন সে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়তো। মেয়েরা বড় হয়, আর বাবার প্রতি ভালবাসা বাড়ে, খবরদারি বাড়ে। সাইয়ারা নাওয়াল হয়তো স্বপ্নে বাবার সাথে দুষ্টুমি করে!! খবরদারি করে। আর দিনে স্কুলের পথে একা একা মুখ শুকিয়ে অশ্রুসিক্ত করে!!
সত্যিকার অর্থে, এভাবেই সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন কবির পারভেজ, সৈয়দ সাদাত আহমেদ, মারুফ জামান, স¤্রাট মোল্লা, মো. পারভেজ হোসাইন, ইফতেখার আহমেদ দিনার, মাহাবুব হাসান সুজন, সেলিম রেজা পিন্টু, মো. জহির, খালেদ হোসাইন সোহেল, কাজী ফরহাদ, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, আসাদুজ্জামান রানা, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আল আমিন, মো. চঞ্চল, মাসুদ রানা, নিজাম উদ্দিন আহমেদ মুন্না, আদনান চৌধুরী, কাওসার, তানভির, আনসার আলী, তরিকুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, আবদুল কাদের ভুইয়া মাসুম, ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম, ব্রিগেডিয়ার আজমির সন্তান, স্ত্রী, মা-বাবা, ভাই-বোনের অশ্রু ঝরছে প্রতিক্ষণ। যখনই কেউ ফিরে আসছেন, অন্যদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তখন আশা জাগ্রত হচ্ছে। হয়তো এক্ষুনি প্রিয়জন ফিরবেন!! আর অশ্রুজলে বুক ভাসাচ্ছেন তারা।
এভাবে আমার ফুফাতো ভাইকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, প্রায় এক বছর পর তাকে ফেরত দেয়া হয় কিছু গাঁজাসহ!! প্রাডো ব্রান্ডের গাড়িটি ফেরত দেয়া হয়নি। পুলিশ তাকে গাঁজা সহ গ্রেফতার দেখায়!!!! এরপরও আমরা খুশি এজন্য যে, জব্বার ভাইকে ফেরত পেয়েছি। ফিরে তিনিও কিছু বলেননি। জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর, ‘আমি ফিরেছি। এটাই বড় বিষয়।’
আসলেই ফিরে আসলেই আমরা খুশি। আর যারা ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। গত এক সপ্তাহে তিনজন ফিরে এসেছেন। কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ফেরত-দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সময় পাচ্ছিলাম না। কিন্তু, কাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো, অ্যাড্রেস করতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো, সম্প্রতি চ্যানেল ফোরের ভুমিকার কথা। ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের এই মিডিয়া একটু আগ-বাড়িয়েই (আমাদের কিছু প্রগতিশীল বন্ধুর মতে) বাংলাদেশের গুম-খুনের বিষয়ে রিপোর্ট প্রচার করে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃটিশ ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকীর কাছে তারা বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় প্রশ্ন করে এবং সেই সংবাদ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাদের প্রশ্নের একটি অংশে বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশে আপনার খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাহিনী অনেককে গুম করেছে। আপনার একটি ফোন অনেক মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে।’ গত ক‘দিনে তিনজনের ফিরে আসার পর আমার মনে হচ্ছে, টিউলিপ হয়তো ফোন করেছেন। ভাগ্নীর ফোন পেয়ে খালারও হয়তো মন গলেছে। আর খালা তার গুম-বাহিনীকে (র্যাব, ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন – ‘ওদের ফেরত দাও’। আর আমরা ফেরত পাওয়া পেয়েছি আমাদের প্রিয় মোবাশ্বের হাসান, উৎপল ও আমিনুরদের।
এখন প্রশ্ন হলো, আপনজনদের ফেরত পেয়ে আমরা কাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো। চ্যানেল ফোর, টিউলিপ সিদ্দিকী, শেখ হাসিনা না-কি র্যাব-ডিবিকে?? আমি আসলে সবাকেই কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। এখানে প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র ভুমিকা আছে। চ্যানেল ফোর সিরিয়াসলি নিউজ প্রচার না করলে টিউলিপ খালাকে ফোন করতেন না। টিউলিপ ফোন না করলে শেখ হাসিনা র্যাবকে পজেটিভ নির্দেশ দিতেন না। শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া র্যাব তাদের ফেরত দিতো না। আবার র্যাব চাইলে নারায়নগঞ্জ টাইপের খুন করে বস্তাবন্দী লাশ নদীতের ফেলে দিতে পারতো। তাদেরও একটি সদিচ্ছা এখানে কাজ করেছে। অতএব সবার সদিচ্ছার সম্মিলিত ফল হিসেবে আমরা স্বজনদের ফিরে পেয়েছি। চ্যানেল ফোর, টিউলিপ, শেখ হাসিনা, র্যাব-ডিবি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা!! আল্লাহ তাদের আরো সুমতি দিক।
তবে টিউলিপ সিদ্দিকীর প্রতি আমার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতাও আছে। তিনি আমাদের রয়টার্স ফাউন্ডেশনে কর্মরত সহকর্মী নজানিন যাগারির মুক্তির জন্য ব্যাপক ভুমিকা রেখেছেন। ইরানে বন্দী কিলবার্নের অধিবাসী এই সাংবাদিক আগামী সপ্তাহেই মুক্ত হবেন। এই ইস্যুটাকে সফলতা পাওয়া পর্যন্ত জোরালো ভুমিকা রাখায় এমপি টিউলিপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
টিউলিপের রক্ত, পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে যেহেতু তার ক্ষমতা আছে, সেহেতু আমরা তাকে পৃথকভাবে দেখতে চাই। আমরা চাই, টিউলিপ নিয়মিত তার খালা শেখ হাসিনাকে ফোন করুক। ইলিয়াস আলীর নাম ধরে খালাকে বলুন। শুধু প্রফেশনালস্ না, রাজনীতিকদেরও ফেরত দিতে বলুন। গুম হওয়া রাজনীতিকদের তালিকা এবং পরিচয় সহ আমরা আপনাকে পাঠাচ্ছি। আপনার ই-মেইল চেক করুন। এই বিজয়ের মাসেই সবাইকে ফেরত দিতে বলুন। নতুন বছরে আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। অশ্রুজলে বুক ভাসানো শিশুদের ঘুমাতে দিন। বাবার সাথে খেলতে দিন। আপনি বৃটিশ নাগরিক। আপনার একটি ফুটফুটে শিশু কন্যা আছে। আপনার ধনকুবের ইংলিশ স্বামী আছে। ভাবুন, ওরা হারিয়ে গেলে কত কষ্ট হতে পারে!!! সবসময় শিশুরা অপেক্ষা করছে, বাবা কখন ফিরবে। বাবা কোথায় আছে, কেমন আছে; তারা জানে না। কিন্তু বাবার ফেরার অপেক্ষায় আছে ওরা। প্রতি মুহূর্তে ভাবছে এই বুঝি বাবা এলো!! পায়ের শব্দ শুনতে কান পেতে থাকে ওরা। বাবার কন্ঠ শুনতে কান পেতে থাকে ওই শিশুরা। ওদের চোখের পানি মুছে দেয়ার সুযোগ আপনার যেহেতু আছে, একটু চেষ্টা করুন। আপনাকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাবো।
২০১৮ সাল হোক, গুম-মুক্ত বাংলাদেশ। এই প্রত্যাশা রাখছি।
লেখক : এম মাহাবুবুর রহমান
@কো-অর্ডিনেটর, ডাইভার্সিটি এন্ড সাসটেইনিবিলিটি ডেস্ক, রয়টার্স, লন্ডন অফিস;
@পলিটিক্যাল রিপোর্টার, দৈনিক আমার দেশ,
@সাবেক সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। সহকর্মী সাংবাদিক উৎপল ও সিজার এবং রাজনীতিক আমিনুর ফিরে এসেছেন। বদ্ধ-ঘরের বাইরে তাদের নি:শ্বাস নেয়ার সুযোগে যার-পর-নাই ভালো লাগছে। অঘোষিত বন্দী থাকার কষ্টের বিবরণ দেয়া কঠিন। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এমন অনিশ্চয়তার অভিজ্ঞতা আমারও আছে।
যাইহোক, যারা ফিরে এসেছেন, স্বাভাবিক হতে তাদের সময় লাগবে। শতভাগ স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও তাদেরকে যারা ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এভাবে সবাইকে ফিরিয়ে দিন। কেননা গুম হয়ে যাওয়া প্রিয়জনের ফেরার অপেক্ষায় সবাই। ওরা তিনজন ফিরে আসায় আশা জেগেছে সবাই ফিরবে।
ধরুন, ইলিয়াস আলীর শিশু মেয়ের কথা। এখন নিশ্চয়ই সে ভাবছে, সাড়ে পাঁচ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবা যে কোনো রাতে ফিরে আসবেন। হয়তো গত ক‘দিন সাইয়ারা নাওয়াল রাতে ঘুমায়নি। বাবার অপেক্ষায় দু‘চোখে বালিশ ভিজিয়েছে সে। দুই সপ্তাহ পর সে অস্টম শ্রেনীতে উঠবে। বাবা যখন হারিয়ে যায় তখন সে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়তো। মেয়েরা বড় হয়, আর বাবার প্রতি ভালবাসা বাড়ে, খবরদারি বাড়ে। সাইয়ারা নাওয়াল হয়তো স্বপ্নে বাবার সাথে দুষ্টুমি করে!! খবরদারি করে। আর দিনে স্কুলের পথে একা একা মুখ শুকিয়ে অশ্রুসিক্ত করে!!
সত্যিকার অর্থে, এভাবেই সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন কবির পারভেজ, সৈয়দ সাদাত আহমেদ, মারুফ জামান, স¤্রাট মোল্লা, মো. পারভেজ হোসাইন, ইফতেখার আহমেদ দিনার, মাহাবুব হাসান সুজন, সেলিম রেজা পিন্টু, মো. জহির, খালেদ হোসাইন সোহেল, কাজী ফরহাদ, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, আসাদুজ্জামান রানা, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আল আমিন, মো. চঞ্চল, মাসুদ রানা, নিজাম উদ্দিন আহমেদ মুন্না, আদনান চৌধুরী, কাওসার, তানভির, আনসার আলী, তরিকুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, আবদুল কাদের ভুইয়া মাসুম, ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম, ব্রিগেডিয়ার আজমির সন্তান, স্ত্রী, মা-বাবা, ভাই-বোনের অশ্রু ঝরছে প্রতিক্ষণ। যখনই কেউ ফিরে আসছেন, অন্যদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তখন আশা জাগ্রত হচ্ছে। হয়তো এক্ষুনি প্রিয়জন ফিরবেন!! আর অশ্রুজলে বুক ভাসাচ্ছেন তারা।
এভাবে আমার ফুফাতো ভাইকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, প্রায় এক বছর পর তাকে ফেরত দেয়া হয় কিছু গাঁজাসহ!! প্রাডো ব্রান্ডের গাড়িটি ফেরত দেয়া হয়নি। পুলিশ তাকে গাঁজা সহ গ্রেফতার দেখায়!!!! এরপরও আমরা খুশি এজন্য যে, জব্বার ভাইকে ফেরত পেয়েছি। ফিরে তিনিও কিছু বলেননি। জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর, ‘আমি ফিরেছি। এটাই বড় বিষয়।’
আসলেই ফিরে আসলেই আমরা খুশি। আর যারা ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। গত এক সপ্তাহে তিনজন ফিরে এসেছেন। কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ফেরত-দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সময় পাচ্ছিলাম না। কিন্তু, কাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো, অ্যাড্রেস করতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো, সম্প্রতি চ্যানেল ফোরের ভুমিকার কথা। ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের এই মিডিয়া একটু আগ-বাড়িয়েই (আমাদের কিছু প্রগতিশীল বন্ধুর মতে) বাংলাদেশের গুম-খুনের বিষয়ে রিপোর্ট প্রচার করে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃটিশ ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকীর কাছে তারা বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় প্রশ্ন করে এবং সেই সংবাদ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাদের প্রশ্নের একটি অংশে বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশে আপনার খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাহিনী অনেককে গুম করেছে। আপনার একটি ফোন অনেক মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে।’ গত ক‘দিনে তিনজনের ফিরে আসার পর আমার মনে হচ্ছে, টিউলিপ হয়তো ফোন করেছেন। ভাগ্নীর ফোন পেয়ে খালারও হয়তো মন গলেছে। আর খালা তার গুম-বাহিনীকে (র্যাব, ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন – ‘ওদের ফেরত দাও’। আর আমরা ফেরত পাওয়া পেয়েছি আমাদের প্রিয় মোবাশ্বের হাসান, উৎপল ও আমিনুরদের।
এখন প্রশ্ন হলো, আপনজনদের ফেরত পেয়ে আমরা কাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো। চ্যানেল ফোর, টিউলিপ সিদ্দিকী, শেখ হাসিনা না-কি র্যাব-ডিবিকে?? আমি আসলে সবাকেই কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। এখানে প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র ভুমিকা আছে। চ্যানেল ফোর সিরিয়াসলি নিউজ প্রচার না করলে টিউলিপ খালাকে ফোন করতেন না। টিউলিপ ফোন না করলে শেখ হাসিনা র্যাবকে পজেটিভ নির্দেশ দিতেন না। শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া র্যাব তাদের ফেরত দিতো না। আবার র্যাব চাইলে নারায়নগঞ্জ টাইপের খুন করে বস্তাবন্দী লাশ নদীতের ফেলে দিতে পারতো। তাদেরও একটি সদিচ্ছা এখানে কাজ করেছে। অতএব সবার সদিচ্ছার সম্মিলিত ফল হিসেবে আমরা স্বজনদের ফিরে পেয়েছি। চ্যানেল ফোর, টিউলিপ, শেখ হাসিনা, র্যাব-ডিবি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা!! আল্লাহ তাদের আরো সুমতি দিক।
তবে টিউলিপ সিদ্দিকীর প্রতি আমার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতাও আছে। তিনি আমাদের রয়টার্স ফাউন্ডেশনে কর্মরত সহকর্মী নজানিন যাগারির মুক্তির জন্য ব্যাপক ভুমিকা রেখেছেন। ইরানে বন্দী কিলবার্নের অধিবাসী এই সাংবাদিক আগামী সপ্তাহেই মুক্ত হবেন। এই ইস্যুটাকে সফলতা পাওয়া পর্যন্ত জোরালো ভুমিকা রাখায় এমপি টিউলিপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
টিউলিপের রক্ত, পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে যেহেতু তার ক্ষমতা আছে, সেহেতু আমরা তাকে পৃথকভাবে দেখতে চাই। আমরা চাই, টিউলিপ নিয়মিত তার খালা শেখ হাসিনাকে ফোন করুক। ইলিয়াস আলীর নাম ধরে খালাকে বলুন। শুধু প্রফেশনালস্ না, রাজনীতিকদেরও ফেরত দিতে বলুন। গুম হওয়া রাজনীতিকদের তালিকা এবং পরিচয় সহ আমরা আপনাকে পাঠাচ্ছি। আপনার ই-মেইল চেক করুন। এই বিজয়ের মাসেই সবাইকে ফেরত দিতে বলুন। নতুন বছরে আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। অশ্রুজলে বুক ভাসানো শিশুদের ঘুমাতে দিন। বাবার সাথে খেলতে দিন। আপনি বৃটিশ নাগরিক। আপনার একটি ফুটফুটে শিশু কন্যা আছে। আপনার ধনকুবের ইংলিশ স্বামী আছে। ভাবুন, ওরা হারিয়ে গেলে কত কষ্ট হতে পারে!!! সবসময় শিশুরা অপেক্ষা করছে, বাবা কখন ফিরবে। বাবা কোথায় আছে, কেমন আছে; তারা জানে না। কিন্তু বাবার ফেরার অপেক্ষায় আছে ওরা। প্রতি মুহূর্তে ভাবছে এই বুঝি বাবা এলো!! পায়ের শব্দ শুনতে কান পেতে থাকে ওরা। বাবার কন্ঠ শুনতে কান পেতে থাকে ওই শিশুরা। ওদের চোখের পানি মুছে দেয়ার সুযোগ আপনার যেহেতু আছে, একটু চেষ্টা করুন। আপনাকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাবো।
২০১৮ সাল হোক, গুম-মুক্ত বাংলাদেশ। এই প্রত্যাশা রাখছি।
লেখক : এম মাহাবুবুর রহমান
@কো-অর্ডিনেটর, ডাইভার্সিটি এন্ড সাসটেইনিবিলিটি ডেস্ক, রয়টার্স, লন্ডন অফিস;
@পলিটিক্যাল রিপোর্টার, দৈনিক আমার দেশ,
@সাবেক সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।