খােলা বাজার২৪।রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭: সাংবাদিকতা অামার জীবনে ক্রমিকের সুত্রে দ্বিতীয় প্রেম অার অাজীবনের ভালবাসার ঠিকানা। জীবনের প্রথম ও এ অবধি জীবনের দীর্ঘতম সময় ধরে অায়ের উৎস। এই প্রবাসে বসেও বাংলাদেশ থেকে রীতিমত বাংলাদেশের ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করে বেতন অানবার গর্বের পথ অামায় করে দিয়েছে সাংবাদিকতা।
সাংবাদিকতা অামাকে মানুষ হিসেবে অাত্মমর্যাদায় বাঁচতে শিখিয়েছে। সত্যের জন্য সোচ্চার হবার বোধের জন্ম দিয়েছিল বুকের ভেতরে। জানি, হয়নি কিছুই। হইনিও ‘কিছু একটা’। সে অামার অযোগ্যতা, অপারগতা। ভাগ্যের এত উদারতা থাকার পরও নিজের জীবনের সীমাহীন অপচয়ের কারনে পৌঁছুতে পারি, গন্তব্যে। পারবোও না জানি।
তবে সে নিয়ে দুঃখও নেই অামার। কেন, জানেন? কেননা, সাংবাদিকতার পথ ধরে টুকটাক লেখালেখি অামাকে খুব কিছুসংখ্যক, খুব সাধারন কিছু ,’সংখ্যায় সল্প’ মানুষের অনন্য, অকৃত্রিম ভালবাসা পাবার অসাধারন অার অসামান্য পথটি করে দিয়েছে। সেই ভালবাসা- জীবনে কক্ষপথের দীর্ঘসূত্রীতায় কিছুটা হলেও অামাকে ‘ধৈর্যশীল’ হতে শিখিয়েছে। এ পেশার কিছু শ্রদ্বেয়,অনুকরনীয় অগ্রজ অার স্নেহের অালোকিত মফস্বলের অনুজের পরম ‘ভালবাসা’র বাহুডোরে ‘ভাই’ হবার পথ করে দিয়েছে। ২০০৭ সালে চার লাখ সারকুলেশনের তখনকার দৈনিক অামাদের সময়ে মফস্বল থেকে শ্রদ্বেয় নাঈমুল ইসলাম খান অার দুলাল অাহমদ চৌধুরীর তীব্র ফাষ্টপেজে স্থানসংকটেও সপ্তাহে ৬ দিন ‘ সিঙ্গেল বক্স’ কলামে ‘ভাজের উপর’ থাকবার পথ করে দিয়েছে, এ পেশা। নওগারঁ, কুড়িগ্রামের বা লন্ডনের পাঠকের সাথে অধমের নামটির পরিচয় কখনোই এভাবে হত না। যদি না গুরু নাঈমুল ইসলাম খানের দুলাইনেও বাইনেম না থাকত।
জীবন নিয়ে অামি সন্তুষ্ট। অায়ূ অার জীবনের এত অপচয়ের পর যেটুকু সঞ্চয় অামার জীবনের, যে ‘কিছু’ মানুষের ভালবাসা তাও অাল্লাহর দান। ‘কিচ্ছু’ হতে না পারলেও জীবনে মুহুর্তের জন্য অার্থিকভাবে অসততা করিনি, টাকার কাছে কলম বিক্রি করিনি। যতটা ‘ভালো’ থাকলে নিজেকে দাড় করানো যায় ‘ভালো মানুষের দলে’ নিশ্চিতই জানি, অামার বসবাস তার চেয়ে বহুগুন দূরে।
নিজের যাতনাকে সাথী করেও কাছের দু চারজন মানুষের সমস্যায় একটু পাশে দাড়াবার অাজকের অভ্যাস, সেটারও জন্ম অন্তরে দিয়েছে মফস্বলে মানবিকতার, মাঠের ক্ষেতের, মেঠো পথের শুরুর দিনগুলির সাংবাদিকতা। পৌপিতার খানবাহাদুর উপাধি থাকলেও মরহুম বাবা ছিলেন সৎ একজন নিম্নবিত্ত অাইনজীবি।
এই যে অামার এদেশে এত সময় থাকবার পরও বলবার মতো কোন সম্পদ নেই। নেই দেশেও। কত্ত কিছু নেই। কিন্তু,তাতেও যে কী করে ‘খুব অানন্দে’ বাচঁতে হয় সেটাও কিন্ত শিখিয়েছে খুচরো-ভাংতি লেখালেখিরই অানন্দ। ভাগ্যিস,করুনাময়, তুমি অামায় বহু কিছু হতে না লিখে, ভাগ্যে সাংবাদিকতা, টুকটাক লেখালেখির ভাগ্য লিখেছিলে। নাহলে,অন্তত এ খুব অল্প পাঠকের ‘অনেক’ ও ‘অাসল’, ভালবাসায় বাচঁবার অসামান্য সুযোগটি মিলত না। স্বীকার করে বলি,এখনো নিজেকে সাংবাদিক মনে করি না,ভাবি জার্নিম্যান অফ জার্নালিজম বা সংবাদ কর্মী।
ভালবাসা অাপনাদের জন্য। ভালবাসি জীবনকে। প্রানের সৌন্দর্যে সুন্দরী অাকাংখিত রমনী দেখবার পরম অানন্দের মুহুর্তের মতোন করে অারো কিছুটা কাল তোমাকে ভালবাসতে চাই; সাংবাদিকতা।
এই যে অনিয়মের জীবন ভেঙ্গে মাসের বেতনটা পাবার সংবাদ পাঠানোর চাকরী ঠিক রাখা,গান শুনবার সময় বাচিঁয়ে,কিছুটা পড়াশুনো করবার অভ্যাসের সময় বাচিয়ে,সে ভালবাসাও শিখিয়েছে অামায় ‘দায়বদ্ধতা’। মানুষ হয়ে সমাজে জন্ম নেবার কমিটমেন্ট থেকে। যে কথাগুলো,অসঙ্গতিগুলো নানা সমীকরনে অনেকে লিখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না, সেই সত্যগুলো লিখে যেতে চাই।
অামি লেখালেখি অার গানে নিজেকে হারাই, অাবার ফিরেও পাই। অামি কখনো বলি না,’ এমন ঘটনা বা ভূল অামার জীবনে কখনো ঘটেনি’। বরং ভূলগুলোও অামার শিক্ষক। কেন জানি কমফোর্ট জোনের ভেতরে নয়,বাইরে ই অামি স্বাচ্ছন্দ্য পাই। কেননা কমফোর্ট জোনের ভেতরে অনিচ্ছার অাগাছাও জন্মাতে পারে না।
জীবন প্রতিনিয়ত অামাদের অবাক করে,শেখায়,ভাবায় নতুন করে। যদি পুর্নজন্ম বলে কিছু থাকবার থাকে, অামি করুনাময়ের কাছে ‘লেখালেখির ছাত্র’ হবার ভাগ্য নিয়ে জন্মাবার খালি চাই। নিজের মতোন করে সেলফোনের, কিপ্যাডের ডক অার ডক্সের যুক্তাক্ষর ভেঙ্গে যাবার বেদনা নিয়ে,অতটা মততা ও যাতনা নিয়ে নিয়ে ‘শুধু লিখে যেতে চাই’। অামার নিজের ভাবনা অার বিবেকের কাছে সৎ থেকে লিখে যেতে যেতে চীরকালের মতো থেমে যেতে চাই। এরপরও চাই।
হ্যা, সত্যি মরবার পরও না অামার একটা চাওয়া অাছে। অামাকে অার অামার খুচরো-ভাংতি লেখালেখি যাঁরা ভালবাসেন অাসলেই হৃদয় থেকে, এমন চারজন “অাসল ভালবাসা” সিক্ত মানুষের কাধে করে খাটিয়ায় চেপে ঘুমাতে চাই মাটির ঠিকানায়।
খুব নিজের কথাগুলি বলবার এ চিঠি অাসলে পাঠাবার কথা ছিলো প্রেমিকার কাছে। সে অামার ভাগ্যে নেই। সবার বোধহয় সবকিছু থাকতেও নেই। কিছু বেদনাকে প্রেরনা হয়েই বোধকরি ফিরতে হয় কলমের কাছে,মগজের ভাজে।
হঠাৎ ভাবনা হলো,অাচ্ছা তাহলে চিঠিটা কাকে পড়তে দিই?
ও অারেকটা কথা,কিছুদিন ধরে অামার লেখা প্রায় কলামগুলো নিয়মিত কলামপ্রতি টাকা দেওয়া পত্রিকা রেখে কম পুজির সপ্নবাজ বন্ধুবর দুই সম্পাদককে দিচ্ছি। তাদের পত্রিকাকে দিচ্ছি এ কারনেই যে,অামার জন্মমাটি সিলেটের অন্তত ‘সিলেটভিউ’ অার ‘এইবেলার’ শাহ দিদার অালম নবেল অার অাজিজুল ইসলামের মতো সপ্নবাজদের সপ্ন দেখবার ‘সাহস’ টার বেহিসাবী সহযাত্রী হতে চাই। সপ্নগুলির কথা না হয় নাই বা বেচঁলাম পুজিঁর টাকার কাছে। খবর বিক্রি তো করছিই,সে জীবিকার টানে।
অাচ্ছা,মাঝে মাঝে ভাবি,খুব বেশি ই কি চাই?
নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে অানুক শান্তির বারতা।
লেখক,প্রবাসী সাংবাদিক, সদস্য রাইটার্স গীল্ড অব গ্রেট ব্রিটেন।