খােলা বাজার২৪। বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮: শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সময় বেঁধে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন ধাপে বেঁধে দেয়া এ সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। তারপরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। খবর বণিক বার্তার।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া সময় মেনে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থানান্তর করেছে মাত্র পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়— পুণ্ড্র, বাংলাদেশ ইসলামী, ইস্ট ডেল্টা, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়। তাগাদাপ্রাপ্ত বাকি ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিতে পারেনি। এজন্য আরো সময় চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থানান্তরের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস স্থানান্তরে ব্যর্থ হয়েছে। ইউজিসি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে। সে আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বেসরকারি সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য গত বছরের অক্টোবরে চিঠি দেয় ইউজিসি। কিন্তু ক্যাম্পাস স্থানান্তরের জন্য আরো তিন বছর সময় চেয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হবে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে ভবনটিতে সব প্রোগ্রামের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে আরো তিন বছর সময় প্রয়োজন।
সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এএনএম মেশকাত উদ্দীন বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের বিষয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি এক নয়। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে আমাদের অগ্রগতির কথা জানিয়েছি। সে আলোকে আরো কিছু সময় চেয়েছি।
বেঁধে দেয়া সময়ে সব ধরনের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে পারেনি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। নিজস্ব বহুতল ভবন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত সময় চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
জানতে চাইলে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাড্ডায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে ৮০ হাজার বর্গফুট বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন। ভবন নির্মাণ সমাপ্তির জন্য সর্বশেষ সময় দেয়ার জন্য আবেদন করেছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে স্থায়ী ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তরে ব্যর্থ হয়েছে দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশও। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কাছে আরো এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিষয়টি নিশ্চিত করে পিপলস ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মো. মোফাক্কের বলেন, আমাদের ১১টি প্রোগ্রামের মধ্যে ছয়টির কার্যক্রম স্প্রিং সেমিস্টার থেকে নরসিংদীর স্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরু হবে। বাকি সাতটি প্রোগ্রাম স্থানান্তরের জন্য আরো এক বছর সময় প্রয়োজন। এজন্য মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছি।
বেঁধে দেয়া সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারা আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরা ইউনিভার্সিটি। সময় চেয়ে আবেদন করেছে তারাও। বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কাজী মহিউদ্দিন বলেন, তুরাগ থানার ভাটুরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ চলছে। সব ধরনের কার্যক্রম স্থানান্তরে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আরো এক বছর সময়ের প্রয়োজন। তদারক প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবহিত করেছি।
একইভাবে এক বছর সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে নর্দান ইউনিভার্সিটি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আরো পাঁচ বছর সময় চেয়েছে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি। আর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি সময় চেয়েছে চার বছর। নিজস্ব ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করতে না পারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আরো আছে লিডিং ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রাইম, রয়েল ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি।
ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সব ধরনের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন না হলেও অগ্রগতি আছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এগুলো হলো— ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), গ্রীন, ওয়ার্ল্ড ও ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তাদের অগ্রগতির বিষয়টি অবহিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রমতে, দেশের মোট ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫১টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরুর সময় শেষ হয়েছে বহু আগে। এগুলোর মধ্যে গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ১২টি কার্যক্রম শুরু করে। বাকি ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয় ২৯ মে। চিঠিতে একটিকে ৩১ জুলাই, পাঁচটিকে ৩০ সেপ্টেম্বর ও সাতটিকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দেয়া হয়। আগস্টে চিঠি দেয়া হয় ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়কে। ওই চিঠিতেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। পরবর্তীতে অক্টোবরে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়ে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব ধরনের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ১৪ জানুয়ারি বৈঠক ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৈঠকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।