খােলা বাজার২৪। রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮: শীত! পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এখন প্রাকৃতিক আতঙ্কের নাম। চীন, ভারত, নেপালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশে তাপমাত্রা কমে ২.৬ ডিগ্রিতে। দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে হিমালয়ের কোলঘেঁষা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
তবে, শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে বিত্তবানদের আয়োজনের শেষ নেই। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে কেউ হয়তো অর্ধডজন কম্বল পুরেছেন ঘরে, কেউ আবার হয়তো নিয়ে নিয়েছেন রুম হিটার।
কিন্তু যারা সমাজের বৃত্তের বাইরে অর্থাৎ দুস্থ! এই নিষ্ঠুর অবিচারি শীতে তারা কী করবেন?
ভাবতেই চোখে ভাসবে নিষ্ঠুর শীতে ক’দিন আগে শৈশবের দুরন্তপনায় খেলার মাঠ কাঁপানো শিশুর জগতের মায়াত্যাগ! কী নিষ্ঠুর!
কী ভাবছেন সেই সন্তান, যিনি বাবার জন্য একটি শীতের জামা কিনতে তীব্র শীতেও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছেন, রাতে সোয়েটার হাতে বাসায় ফিরে শুনলেন; বাবার আর শীত জামা লাগবে না, তিনটে সাদা পাতলা কাপড় হলেই চলবে!
শীত নামক এই প্রাকৃতিক দানবের আঁচড়ে এমন অসংখ্য স্বপ্ন ভঙ্গের ঘটনা ঘটে চলেছে নীরবে। তা থেকে যাচ্ছে চোখের আড়ালে, কেবলই পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেলের সংবাদ হয়ে।
এই বৃত্তছাড়া মানুষের মৃত্যুর খবরে কারও মাথা ব্যথার প্রয়োজন নেই! কেনই বা থাকবে, ওরা সমাজের কে? চৌদ্দ গোষ্ঠীর হিসেব করেওতো এই কূলহারা মানুষরা বিত্তওয়ালাদের আত্মীয় হয় না! আর মানবতা দিয়েই বা কী হবে? আপনে বাঁচলে বাপের নাম!
আচ্ছা, এই শীতে দিনাজপুরে যে মা তাঁর শিশুকে শীত থেকে বাঁচাতে গভীর মমতায় জড়িয়ে ধরেছেন, শীতের তীব্রতা যদি মায়ের সেই মায়াকেও হারিয়ে দেয়! তবে কী করবেন মা?
মা-বাবার মুখে হাসি ধরে রাখতে কতো কিছুই করার চেষ্টা করি আমরা। আরেক জনের মা-বাবা কিংবা সন্তানের মুখে হাসি ফোটালে প্রকৃতির সরল নিয়মে সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন আমাদের আপন মা-বাবা এবং সন্তান। অভিশপ্ত শীত থেকে আমাদের নিজ মা, বাবা, সন্তানের সঙ্গে আমরা পাশের মা, বাবা, সন্তানেরও খোঁজ নিই! বাড়িয়ে দিই উষ্ণতার হাত! আমাদের সামান্য দানে লক্ষ কোটি চাঁদের হাসি ফুটবে আরেক মা, বাবা, সন্তানের মুখে। সেই প্রাপ্তি, সেই আনন্দে দূর হয়ে যাবে সর্বনাশা শীত!
আসুন মানবতার পাশে দাঁড়াই!
লেখক: উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন কর্মী।