Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বুধবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অসাধু কর্মকর্তারা অধরাই থেকে যাচ্ছে। এ ধরনের কর্মকর্তারা দুর্নীতিবাজদের তদবির বাস্তবায়ন করলেও ধরা পড়ছে কর্মচারীরা। অথচ এর সঙ্গে জড়িত নেপথ্যের রাঘববোয়ালদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে তারা দ্বিগুণ উৎসাহে নতুন করে তদবির বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ফাইল নিয়ে বসছেন।

এদিকে দুর্নীতির দায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক আদেশে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পিও (ব্যক্তিগত কর্মকর্তা) মোতালেব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনকে আলাদা আদেশে বরখাস্ত করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ মঙ্গলবার এক আদেশে বলেছে, ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় মোতালেব হোসেনের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতিবাজদের তদবির বাস্তবায়নে যারা সহায়তা করেছেন তারা কে বা কারা। পিও বা উচ্চমান সহকারীর পক্ষে তদবির বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এরা মাঠ পর্যায় থেকে লোকজন ধরে আনে। কাজের জন্য চুক্তি করে। টাকা আদায় করে। এর ভাগবাটোয়ারা করে। অনেক দূর পর্যন্ত ভাগ দেয়। তারা বলেন, এই পর্যায়ের কর্মচারীরা ফাইলে স্বাক্ষর করতে পারে না। কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছাড়া ফাইল অনুমোদন হয় না। তদবিরও বাস্তবায়ন হয় না। নেপথ্যের এই কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান।

অনুসন্ধান করবে দুদক : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, যে কোনো মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি অনুসন্ধান বা তদন্ত করবে দুদক।’ মঙ্গলবার দুদক কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে আমরা তাদের বিষয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি। সেটা আপনাদের (গণমাধ্যম) কল্যাণে আমাদের কাছে এসেছে। আমাদের অনুসন্ধান কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে। ওই দুই কর্মকর্তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই দুদকের এই উদ্যোগ নেয়। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমাদের তদন্ত সর্বক্ষেত্রেই বিস্তৃত। কেবল সরকারিই নয়, বেসরকারি ক্ষেত্রেও আমাদের কার্যক্রম বিস্তৃত। ঘুষ গ্রহণ বা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অর্জন এবং ভোগদখলে রাখা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।

বরখাস্ত দু’জনের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দুই কর্মকর্তার গ্রেফতার প্রসঙ্গে বলেন, ‘তারা নিখোঁজ হয়ে গেছেন এ খবর আসার পর আমরা খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করি। যখন জানতে পারি, তারা কোনো বেআইনি কাজ করছেন, অপরাধ করছেন, ঘুষ-দুর্নীতি বা এ ধরনের কিছু করেছেন এবং পুলিশের হেফাজতে আছেন, তখন এটাই সঠিক হয়েছে। এদের ব্যাপারে পুলিশ মামলা দেবে, কোর্টে বিচার হবে, শাস্তি পাবে।’

গ্রেফতারকৃতরা কারাগারে : এদিকে গ্রেফতারকৃত মোতালেব হোসেন, নাসির উদ্দিন ও লেকহেড স্কুলের পরিচালক খালেদ হাসান মতিনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়ারুল ইসলাম উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা জুলফিকার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুপুর তিনটায় আসামিদের আদালতে প্রেরণ করেন। শিক্ষামন্ত্রীর বহিষ্কৃত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী শাহ আলম।

তিনি বলেন, ‘এই মামলটি সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে করা। মন্ত্রণালয়ের সুনাম ক্ষুণœ করার জন্য মামলাটি করা হয়েছে। খালিদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এহসানুল হক সমাজী। তিনি শুনানিতে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মামলাটি অতি দুর্বল। ফৌজদারি আইন অনুযায়ী মামলাটি চলার অযোগ্য। দুদকের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম তিন আসামির জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘এই মামলাটি ঘুষ লেনদেনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। মামলাটি মানি লন্ডারিং ধারায় তদন্ত হতে পারে। তাই জামিনের বিরোধিতা করছি।’

স্কুল খুলে দিতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা : ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘লেকহেড স্কুল খুলে দিতে পরিচালক খালিদ হাসান মতিনের সঙ্গে সাড়ে ৪ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিল মোতালেব হোসেন ও নাসির উদ্দিনের। এর মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধের সময় তাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। আবদুল বাতেন আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া তিনজনই ঘুষ লেনদেনের কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া লেকহেড স্কুলের পরিচালক খালিদ হাসান মতিনের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে মতিনের বিরুদ্ধে আলাদা করে মামলা হবে।’ গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টা পরও আসামিদের আদালতে না পাঠানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোববার রাতে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে যে নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে তা জব্দ তালিকায় নথিভুক্ত করতে সময় লাগে। এ কারণে সোমবার সকালে তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হয়। সেই হিসেবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।’যুগান্তর