Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮: দাবি আদায়ে আন্দোলনের হিড়িক পড়েছে। রাজপথে পেশাজীবীরা। তাদের মধ্যে আছেন শিক্ষকদের বেশ কয়েকটি পক্ষ। একটি পক্ষের দাবি পূরণের আশ্বাস আসতে না আসতেই আরেক পক্ষ দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক যেন পরিণত হয়েছে আন্দোলনের ক্যানভাসে। এ পর্যন্ত সাতটি সংগঠন প্রেস ক্লাবের সামনে টানা অবস্থান, লাগাতার আমরণ অনশনের মতো কর্মসূচি পালন করেছে।

সরকার তিনটি সংগঠনের দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করে দাবি আদায়ের আশ্বাস পেয়ে ঘরে ফেরা সংগঠনগুলো হলো- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোট, নন-এমপিও শিক্ষকদের সংগঠন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন আর ইবতেদায়ী মাদরাসার সংগঠন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতি। এসব সংগঠনের দাবি পূরণের আশ্বাসের পরপরই একই জায়গায় বর্তমানে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সংগঠন বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরাম, বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও চাকরির বয়স বাড়ানোর দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ (বাসাছাপ)। আশ্বাস পেয়ে ঘরে ফেরা সংগঠনের মধ্যে প্রথম দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা।

তারা বেতন বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে গত বছরের ২৩শে ডিসেম্বর জাতীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের ব্যানারে এ আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবি ছিল, ১৪ তম গ্রেড থেকে প্রধান শিক্ষকের ১০ম গ্রেডের নিচের গ্রেডে উন্নীত করা। লাগাতার আমরণ অনশনের মুখে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে তারা ঘরে ফিরে যান। এরপরই এমপিওভুক্তির দাবিতে ২৬শে ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে নন-এমপিও শিক্ষকরা। চারদিন টানা অবস্থানের পরও এমপিওভুক্তির দাবি পূরণের কোনো সাড়া না আসায় ৩১শে ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন তারা। অনশনের ষষ্ঠ দিনে শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসানের মাধ্যমে দাবি আদায়ের ঘোষণা আসলে অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহদুন্নবী ডলার। এর আগে কনকনে শীতের মধ্যে প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে টানা অবস্থান কর্মসূচির পর লাগাতার আমরণ অনশন শুরু করেন শিক্ষকরা। টানা ১০ দিনের এ আন্দোলনে প্রায় শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। নন-এমপিও শিক্ষকদের আশা পূরণ না হতেই একই জায়গায় ১লা জানুয়ারি থেকে চাকরি সরকারীকরণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা। চাকরি করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বেতন-ভাতা না পাওয়ায় আন্দোলন শুরু করেন মাদরাসার শিক্ষকরা।

দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একের পর এক স্মারকলিপি প্রদান করেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৮ই জানুয়ারির পর আমরণ অনশন শুরু করেন তারা। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার সংগঠনের সভাপতি কাজী রুহুল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করেন দেশের প্রায় ১০ হাজার ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা। প্রচন্ড শীতের মধ্যে ফুটপাথে ও সড়কে শুয়ে অবস্থান করে রাত-দিন লাগাতার অনশন পালন করায় প্রায় ১৯৬ জন শিক্ষক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিক্ষকদের বক্তব্য ছিল-মাদরাসা বোর্ড থেকে রেজিস্ট্রিপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণ করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক আশ্বাস দিলেও অনেক শিক্ষক সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বেতন বা অনুদান না পেয়ে মাববেতর জীবন কাটাচ্ছিলেন। শিক্ষকরা তাদের দাবির ওপর অবিচল থাকলে একপর্যায়ে ১৬ই জানুয়ারি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর নির্দেশে একই বিভাগের সচিব মো. আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেস ক্লাবে এসে দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষকদের অনশন ভাঙান।

বেতনহীন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বেতনের আশ্বাস পেয়ে বাড়ি পর্যন্ত না যেতেই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা। চারদিন কর্মসূচির পর সাড়া না পেয়ে ১৫ই জানুয়ারি থেকে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের ব্যানারে লাগাতার আমরণ অনশন শুরু করেন শিক্ষকরা। এরপরও দাবি পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে ধর্মঘট পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, জাতীয়করণের একদফা দাবিতে ধর্মঘট আগামী ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ সময়ের মধ্যে সরকার দাবি পূরণ না করলে সামনের মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা বর্জনের হুমকিও দিয়েছেন তারা। ঘোষণার পরের দিন তাদের এ অবস্থান থেকে সরে এসে শিক্ষকরা তাদের অনশন প্রত্যাহার করে নেন। সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক আবুল হোসেন মিলন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়েছি। এজন্য আমরা আমাদের আন্দোলন থেকে সরে এসেছি।

এছাড়া দাবি আদায়ের আন্দোলনের হিড়িক থেকে বাদ যাননি বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা। জাতীয়করণের দাবিতে ২১শে জানুয়ারি থেকে প্রেস ক্লাবের সামনের পশ্চিম পাশে অবস্থান করে গত ২৭শে জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন পালন করছে সংগঠনটি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ফুটপাথে অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন শিক্ষকরা। এদিকে দাবি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে প্রেস ক্লাবে এসেছেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গত শনিবার থেকে প্রেস ক্লাবে অবস্থান করে আগামী মাসের শুরু থেকে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনটির সহসভাপতি সুমন মাতব্বর রোববার বলেন, দ্বিতীয় দিনের মতো আমরা অবস্থান কর্মসূচি করছি। আজকে সারা দেশ থেকে প্রায় ৭-৮ হাজার প্রোভাইডার আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

প্রোভাইডারদের দাবি-২০১১ সাল থেকে নির্ধারিত বেতন ১৪ গ্রেডে ১৬৭০০ টাকা। ২০১৩ সালে আমাদের চাকরি রাজস্বকরণের কথা থাকলেও এখনো তা করা হয়নি। এতে করে চাকরিরত অনেকের চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন তারা। একইভাবে চাকরির বয়স ৩৫ করার দাবিতে ১০ই জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করতে প্রেস ক্লাবে এসেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হলে এ সংগঠনটিও আমরণ অনশনের হুমকি দিয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা কারণে চার বছরের অনার্স শেষ করতে সময় লাগছে ৭ বছর। এত সময় অপচয় হওয়ায় চাকরির আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় ৩৫ বছর নির্ধারণ করে দেয়ার দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন আন্দোলনকারীরা। মানবজমিন