খােলা বাজার২৪। সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণ তার প্রত্যক্ষভোটে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার নির্বাচন করে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারও জনকল্যাণমূলক কাজ করে থাকে। সে সরকারের থাকে জবাবদিহিতা। সারকথা এমন যে, জনগণের জন্য সরকার। সরকারের জন্য জনগণ নয়।……… এমনই হচ্ছে গণতন্ত্র। গণতন্ত্র যদি না থাকে, জবাবদিহিতা যদি না হয়, তাহলে সেখানে গণ তথা জনকল্যাণমূলক কাজ জনগণের জন্য কতটা অর্থবহ। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের শ্লোগান হচ্ছে ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’। তাদের মতে আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। তাদের এই শ্লোগান জনগণের ভোটাধিকারের বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
রাষ্ট্রের কর্ণধাররা কাজ করে জনকল্যাণে। আবার জনগণই নির্ণয় করে রাষ্ট্রের কর্ণধারদের। কিন্তু দেশবাসী সবাই ওয়াকিবহাল বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারী নির্বাচনে কিভাবে ক্ষমতায় এসেছেন। সে নির্বাচনে কি জনগণ প্রত্যক্ষ ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে পেরেছিলেন। সে নির্বাচনে ১৫৪ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছিলেন-যেখানে ১৫০ আসন যে কোন দল বা জোটের থাকলেই ক্ষমতার আসনে বসা যায় সেখানে আওয়ামী জোট ১৫৪ আসনে আগেই নির্বাচিত করে নেয়। শুধু তাই নয় জাতীয় পার্টির এরশাদ সাহেবকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে গিয়ে পরে চিকিৎসার নামে জনসম্মুখে নিয়ে আসেন। এরশাদ সাহেব নমিনেশন পত্র পত্যাহার করে নিলেও নির্বাচন কমিশন তা বাতিল না করে বহাল রাখে, শুধু তাই নয় এরশাদ সাহেব নির্বাচনী এলাকায় না গিয়ে, কোন পোস্টার না ছাপিয়ে, কোন খরচা-পাতি না করেও নির্বাচিত হন-চিকিৎসার নামে অন্তরীন থেকে।
তারপর নির্বাচনের দিন মিডিয়ার কল্যাণে কি দেখা গেল, অ-ভোটাররাও লাইনে লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিচ্ছে, মিডিয়া জিজ্ঞাসা করলে বলে-বড় ভাইয়েরা বলে দিয়েছে, তাই এসেছি। এমনকি তারা তাদের নিজেদের শেখানো নাম ভুলে গেছে, পিতার নামও ভুলে গেছে, অনেক জায়গায় জোর করে ক্যাডাররা ছিল মেরে নিয়েছে, অনেক কেন্দ্র ছিল ফাঁকা-কুকুর ঘুমাতে দেখা গেছে। এই ছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচন। তারপর ঢাকার ২ সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও সেই ধারা তো বটেই এমনকি পোলিং এজেন্ট ঢুকতে পারেন নি, চলাচলের জন্য বাস ছিল বন্ধ, কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে বলে-‘কষ্ট করে আপনাকে ভোট দিতে হবে না, আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে-বাসায় যান। কেন্দ্রগুলো ক্ষমতাসীনদলের ক্যাডাররা দখল করে নিয়েছিল।…..তারপর স্থানীয় পর্যায়ের সকল নির্বাচনও ভয়-ভীতি দেখানোসহ আরো ভয়াবহ অবস্থা।….গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার এই যখন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে চলমান নির্বাচনী আবস্থা বা পরিবেশ-ঠিক তখন এ পরিবেশ উন্নতির কিছু না করে ৩০ জানুয়ারী ২০১৮ সিলেটে মাজার জিয়ারত করে জনসভায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। সে জনসভায় তিনি নৌকায় ভোট চেয়ে বললেন-‘বিগত নির্বাচনে নৌকায় সবাই ভোট দিয়েছিলেন’।
সুপ্রিয় পাঠকগণ, ভাবুন তো একবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে নৌকায় সবাই কি ভোট দিয়েছিলেন ? না-কি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের চিত্র ছিল উপরে উল্লেখিত সংক্ষিপ্ত বর্ণনারই প্রতিফলন। তাহলে ‘বিগত নির্বাচনে নৌকায় সবাই ভোট দিয়েছিলেন’ এ কথার মাধ্যমে ম্যাসেজ কি ? আবার কি আরো একটি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করার পায়তারা। সে রকম আর একটি নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে কি বৃহৎ দল বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বহুলাংশে প্রশ্ন উঠছে বিএনপিকে তথা বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় দিতে যাচ্ছে। তারিখও নির্ধারিত। এ মামলার রায় নিয়ে দেশব্যাপি সাধারণ জনগণ ভাবছে আর প্রচুর সিমপ্যাথিও দেখাচ্ছে। জনগণ ভাবছে একজনের নামে ছিল হত্যা মামলাসহ ১৫ টি মামলা, আর অন্যজনের নামে ছিল ৫ টি মামলা। ক্ষমতায় থেকে নিজের দলের অনুকুল্য আইনজীবীদের দিয়ে ‘রাজনৈতিক হয়রানী’ আখ্যা দিয়ে হত্যা মামলাসহ সেই ১৫টি মামলা তুলে নেন একজন এবং অন্যজনের ৫ টি মামলা সচল রেখে সপ্তাহে ৩ দিন করে হাজিরা রেখে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। অথচ এই দুই জনেই সমান সমান বার ক্ষমতায় ছিলেন। ….তাহলে জনগণের ভোটাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ রেখে উন্নয়নের গণতন্ত্র শ্লোগান নিয়ে এই কি আজ ক্ষমতার রাজনৈতিক নিয়তি। যেখানে নেই কোন সমান সমান খেলার মাঠ। সরকারী দলের নেতাকর্মীরা অপরাধ করলেও, দোষী হলেও তাদের নামে কোন মামলা হয় না। তারা বহাল তবিয়তে চলাফেরা করে। আর অপরদিকে বিরোধী দল বিএনপি নেতাকর্মীদের অপরাধ না করলেও নামে বা বেনামে একাধিক মামলা হয়। প্রায় নিত্যদিন তাদের মামলায় হাজিরা দিতে হয়, নয়তো বা হামলার শিকার হতে হয়। এ না হলেও মাঝে মাঝে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সময় নতুন সংস্করণ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ভাগ্যে যুক্ত হয়েছে আর তা হলো-সিভিল পোশাকধারীদের দ্বারা গ্রেফতার হয়ে প্রথমে প্রশাসন অস্বীকার করে পরে আবার স্বীকার করে এবং উল্লেখ করে অমুক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনো দেখা গেছে বিরোধী নেতাকর্মীরা রাতে বাসাতেও ঘুমাতে পারেন না। বাসায় বাসায় তল্লাসী চালানো হয়, গ্রেফতার করা হয়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন-নির্যাতন, দমন-পীড়ন, অত্যাচারের প্রতি সাধারণ জনগণের সহমর্মিতা থাকলেও তারা একাত্ম ঘোষণা করে প্রকাশ করতে পারে না অজানা আতংকে। কেননা, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের পর থেকে সকল পর্যায়ের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটকে কেন্দ্র করে সাধারণ জনগণ যে ভয়-ভীতি, হুমকি-ধুমকি দেখছে-তাতে জনগণ ভোট দেওয়ার কথা প্রায় ভুলেই বসেছে। নিকট অতীতেও কি উৎসবমূখর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হত-এখন তা অনেকের কাছে স্বপ্নের মত। জনগণ এখন রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়াও নিজেদের কথাও কোথাও বলতে পারছে না অজানা আতংকে। জনগণ গুমরে গুমরে কাঁদছে। কেননা, মানুষের বেঁচে থাকতে হলে নিত্যদিন খেতে হয়। আর সেই খাবার সরবরাহকারী দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। এক কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা, এক কেজি ডাল ১৪০ টাকা, এক কেজি পিঁয়াজ ১০০ টাকা, এক কেজি মরিছ ১২০ টাকা, এক কেজি চাল ৭০ টাকা (মোটা চাল ৪৫ টাকা)। ভাবা যায় শহরাঞ্চলের প্রত্যাহিক জীবন-জীবিকায় দ্রব্যমূল্যের এইসব আকাশ ছোঁয়া মূল্য কি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ-তো গেল নিত্য খাদ্যদ্রব্যের বিষয়াদি। এছাড়া বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ৯ বছরে ৯/১০ বার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে। ফলে জনজীবনে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গ্যাস বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে বাসাওয়ালারা তাদের বাড়ী ভাড়া বাড়িয়েছে। কেননা, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার উন্নয়নের গণতন্ত্র শ্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় থাকলেও আজো জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাসাভাড়া সংক্রান্ত কোন নীতিমালা তো করেন নাই-ই, এমন কি এ বিষয় সংক্রান্ত কোন দিক নির্দেশনাও তেমন নেই। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী অসুবিধায় আছে গার্মেন্ট’স শ্রমিকরা। তারা দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে যা বেতন পায় তার অর্ধেক দিতে হয় বাসা ভাড়ায়। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ার সাথে সাথে গার্মেন্ট’স এলাকাগুলোতে বাসাভাড়া যেন রীতিমতো পাগলা ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায়। সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়াতে শুধু দ্রব্যমূল্য বা বাড়ীভাড়া নয়-পরিবহনখাত, চিকিৎসাখাতসহ জীবন-জীবিকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। যদি গ্যাস-বিদ্যুৎ এর দাম ৯ বছরে ৯/১০ বার না বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ভুর্তুকি দিয়ে লাগাম টেনে ধরা যেত তাহলে পক্ষান্তরে লাভ হতো সার্বিকভাবে বাংলাদেশেরই। কেননা একটি পরিবার যদি আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকে তাহলে ঐ পরিবারে পৃষ্টিকর খাবার এর যোগান সহজ হয়, তখন পরিবার এর সদস্যদের মেধা ও মনন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়-বিশেষ করে শিশুদের। আর শিশুদের মেধা ও মনন বৃদ্ধি পাওয়া মানেই হলো আগামীর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ জ্ঞান-গরিমায়, বিদ্যা-শিক্ষায়, চিকিৎসা-বিজ্ঞান তথা প্রতি সেক্টরে এগিয়ে যাওয়া এবং সেই সাথে স্বনির্ভরতা। অর্থাৎ সয়ংসম্পূর্ণ স্ব-নির্ভর বাংলাদেশ হবে। কেননা, আজকের শিশুরাই তো আগামী দিনের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ।
কিন্তু উন্নয়নের গণতন্ত্র এর যুগে এসে গ্যাস-বিদ্যুৎ এর মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বাসাভাড়া বৃদ্ধি, পরিবহন খরচা বৃদ্ধি, লেখাপাড়া- চিকিৎসাসহ সকলখাতের ব্যয় বৃদ্ধিজনিত কারণে মানুষের জীবন-জীবিকায় আজ নাভিশ্বাস উঠছে। গণ-মানুষের এ সমস্যা নিয়ে রাজনীতিবিদরা বিশেষ করে বিরোধী রাজনীতিবিদরা কথা বলতে আসলে তাদের উপরও নামে মামালা, হামলা, জেল-জুলুম, রিমান্ড-নির্যাতন-নিপীড়নের খড়গ। যেন দেশে বিরোধী দলও সাধারণ মানুষের বিষয়ে কথা বলতে না পারে সে জন্যই হয়তো এ ব্যাবস্থা-এমনকি ভীতি কার্যকর করানোর জন্য এর সাথে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আমলেই শুরু হয়েছে-কথা বললেই বা সমালোচনা করলেই অপহরণ, গুম, পঙ্গু’র সংস্কৃতি। ফলে রিবোধী রাজনীতিবিদরাও এর মাঝে থেকেই তাদের সাধ্যমত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে-ক্ষমতাসীনদের কঠোর হস্তে দমন-পীড়ন সত্ত্বেও [[এর প্রমাণ ২০১৭ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বিরোধীদল (বিএনপি) দেশব্যাপি জনসচেতনায় লিফলেট বিতরণ করেছিল]]।
আর বিরোধী রাজনীতিবিদদের উপর ক্ষমতাসীনদের দমনের খড়গ হস্ত দেখে জনগণ একেবারে চুপ-চাপ। যেন জনগণ সবকথা পেটে আটকিয়ে রেখে মুখে কলুপ আটকে আছে। অর্থাৎ ভিতরে ভিতরে জনগণ গুমরে গুমরে কাঁদছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য যুক্তিও ক্ষমতাসীনদের পক্ষে মাঝে মাঝে শোনা যায়-আমরা তো সরকারী চাকুরিজীবীদের বেতন দিগুন বা তার চেয়েও বেশী বৃদ্ধি করে দিয়েছি-সমস্যা তো থাকার কথা নয়। সরকারী চাকুরিজীবীরাও বেতন দিগুন বৃদ্ধি পেয়ে যেন অনেকটাই চুপচাপ। আর এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনরা একটু ভাবুন তো দেশের মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে ও পরিবারের ভিত্তিতে কতো জনগণ বা কয়টা পরিবার সরকারী চাকুরি করে- যা অবশ্যই মোট জনসংখ্যার অনুপাতে নেহাতেই কম। আর দেশের মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে ও পরিবারের ভিত্তিতে কতো জনগণ বা কয়টা পরিবার বে-সরকারী চাকুরি করে। বে-সরকারী চাকুরিজীবীদের তো কোন বেতন বৃদ্ধি হয় নাই বা ক্ষমতাসীনরাও সরকারী চাকুরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে বেসরকারী চাকুরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি তো দুরের কথা কোন নীতিমালাও দেন নাই। এটা যদি ক্ষমতাসীনরা ভোটের হিসেব করে করেন-তাহলে সরকারী চাকুরিজীবীদের ভোট নিলেও শতকরা ৫% ভোটও পাবেন না। কেননা, দেশের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে ৮০% এর বেশী লোক সরকারী চাকুরির বাহিরে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছে-তাদের জীবন-যাপন গ্যাস-বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বাসাভাড়া বৃদ্ধি, পরিবহন খরচা বৃদ্ধি, লেখাপাড়া- চিকিৎসাসহ সকল খাতের ব্যয় বৃদ্ধিজনিত কারণে অনেকটাই দেওয়ালে পিঠ টেকে গেছে। কিন্তু এসব লোকজনও তো এই দেশের জনগণ। তাদের জীবন-জীবিকার কথা তো অবিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রের তথা সরকারের ভাবতে হবে। অনেকেরই মতে শুধু রাজনৈতিক পক্ষ-বিপরক্ষের ডামাডোলে কাছে টানার নিমিত্তে শুধু সরকারী চাকুরিজীবীদের সুবিধা হলেই হবে না। সার্বিকভাবে সব জনগণকে নিয়েই এগুতো হবে। অনেকেই তো বলেন, সরকারী চাকুরিজীবীরা নির্বাচন কালীন সময়ে ভোটের দিনে অনেকেই পোলিং অফিসারসহ বিভিন্ন দ্বায়িত্ব পালন করেন- হয়তো বা সে দিক বিবেচনা করেই ক্ষমতাসীনদের এ সিদ্ধান্ত । জনগণের মুখ তো আর চিরস্থায়ীভাবে আটকানো যায়না, তাই জনগণ এসবও ভাবে। আমার এ লেখা পড়ে সরকারী চাকুরিজীবীরা হয়তো কপাল ভাঁজ করবেন আর দ্বি-মত পোষণ করবেন। সরকারী চাকুরীজীবী ভাই ও আপুরা ভাবেন তো অফিস-আদালত বা প্রতিষ্ঠানে আপনাদের কাছে যারা অসে বা প্রতিদিন অফিসে আপনারা যে প্রজাতন্ত্রের কাজ করেন সেই প্রজা বা জনগণ আজ প্রত্যহিক জীবন-জীবিকায় কেমন অবস্থায় আছে।
তাই সুশীলরা বা বিজ্ঞ-অভিজ্ঞরা এসব বিষয়ে উত্তরণের জন্য মতামত দেন প্রকারান্তে গণতন্ত্র চর্চা তথা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সচলতার উপর। কেননা জনগণই নির্বাচন করবে তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে কে বা কারা বা কোন দল বা জোট রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। কিন্তু জনগণের সে নির্বাচন প্রক্রিয়া অর্থাৎ ভোটাধিকার আজ অনেকটাই পর্যবেসিত। জনগণ আর আগের মতো উৎসব ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে ভোট দিতে পারে না অর্থাৎ নেতা নির্বাচন করতে পারে না। ভোট দিতে গেলে দেখা যায় আগেই ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। ভোটের দিন গোটা দেশ তথা সংশ্লিষ্ট এলাকা অনেকটাই থাকে অবরুদ্ধ। একদিকে জীবন-জীবিকায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে অন্যদিকে ৫ বছর পর পর ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচনও করতে পারছে না জনগণ (তার প্রমাণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচন)। আর জনগণ পছন্দমতো ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন-ই বা করবে কিভাবে ? এই দেশে আজ একজনের ১৫ টি মামলা তুলে নেওয়া হয় রাজনৈতিক হয়রানীমূলক বিবেচনায় আর অন্যজনের ৫ টি মামলা সচল রাখা হয় (যেখানে নথি-পত্রে স্বাক্ষরও না-কি জাল পাওয়া যায়) এবং সেই অন্যজনের বিচারের রায়ের চুড়ান্ত দিন-ক্ষণ ঠিক করা হয়। বিচারের চুড়ান্ত রায় দেওয়ার আগেই ক্ষতাসীনদের পক্ষ থেকে বলা হয় একদিনের জন্য হলেও জেলে যেতে হবে, মামলার রায়ে সাজা নিশ্চিত….. ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব বচন কি মামলার রায়ে প্রভাবিত করে না এটাই জনমনে আজ প্রশ্ন জেগেছে। এসব মামলা বা রায় শুধু এই একজন বা অন্যজনের মধ্যেই নয়। সারা দেশব্যাপি বৃহৎ দুই দল বা জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যেই বিদ্যমান। একদল বা জোটের নেতাকর্মীরা দেদারসে সভা-সমাবেশ, মিছিল-শ্লোগান, গলাবাজি, চাঁদাবজি, দুর্নীতি-লুটপাট করে যাচ্ছে আর অন্যদলের বা জোটের নেতাকর্মীরা প্রতিনয়িত হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং সর্বদাই অপহরণ, গুম, গ্রেফতারের আতংকে জীবন-নির্বাহ করছে। জনগণ আজ মনে মনে ভাবছে অপরাধী কি শুধু এই অন্যদল বা জোটের নেতাকর্মীরাই আর ঐ একদলের বা জোটের নেতাকর্মীরা ধোঁয়া তুলসি পাতা। তাই জনগণ আজ নিজেদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ নিয়ে যেমন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় আছে-তেমনি অবস্থায় নিজেদের ভোটধিকারের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন নিয়ে অনেকটা ঘোলা জলে পড়ে আছে এবং ভিতরে ভিতরে নিঃশব্দে জনগণ গুমরে গুমরে কাঁদছে। কেননা, জনগণের তো আর চাকুরিজীবিদের মতো রাজধানী ঢাকায় গিয়ে আন্দোলন বা অনশন করে দাবি-দাওয়া মেটায়ে নিয়ে আসার সার্বিক সংস্থা বা সংগঠন নেই। তবে জনগণের আশা আছে এবং সেই সাথে পাঁচ বছর পর পর সুযোগও আছে ভোট দিয়ে পছন্দমতো সরকার পরির্বতন করার। আর এর জন্যই জনগণ চায় অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, ভয়-ভীতিহীন, অংশগ্রহণমূলক ভোট প্রদানের পরিবেশে এবং প্রাপ্ত ভোটের সঠিক ফলাফল যথাযথভাবে প্রকাশ-যার মাধ্যমে জনগণ নির্বাচন করবে তাদের সেই সেই নেতা-যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় এমন এমন যুগোপযোগী, আধুনিক, তথ্য-বিজ্ঞান, টেকশই সর্বজনীন জনকল্যাণমূলক সিদ্ধান্ত নিবে-যাতে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকে, মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারে, দেশ ক্রমান্বয়ে টেকশই উন্নতির দিকে যায়-যেখানে আপামর জনসাধারণের জীবন-জীবিকায় বৈষম্য যেন না থাকে এবং জীবন-জীবিকায় জনগণের পিঠ যেন দেওয়ালে না ঠেকে। অর্থাৎ জনগণকে যেন আর দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে ভিতরে ভিতরে গুমরে গুমরে কাঁদতে না হয়।
মোঃ মিজানুর রহমান-লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।