Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

মোহাম্মদ নওশাদুল হক – খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮:  এ কে এম মামুম মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন আমার সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মেধাবী ছাত্র সে। নোট ও কনসালটেন্সির মাধ্যমে পড়াশুনায় আমাকে সহায়তা করতো নিয়মিতই। গুরু বলে সম্বোধন করি তাকে। আসলে গুরুই বটে! ফেইসবুকে বিভিন্ন চমকপ্রদ স্ট্যাটাস পোস্টের মাধ্যমে গুরুগিরি করে যাচ্ছে নিয়মিতই।
রিটেন চাকমা জুনিয়র সহপাঠী। খুব সম্মান করে আমাকে। অরিজিনালি সে গুরুর শিষ্য। কিন্তু আমাদের দুজনকেই গুরু মানে এবং গুরু বলে ডাকে সে।
২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। গুরু তার একটি স্পেশাল স্ট্যাটাসে লিখেছে “আজ রিটেনকে বিড়াল মারাতে হবে! হবেই”। পোস্টটিতে অসংখ্য কমেন্টস। অনেকেই কারণই, ব্যাখ্যা, অসংখ্য প্রশ্ন ইত্যাদি ইত্যাদি! আমার মতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের কনগ্রাসুলেশন কমেন্টস করতে ভুল হওয়ার কথা নয়। সর্বশেষ গুরুর রিপ্লে কমেন্টস “কুমার রিটেন মারা গেল”। স্ট্যাটাসটার মর্মকথা বুঝতে আর কারো দেরি হওয়ার কথা নয় নিশ্চয়ই!

যেকোন সহজ কথাকে একটু ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে প্রকাশ করা মেধাবীদের স্বভাবজাত। তাই আমার গুরু গুরুগিরি দেখাতেই “বাসর রাতে বেড়াল মারতে হয়” প্রচলিত এই উক্তিটিকে ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে এহেন প্রকাশভঙ্গী আর কি ! বৌদ্ধ ধর্মমতে জীব হত্যা মহাপাপ। মানুষের মতো বিড়ালও একটি জীব। তাই বিড়াল হত্যা নিঃসন্দেহে মহাপাপ! প্রতিটি পাপেরই শাস্তি অবধারিত। সকল ধর্মমতেই প্রতিটি পাপের শাস্তি ইহজগৎ ও পরজগৎ দু’জায়গাতেই ভোগ করতে হয়। পরজগতের শাস্তির ধরন ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ ও ধর্মপ্রচারকদের কাছ থেকে ক্ষণে ক্ষণে জানা যায়। কিন্তু ইহজগতেও শাস্তির অংশ বিশেষ পাপির ভোগ করার বিষয়টি সকলের নিকট সমানভাবে প্রতিয়মান হয় না। যারা ইতোমধ্যে সংঘটিত নিজের পাপের বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত হয়, তারাই কেবল ইহকালের শাস্তিটুকুর চিহ্ন টের পায়।

এতক্ষণ যে শাস্তির কথা বলা হলো তা কেবল সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিচার বহির্ভূত শাস্তির কথা। সামাজিক ও রাষ্ট্র আরোপিত শাস্তি অনেকটাই দৃশ্যমান এবং আইন দ্বারা সিদ্ধ। সেটা হতে পারে বিভিন্ন ফরমেটে। তন্মধ্যে তিরস্কার, জরিমানা, মৃত্যুদন্ড কিংবা কারাদ- উল্ল্যেখযোগ্য।ব্যঙ্গ করে হউক, মজা করে হউক আর রূপক অর্থেই হউক সামাজিকভাবে বহুল প্রচলিত বাসর রাতে বিড়াল মারার প্রবাদবাক্যটির মধ্যে অনেক সত্য লুকিয়ে আছে বটে! এই প্রবাদ বাক্যটিকে যে যেভাবেই বিশ্লেষন করুক না কেন, আসল বিষয়টি হলো বিবাহ,স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অতপর…। ব্যাপারটি যখন বিড়াল মারা,সমাধানটা সহজ কিন্তু দর্শনটা মোটেও সহজ নয়। ঋণাত্বক দর্শনে এহেন বিড়াল মারা একটা অদৃশ্য মহাপাপ।

আর এই বিড়াল মারার শাস্তি ব্যাক্তি, সমাজ,রাষ্ট্র কিংবা ধর্ম কর্তৃক নির্ধারিত নয়। কেবলমাত্র ঋণাত্বক দর্শনেই এর শাস্তি নির্ধারিত আছে বলে আমার ধারনা। অলিখিত ও পূর্বনির্ধারিত এহেন হত্যার শাস্তি তিরস্কার, জরিমানা কিংবা মৃত্যুদন্ড নয়। এর একমাত্র শাস্তি কারাদ- । যার মেয়াদ যাবজ্জীবন। দাম্পত্যজীবন নামক এই কারাগারে শাস্তির শুরু হয় বিড়ালের রক্তাক্ত ঘটনা দিয়ে কিন্তু শ্বাস থাকতে আর শেষ নেই। বিড়াল মারার ঘটনার রক্তপাতের ফলে রক্তের ছিটাছাটা থেকে জন্ম নেয়া শাখা-প্রশাখার জন্যে শাস্তির বহুমুখীতা বাড়ে বৈকি কমার সুযোগ নেই। দাম্পত্যজীবন নামক কারাগারের জেল কোডের কোন সীমারেখা নেই। এর নিয়ম কানুন,রীতি নীতি কোনটিই লিখিত নয় অথচ ব্যাপক প্রসারিত ও অর্থপূর্ণ। ে র যেকোনটি বাদ পড়লে শাস্তির মাত্রা অনেকগুন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এতক্ষনে অনেকেই ভাবছেন নিশ্চই, আমি পুরুষদের পক্ষে বলছি! মোটেও না। বাসর রাতে বিড়াল একা একা যদি কেউ মারতে পারতো, তাহলে বিবাহের প্রয়োজন হতো না কারও, কোন কালেও। বিড়াল জাতী কবে যে দুনিয়া থেকে নিঃশেষ হয়ে যেতো! দুনিয়াতে পুরুষ নির্ভর দম্পতি প্রথা যেমনি আছে, তেমনি নারী নির্ভর দম্পতির প্রথাও বিদ্যমান। সুতরাং নারী পুরুষ কাউকে নির্দিষ্ট করে নয়, দাম্পত্যজীবন নামক কারাগারের আসন সংরক্ষিত সকল দম্পতির সকল সদস্যের জন্যই। প্রতিটি জুটিই এই কারাগারের কয়েদী এবং উভয়ের জন্যই শাস্তি পূর্বনির্ধারিত। যে শাস্তি থেকে মুক্তি নেই কোন কয়েদীরই। কারণ, বিড়াল মারা মামলার নেই কোন স্বাক্ষী, নেই কোন উকিল ও আপিল। স্থান কাল ভেদে শাস্তির মাত্রার তারতম্য , এই যা। আর এই শাস্তি সম্পুর্ণ অদৃশ্য ও অবর্ণনীয়। চোখে দেখা কিংবা বলার মতো নয়, শুধু অনুভব করার মতো।

লেখক : প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ ও সমাজকর্মী