খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম চলছে। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজ মঙ্গলবার সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বসবেন। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের বিষয় গুরুত্ব পাবে। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করবেন বলে জানা গেছে।
দেশে বর্তমানে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৫৪টি রাজধানীতে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে আছে নয়টি, সিলেটে চারটি, রাজশাহীতে দুটি ও খুলনায় আছে দুটি। অন্য ২১টি রয়েছে ১৪টি জেলায়। এদের বেশিরভাগের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আইনানুযায়ী পরিচালিত করতে এবার একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে উচ্চশিক্ষা তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এই ধারণাপত্রে উল্লেখিত ১৫ দফা নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা করা হবে।
ইউজিসি বলছে, বর্তমানে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন লাখ ৪২ হাজার ৮৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করে। রাজধানীর আহছানউল্লাহ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির স্থায়ী সনদ রয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে সিটি ইউনিভার্সিটি স্থায়ী সনদ নিয়েছে। বাকিগুলো অস্থায়ী সনদ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সাময়িক সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে আগ্রহ নেই।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিওটি সদস্যদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মতদ্বৈততার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাণিজ্য ও অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। কমিশন অনুমোদিত আসন সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে। কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে একাধিক প্রোগ্রাম পরিচালনা করে।
মাত্র ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ অডিট রিপোর্ট আছে। সাধারণ তহবিলের অর্থ থেকে বিওটি সদস্যদের আর্থিক সুবিধা ও অর্থ আত্মসাৎ করে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় আইনানুযায়ী ছয় শতাংশ (তিন শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, তিন শতাংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ও মেধাবী) শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ দেয় না। আইনানুযায়ী শিক্ষার্থী ফি নির্ধারণ করে না।
কমিশনের তথ্য মতে, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে উদ্যোগ নেই। ৯৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটিতে উপাচার্য, ২১টিতে উপ-উপাচার্য, ৪৩টিতে কোষাধ্যক্ষ রয়েছে। ২৩টিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ কেউই নেই। বিধি সম্মত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় না। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
সিন্ডিকেট সভা করায় অনিয়ম, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধিমালা মানা হয় না। সরকার ও ইউজিসি কর্তৃক মনোনীত সদস্যদের সিন্ডিকেট সভায় ডাকা হয় না। এ ছাড়াও বিওটি, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির সভা নিয়মিত হয় না। আইনানুযায়ী কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অনুমোদিত স্ট্যাটিউটস নেই। এ ছাড়া চাকরির প্রবিধানমালাও নেই। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সংরক্ষিত তহবিলের বিপরীতে ঋণ নিয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় টাকা তুলে নিয়েছে।
মান সম্পন্ন ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরি নেই। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যায়নে লাইব্রেরি ও গবেষণাগারের মান সন্তোষজনক নয়। গবেষণাগারের অনীহা, কর্ম অর্থ ব্যয়, গত বছর ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাখাতে কোনো অর্থ বরাদ্দ করেনি।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উপ-পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জেসমিন পারভিন বলেন, উপাচার্যদের বৈঠকের বিষয়ে একটি ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোর নানা অনিয়ম সেখানে তুলে ধরা হয়েছে বলে তিনি জানান। মানবকণ্ঠ