খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় টানা সাতটি বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত তথ্য বাংলা ট্রিবিউনের হাতে রয়েছে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ৩৫ জন। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে একদিকে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পদ্ধতি, অন্যদিকে নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে অপকর্মটি অব্যাহত রেখেছে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র। প্রশ্নফাঁসের প্রধান মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ভাইবারসহ বিভিন্ন অ্যাপ।
এইসব অ্যাপ মোবাইল ফোনে কোনও অকেজো সিম কার্ড দিয়ে ব্যবহার করা যায় না বলেই সচল সিম দিয়ে অ্যাকটিভেট করতে হয়। সম্প্রতি প্রশ্নফাঁসের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের লোকাল নম্বরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নম্বরও যুক্ত আছে। প্রায় প্রতিটি গ্রুপেই এই নম্বরগুলো দেখা যায়। বিদেশি অপারেটরদের এসব সিম রোমিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই নম্বরগুলো প্রতিটি গ্রুপে যুক্ত থেকে প্রশ্ন আদান-প্রদান তদারকি করে থাকে। স্থানীয় নম্বর থেকে প্রশ্ন সরবরাহ এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন থাকে বাংলাদেশের স্থানীয় নম্বরগুলো।
বিভিন্ন গ্রুপ ঘেঁটে যে কয়টি বিদেশি নম্বর পাওয়া যায়, তার প্রায় সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বলে জানা যায়। এরমধ্যে আবার একই নম্বর দিয়ে একেক পরীক্ষার জন্য গ্রুপ খোলা হয়। প্রযুক্তিবিদদের মতে, অপরাধ সংগঠনের জন্য অনেকেই বেছে নেয় বিদেশি সিম কার্ড। তবে দেশে বসে বিদেশি সিম কার্ড ব্যবহার করলেও অপরাধী খুঁজে বের করা সহজ বলে মনে জানান তারা।
প্রযুক্তিবিদ শাহাদাত হোসেন মনে করেন, বিদেশি সিম কার্ড দেশে ব্যবহার করা মানে দেশের কোনও না কোনও মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তার নেটওয়ার্ক। এক্ষেত্রে স্থানীয় কোনও নম্বরে ফোন দেওয়া হলে বিদেশি নম্বর কিংবা স্থানীয় নম্বর মোবাইল ফোনে দেখা যেতে পারে। তিনি জানান, বিদেশি সিম কার্ড ব্যবহার করে অপরাধ করলে তাকে ধরতে মোবাইল ফোন অপারেটরের সাহায্য নিতে হবে। কারণ, সেই সিম কার্ড কোনও না কোনও নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে সেই বিদেশি সিম কার্ডের সিরিয়াল নম্বর সিস্টেমে থাকে। তাই বের করা সহজ।
চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের সঙ্গে জড়িত ভিআইপি নম্বরসহ ৩০০ মোবাইল ও টেলিফোন নম্বর শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব মোবাইল ফোন ও টেলিফোন নম্বর ব্যবহারকারীর মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়াও অভিভাবক এবং মেডিক্যাল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রয়েছে। এই নম্বরগুলো ধরে পুলিশ গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে। এরইমধ্যে শনাক্ত হওয়া নম্বরগুলো বন্ধ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটি’র প্রথম সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ওই নম্বরগুলোর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নম্বরও পাওয়া গেছে। তারা আবার খোঁজ নিচ্ছেন,কেন তাদের নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরও জানান,যাদের নম্বর বন্ধ হয়েছে,তারা অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতেও চাচ্ছেন। এরই মধ্যে শনাক্ত হওয়া নম্বরের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। ১৪ জনকে আটকও করা হয়েছে। এদের সবার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) সূত্রে জানা যায়, প্রশ্নফাঁস রোধে কাজ করছে সরকারের কয়েকটি সংস্থা। এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফোন নম্বর ধরে ধরে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিদেশি নম্বর ট্রেস করাও সম্ভব, তবে একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
এ বিষয়ে বিটিআরসির সচিব সারওয়ার আলম বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত নম্বরগুলো খুঁজে বের করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাইরের নম্বরগুলো খুঁজে বের করা একটু কঠিন কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। আবার ফেক নম্বর কিংবা ক্লোন নম্বরও হতে পারে। এই নম্বরগুলোকে ব্লক করা কোনও ব্যাপার নয়। এই নম্বরগুলোর গ্রাহকের তথ্যও বের করা সম্ভব। এই কারণেই আমাদের বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ করা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে আমরা কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি। আমাদের কাছে সহায়তা যা চাওয়া হবে আমরা দেবো।’ বাংলা ট্রিবিউন