খােলা বাজার২৪। শুক্রবার, ০২ মার্চ , ২০১৮:(মিজানুর রহমান লালমনিরহাট প্রতিনিধি) তিস্তা নদীত পানি না থাকায় তিস্তা নদী মরি গেইছে(গেছে)। এলা(এখন) মাছ ও ধরা হয় না। ছোয়া পোয়া গুলা নিয়া সমস্যায় পরি গেছি। কাজ কর্ম নাই কি আর করি খাই। আক্ষেপ আর কষ্টের কথাগুলো হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা পাড়ের এলাকার জেলে মিজানুর মিয়ার।
তিস্তা নদী মরি যাওয়াতে হামা গুলা শুষ্ক মৌসুমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারি না। হামা আবাদ না করলে খামো(খাবো) কি। এই শংকার কথাগুলো বলছিলেন হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা পাড়ের এলাকার কৃষক নুরনবী সরকার।
লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদী শুকিয়ে এখন ধূ-ধূ বালু চরে পরিণত হয়েছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে অঞ্চলের পরিবেশ ও গোটা কৃষি সেক্টরে। পানি না থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচ কাজেও মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে।
মৃতপ্রায় তিস্তা মরা খালে পরিণত হওয়ায় ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রায় ১ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে এটি এ অঞ্চলের কৃষকদের কোন কাজে লাগছেনা। আর কৃষকদের সাথে সাথে জেলে পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর বন্যা মৌসুমে অধিক পরিমাণ বালু-পলি জমায় এবং তিস্তা নদী নিয়মিত ড্রেজিং না করায় এবং ভারতের পানি বন্টন চুক্তি লঙ্ঘন করায় প্রায় প্রতি বছরেই তিস্তা নদীতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ কারণে তারা শুষ্ক মৌসুমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারেন না। যার কারণে সংসার নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়।
অপরদিকে, নদী চরাঞ্চলের শত শত জেলের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। তিস্তা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের রুজির পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামী ৮থেকে ১০ বছরেই তিস্তা নদী মরাখালে পরিণত হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় পরিবেশবিদরা।
তাদের মতে, তিস্তা নদীর উজানে ভারতের গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ করায় তিস্তা নদী ক্রমেই তার নাব্যতা হারিয়ে মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। সেই সাথে নদী লাগোয়া লাখ লাখ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে হাহাকার অবস্থা।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যারাজ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রতি বছর এ মৌসুমে তিস্তা নদীর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে নদীতে অল্প পরিমাণ পানি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপর প্রায় ১৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প ‘তিস্তা ব্যারাজ’ নির্মাণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে উত্তরের ৩৫টি উপজেলার প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমি ইরি-বোরো মৌসুমে সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
কিন্তু তিস্তা ব্যারাজের ১শ কি.মি. উজানে ভারত গজলডোবায় এক বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকে দেওয়ার কারণে গোটা প্রকল্পে ভাটা পড়ে। পরে মাত্র ৬৫ হাজার হেক্টর জমি নিয়ে সেচ প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তাও পানির অভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমি ইরি-বোরো মৌসুমে পতিত থাকে। শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ যেখানে ২০ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন সেখানে বাংলাদেশ পায় মাত্র ৪শ’ কিউসেক।
Attachments area