রাজেকুজ্জামান রতন – খােলা বাজার২৪। রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ : বাংলাদেশের জনগণের জীবন যাপনে বহুধরণের সমস্যা আছে। সেটা আমরা প্রতিদিন দেখছি। কিন্তু জীবন যাপনের সমস্যার চাইতেও বড় সমস্যা হচ্ছে জীবন বাচাঁনোর সমস্যা। যেকারণে একটি সময়ে এসে আমরা মনে করছি, আমরা কি স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তাও পাবো না? গত কয়েক দিনের ঘটনাই শুধু নয়, বাংলাদেশে র্দীঘ কয়েক মাস ধরেই দেখছি যে, গড়ে প্রতিদিন আমাদের দেশে ১১ জন করে মানুষ বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে নিহত হচ্ছে। সাথে সাথে গত কয়েকদিনের সংবাদপত্রে আমরা যা দেখেছি তার মধ্যে আছে, বাসা ভাড়ার নামে ঘরে ঢুকে বাড়িওয়ালাকে হত্যা, নিরাপত্তা প্রহরীকে হত্যা, মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা, টাকা ছিনতাই করার সময় গুলি করে হত্যা। এমনকি আমাদের রাজধানীতে দলবদ্ধভাবে হাটার সময় নারীদের কে যৌন নির্যাতন করা, এধরণের কাজগুলো দেখে মনে হচ্ছে যে আমাদের নিজেদের জীবনের কী কোন সম্মান, সম্ভ্রম, নিরাপত্তা সবকিছুই হুমকির মুখে পড়ে গেলো? ফলে আমরা মনে করি, এটি একটি ভীতিকর অবস্থা।
কারণ, মানুষ এখন পথ চলতে ভয় পায়, ঘরে থাকতে ভয় পায়। তার জীবন ধারণ ও যাপন দুইটিই যদি হুমকির মধ্যে পড়ে যায়, তাহলে আমরা কি বুঝতে পারি? আমরা এটি থেকে বুঝতে পারি যে, আমরা এখন একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে আছি। আমরা এব্যাপারে সরকারের পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতির চাইতেও সমাজের বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য করে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে বলবো। পরিসংখ্যান দেখিয়ে যদি আবার আমাদের সরকার বলে, আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চাইতে অনেক ভাল আছি কিংবা আমাদের দেশে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার কম তাহলে আমাদেরকে এধরনের কথা বলে আশ্বস্ত করা যাবে না।
মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি। তা না হলে আতঙ্কের পরিবেশই বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক কাজের প্রবণতা তৈরি হয়। একটি দিকে আমাদের দেশে মাদক ব্যবসা, আরেক দিকে সন্ত্রাস, আরেক দিকে জীবন যাপনের ব্যয়ের ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী প্রভাব, শিক্ষার মানের ক্রমাগত নি¤œমুখী প্রভাব থাকা সত্ত্বেও যখন মানুষের নিজের জীবন নিয়ে বেচেঁ থাকার নিরাপত্তাটাও থাকে না, তখন বেচেঁ থাকার ইচ্ছাও অনেকের থাকে না।
পরিচিতি : কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাসদ।