Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলা বাজার ২৪,শনিবার,০৩ নভেম্বর ২০১৮ঃ সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া সাজা এবং মামলা দুটোকে অস্তিত্বহীন বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এ মামলার নথি লেখার জন্য বিচারকেরও বিচার হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং চ্যারিটেবল দুটি মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যখন সাজা দেওয়া হয়েছে, তখন একজন আইনজ্ঞ হিসেবে আমি বলেছিলাম— যে কারণে, যেভাবে নথি তাকে লিখতে হয়েছে এর জন্য একদিন বিচারকেরও বিচার হতে পারে। এটা ফেলে দেওয়ার কথা নয়। বিএনপির নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার এই দুটি মামলা সম্পর্কে যা বলেছেন, তাদের কথা সম্পূর্ণ সত্য এবং তা আমি সমর্থন করি। এই দুই মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা।

বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।

বিএনপি-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার বিষয়ে এখনও পরিষ্কার কোনো বার্তা দিতে নারাজ কাদের সিদ্দিকী। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক বলেন, ‘যখন পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সময় আসবে, দেশের মানুষের কল্যাণে আমরা সেটা করবো। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।’ বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি এও বলেন, ‘সরকার চায় না আমি ভোটে দাঁড়াই।’

প্রশ্ন: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপকে কীভাবে দেখছেন?

কাদের সিদ্দিকী: ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু করে আমি মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অফিসের সামনে দুটি দাবিতে ফুটপাতে ৬৪ দিন অবস্থান করেছিলাম। সারা দেশে ছিলাম ৩০৮ দিন । ওই দাবি দু’টি ছিল– প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি আলোচনায় বসে দেশকে বাঁচান। দ্বিতীয়ত, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আপনি অবরোধ তুলে নিন। তাদের দুজনের কেউ-ই তা করেননি। তারপর বিএনপি অবরোধ প্রত্যাহারের সুযোগ পায়নি, দেশের মানুষই তা প্রত্যাহার করে নেয়।

শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসেছেন। এটা রাজনীতির জন্য শুভ লক্ষণ। তবে খারাপ প্রবণতা হলো— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যাকে আমি ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করি, তিনি অনেক কথা বলেন রাস্তাঘাটে। উনি গতকালও (বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর) যেসব কথা বলেছেন, আজকে তার বিপরীত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও বলেছি— আপনি প্রধানমন্ত্রী, সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন। তাতে সমাজে একটা আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে। তিনি ড. কামাল হোসেনকে গালাগালি করেছেন। ঐক্যফ্রন্টকে ছাল-বাকলও বলা হয়েছে। বি. চৌধুরীকে (এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী) বদু কাকাও বলেছিলেন। এগুলো রাস্তার ধারের চায়ের দোকানের লোকের মুখে শোভা পায়। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের ব্যক্তির মুখে শোভা পায় না। এই থেকেও যদি আমরা শিখি, তাহলেও ভালো হবে। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।

প্রশ্ন: আপনি কি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন?

কাদের সিদ্দিকী: সাংবাদিকদের ইচ্ছা— আমি কোনো না কোনো একদিকে যাই। আপনিও মনে করেছেন, আমি কোনো দিকে যাবো। কেন? বাংলাদেশে তো ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। আমাদেরও নিবন্ধন আছে। আমরা কি নিজেদের নিয়ে চিন্তা করতে পারি না? সংবিধান প্রণেতা হিসেবে ড. কামাল হোসেনের কাছে গিয়েছিলাম আমি। ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর কাছেও গিয়েছি। জাতীয় স্বার্থে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। আমি এখনও আমার দল নিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তবে যখন পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সময় আসবে, দেশের মানুষের কল্যাণে আমরা সেটা করবো। একটা কথা জানবেন– রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

ড. কামাল হোসেন গত ৩১ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকীর বাসায় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। ওই দিন কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশে একটি অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য ড. কামাল হোসেন কাজ করছেন। তিনি আশা করেন, ঐক্যফ্রন্ট দেশের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে।’ আগামী ৩ নভেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিতব্য কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক আলোচনা সভায় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা অংশ নেবেন। সেখানে তিনি (কাদের সিদ্দিকী) ফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান নিয়ে কথা বলবেন।

প্রশ্ন: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ৭ দফাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

কাদের সিদ্দিকী: আমার মনে হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যেমন দুযোর্গ ও অন্ধকারের দিক থেকে উজ্জ্বল হয়ে আছে। তেমনি ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর সম্ভবনার দিক থেকে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এর আগে যখন যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট গঠনের সময় আমরা জড়িত ছিলাম। ড. কামাল হোসেন তখন দেশের বাইরে ছিলেন বলে আমি সক্রিয় হয়নি। কিন্তু যুক্তফ্রন্টে আমার সমর্থন ছিল। এরপর যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়, তখন সেটাকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা কখনও শয়তানের আখড়া, খুনিদের জোটসহ নানান কিছু বলেছেন। আবার স্বাগতও জানানো হলো। এটা ভালো না। রাজনীতিতে কেউ একত্র হতে চাইলে তাকে স্বাগত জানানো ভালো। তারপর তার কর্মকাণ্ড অপরিচ্ছন্ন হলে সমালোচনা করা যেতে পারে। যদি সত্যি লজ্জাবোধ থাকতো, তাহলে যুক্তফ্রন্টের কাছে সরকারের ক্ষমা চেয়ে সংলাপে বসা উচিত ছিল— একসময় আপনাদের যা বলেছিলাম, তা আমাদের দুর্বলতা ছিল। এখন ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এখন আপনাদের সঙ্গে দেশের কল্যাণে সবাই মিলে কাজ করার জন্য সংলাপে বসেছি।’

প্রশ্ন: বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। আপনি কি মনে করেন, এই কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সক্ষম?

কাদের সিদ্দিকী: একটা জিনিস হলো মানুষের যোগ্যতা, ক্ষমতা, দক্ষতাকে বিচার করতে হয়। এই নির্বাচন কমিশনে যত জন কশিনার আছেন, তাদের যে দক্ষতা ও যোগ্যতা আছে বলে আমার মনে হয়, সে তুলনায় তারা ব্যর্থ।

প্রশ্ন: দুই মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজাকে কীভাবে দেখছেন? বিএনপির নেতারা বলেছেন, মিথ্যা মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।

কাদের সিদ্দিকী: আমি বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ করি না। মানুষের যখন লোভ-লালসা থাকে, সেই বয়স আমি পার করে এসেছি। আমি সবসময় স্রোতের উজানে আমার জীবন পরিচালনা করে আসছি। বেগম খালেদা জিয়াকে যখন সাজা দেওয়া হয়েছে, তখন একজন আইনজ্ঞ হিসেবে আমি বলেছিলাম— যে কারণে, যেভাবে নথি তাকে লিখতে হয়েছে এর জন্য একদিন বিচারকেরও বিচার হতে পারে। এটা ফেলে দেওয়ার কথা নয়। বিএনপির নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার এই দুটি মামলা সম্পর্কে যা বলেছেন, তাদের কথা সম্পূর্ণ সত্য এবং তা আমি সমর্থন করি। এই দুই মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা।

প্রশ্ন: বিএনপি যুক্তফ্রন্টের শরিক দল। আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক হচ্ছে জামায়াত। জোটের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে বি. চৌধুরী ঐক্যফ্রন্টে যাননি। অথচ এই জোটেরই শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

কাদের সিদ্দিকী: ওনাকে জামায়াত প্রেসিডেন্ট করেছিল নাকি? এত বছর ওনারা জামায়াতের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করেন নাই? এখন এই কথাটা বললে মানুষ সেইভাবে নেবে না। এটাকে প্রধান শর্ত হিসেবে মানুষ গ্রহণ করবে না। মানুষ ভাববে যে, ভেতরের কোনো কথা বা পর্দার আড়ালে কোনো কিছু আছে। আর জামায়াত এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো বিষয় নয়। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি একটা সুন্দর রাস্তা বানাবেন। সেই রাস্তায় শুধু আপনারা চলবেন, এটা কিন্তু কথা না। রাস্তা থাকলে সবাই চলাচল করবে।

প্রশ্ন: সরকারের বর্তমান ভূমিকায় আপনি কি মনে করেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে?

কাদের সিদ্দিকী: নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া, বিশ্বাসযোগ্য করা সবার চেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কারণ, তিনি এই বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মহিলা স্বৈরাচার— এই উপাধি ধারণ করবেন, নাকি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে দোষে-গুণে একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা, যিনি মানুষকে ভালোবাসেন, এটা প্রমাণ করবেন। যদি তা করতে হয়, নির্বাচন না হলেও যদি মানুষ বলে যে, আমি ভোট দিয়েছি, তাহলে তিনি এই দেশে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আর নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলেও দেশের মানুষ যদি বলে— আমি ভোট দিতে পারি নাই, তাহলে উনি সারা বিশ্বের বাদশা হতে পারেন, কিন্তু ইতিহাসের পাতায় তিনি কোনো গৌরব পাবেন না।

প্রশ্ন: আপনি কি নির্বাচনে অংশ নেবেন?

কাদের সিদ্দিকী: সরকার চায় না, আমি ভোটে দাঁড়াই। যদি সরকার আমার ভোটে দাঁড়ানোর পথে বাধা সৃষ্টি না করতো, আমি ১০ বছর ধরে আমাদের অতি সামান্য টাকা একবারেই ব্যাংকে দিয়ে দিতে চেয়েছি, সেটা গ্রহণ না করে একবার পুনঃতফসিলের কথা বলে, আবার ডিক্লাসিফাই না করে ক্লাসিফায়েড করেছে। এটা নিয়ে কারো কাছে কান্নাকাটি করতে পারবো না। নিয়ম মতো যদি ভোটে দাঁড়াবার যোগ্যতা থাকে, তাহলে দাঁড়াবো। আর যদি আইনের চোখে না থাকে, তাহলে ভোটে দাঁড়াবো না। সৌজন্যে : বাংলা ট্রিবিউন