খােলাবাজার ২৪,সোমবার ,১৫জুলাই,২০১৯ঃ আব্দুল আউয়াল, বানারীপাড়া: বানারীপাড়ার ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী মো. সুলতান হোসেন আম আর থাই পেয়ারাসহ বিভিন্ন প্রকার ফল চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন। নতুন যোগ করেছেন উচ্চ ঘনত্বে (ইওঙঋখঙঈ ঝওঝঞঊগ ঋওঝঐ ঋঅজগ ) মাছ চাষ। চ্যানেল আই য়ে সাইখ সিরাজের বাওকুল চাষের প্রতিবেদন দেখে একান্ত সখের বসে বাওকুল চাষের মধ্য দিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে প্রবেশ করলেও এখন তিনি ফল চাষের রোল মডেলে পরিনত হয়েছেন। প্রথমে নিজের সামান্য জমিতে কুল চাষ করে ভাল ফল পেয়ে অন্যের জমি লীজ নিয়ে বানিজ্যিক ভাবেই শুরু করেছিলেন বাওকুল চাষ। পরবর্তিতে জমির পরিমান বৃদ্ধি কওে একই সঙ্গে আম ও থাই পেয়ারার চাষ শুরু করেন। আম ও পেয়ারায় লাভ বেশি হওয়ায় বাও কুলের চাষ ছেড়ে আম আর পেয়ারয়ই রয়ে গেছেন তিনি। বর্তমানে তিনটি বাগানে মোট ১৮ একর ভুমিতে রয়েছে আম, থাই পেয়ারা একই সাথে সংযুক্ত করেছেন মাল্টা, লেবু, লিচু, জামরুল(লকট) চাষ। এ বছর ২৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারনা করছেন। তার টার্গেট আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে তিনি কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষমাত্রা। তার ফার্মের নাম দিয়েছেন ‘এস ইসলাম এ্যাগ্রো ফার্ম’। বিষ মুক্ত ফল বিধায় তার বাগানের আম ও পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বরিশাল শহরে সুলতানের থাই পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বানারীপাড়া উপজেলার পাশাপাশি স্বরূপকাঠি, উজিরপুর, ঝালকাঠি এলাকায় তার বাগানের ফলই বেশি চলে।
বরিশাল জেলার বানারীপাড়া পৌর শহরের নূরমোহাম্মদ ফকিরের ছেলে সুলতান হোসেন বরিশালের পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা নিয়ে চাকুরী না করে পরিবারের ব্যবসা শুরু করেন। একই সাথে তিনি উপজেলা পর্যায়ে ঠিকাদারী ও করতেন। ২০০৯ সালে টিভি চ্যানেলে সাইখ সিরাজের একটি প্রতিবেদন দেখে বাওকুল চাষের পরিকল্পনা করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (ময়মনসিংহ) জার্ম প্লাজমা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিমের সহায়তায় চাষাবাদ শুরু করেন। একান্ত সখের বসে কৃষি কাজে নাম লেখালেও আজ তিনি একজন সফল কৃষি খামারী। বানারীপাড়া পৌর শহর থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে উপজেলার শেষ প্রান্তে বানারীপাড়া বরিশাল সড়কের উত্তর পাশেই কৃষ্ণপুর গ্রামে পাশাপাশি ১২ একর ভূমিতে রয়েছে দুটি বাগান এবং ওই এলাকারই পাশে উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম নারায়নপুর গ্রামে ৬ একরের ওপর একটি বাগান। তার ওই তিনটি বাগানে ১ হাজার আম, দেড় হাজার থাই পেয়ারা, অন্যান্য ফলের গাছ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ফলের গাছ রয়েছে। একাজে সার্বক্ষনিক দায়ীত্ব পালন করেন তার ছেলে সাইফুল ইসলাম। প্রতিটি বাগানে ২ দুই জন করে ৬ জন স্থায়ী কর্মচারী। এছাড়া দৈনিক মজুরী হিসেবে কাজ করেন আরো ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক। স্থায়ী শ্রমিক কাওসার ও হানিফ খা জানান তারা মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। স্থায়ী ভাবে কাজ করে তারাও বেশ ভালই আছেন বলে জানান।
কৃষ্ণপুরের ১ নম্বর ফার্মে কথা হয় ফল চাষী মো. সুলতান হোসেনের সঙ্গে, এসময় তিনি নতুন পদ্ধতিতে মাছ চাষের অবস্থা পর্যবেক্ষন করছিলেন। প্রথমেই তিনি মাছ চাষের বিষয়টি সম্পর্কে জানালেন, মাছ ধরে দেখালেন। সম্প্রতি তিনি ইন্টার্নেটের মাধ্যমে উচ্চ ঘনত্বে (ইওঙঋখঙঈ ঝওঝঞঊগ ঋওঝঐ ঋঅজগ ) মাছ চাষ পদ্ধতি দেখে তা শুরু করেছেন। ২০ দিনে রেনুপোনা থেকে বেশ বড় হয়ে ওঠেছে সিং, কৈ ও তেলাপিয়া মাছ। ১২ ফুট বাই ১৫ ফুট আয়তনের দু’টি চৌবাচ্চায় ১০ হাজার রেনু ছেড়েছেন। তিন মাসের মধ্যেই বেচার উপযোগী হবে ওইসব মাছ। এরপর বাগানে ঘুরিয়ে দেখালেন। এবং বললেন ইতিবৃত্ত। সব মিলিয়ে একটি সফল খামার গড়ে তুলেছেন সুলতান হোসেন। সুলতান হোসেন জানান তার এ্যাগ্রো বিজনেস পরিচালনায় কৃষি বিভাগসহ সকলের সহযোগীতা পাচ্ছেন। অনেকেই তার কাছে বাগান করার পরামর্শ নিতে আসেন। সকলকে তিনি উৎসাহিত করার পাশাপাশি সহায়তা করেন। তিনি বলেন বিষ বা কেমিক্যাল মেশানোর ফলে মানুষ ফল খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। বর্তমানে স্থানীয় ভাবে বাগান সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ আগ্রহভরে ফল কিনছেন। বিষমুক্ত ফল কেনার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা ফল কিনতে আসেন।
বানারীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. অলিউল আলম বলেন, সুলতানর সাহেব একজন সফল ফল চাষী। ফলদবাগান পরিচর্যায় তিনি অত্যন্ত পারদর্শী। তার বাগান দেখে উপজেলায় আরো ছোট খাটো বাগান সৃজিত হচ্ছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব সহায়তা দেওয়ার জন্য এ দফতরের সকলেই সচেষ্ট রয়েছেন।