হুসেইন খোলাবাজার ২৪,সোমবার,২৯জুলাই,২০১৯ঃ মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার ভাই জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলেও তা মানতে রাজি ছিলেন না জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। গত ২৩ জুলাই জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার প্যাডে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রওশন এরশাদ জানিয়েছিলেন, জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ঘোষণা করার আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে জি এম কাদের এখনো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই আছেন।
তবে তার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, পিছু হটেছেন রওশন এরশাদ। অবশেষে তিনি জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে মানতে রাজী। তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে রওশনের এরশাদের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এতে জিএম কাদেরও রাজী।
জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আমি আগেও বলেছি ভাবির (রওশন) সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। উনি আমাকে ছোটবেলা থেকে সন্তানের মত লালন পালন করেছেন। উনি আমার মাথার উপর বটগাছের ছায়ার মত থাকবেন। উনি যেভাবে আমাকে দিক-নির্দেশনা দেবেন পার্টি ঠিক সেভাবেই পরিচালিত হবে।
সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিরোধী দলের উপনেতার রওশনের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, আমরা জিএম কাদেরের বিপক্ষে নই। আমরা সবাই রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরসহ সবাইকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ম্যাডামের (রওশন) এ বয়সে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। উনি চান সম্মান। জিএম কাদের তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে দল পরিচালনা করবেন এটাই ম্যাডামসহ সকলের প্রত্যাশা।
জানা যায়, ‘জিএম কাদের পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান নন’ এই মর্মে গত ২২ জুলাই গভীর রাতে রওশন এরশাদসহ পার্টির দশজন প্রেসিডিয়াম ও এমপির নামে একটি বিবৃতি দেন। সেই বিবৃতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা ও বিতর্ক হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেই বিবৃতি দেয়ার পক্ষে ছিলেন না রওশন এরশাদ। এরশাদকে আইসিইউতে রেখে যারা মন্ত্রী হওয়ার জন্য দৌঁড়ঝাপ করে ব্যর্থ হন তারা রওশনকে অনেকটা ভূল বুঝিয়ে ও কাকুতি-মিনতি করে ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করান।
উক্ত বিবৃতিতে নাম থাকা ৯ জনের মধ্যে ৯জনই জানান তারা স্বাক্ষর করিনি। তবে তারা বলেন, রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের সমন্বয়েই দল পরিচালিত হোক। এ ক্ষেত্রে জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান ও রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করবেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। তার চার দিনের মাথায় এক সংবাদ সম্মেলনে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নাম ঘোষণা করা হয়। এরশাদের স্ত্রী রওশন ওই সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন না।
দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সেদিন ওই ঘোষণা দিয়ে বলেন, মৃত্যুর আগে এরশাদই এ সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। এরপর গত শনিবার এরশাদের বড় ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে গুলশান-২ নম্বরে ভাবি রওশনের বাসায় যান জি এম কাদের। রওশন সেদিন পার্টির নতুন চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে আশির্বাদ করেন বলে দলের প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় সাংবাদিকদের জানান।