
আমার জন্মদিন কতজন আমাদের বাসায় আসবে, চাচ্চু-ফুফু-খালা মনি আমার ভাইয়া আমাকে নতুন নতুন জামা কিনে দিয়েছে, আর আমার বাবা না আমাকে কিছু কিনে দেয়নি। সে আমার কাছে আসতেই চায় না কেন ? বাবা কবে আসবে জানো কি তুমি ? আমি এখন স্কুলে যাই – বড় ওয়ানে পড়ি। স্কুলের বন্ধুরা বলে তোমার বাবা কই ? তোমার বাবাকে তো একদিনও স্কুলে তোমার সাথে দেখলাম না। তখন আমি কিছু বলতে পারি না।
আমার মা হাত ধরে নিয়ে আসে ও নিয়ে যায় আমাকে। অনেকদিন বলেছি বাবা কই আম্মু ? কিছু বলেনা। তোমরা বলো না আমার বাবা কোথায়?
এবারের জন্মদিনে আমি আমার বাবার সাথে ঘুরতে যেতে চাই, তাকে কি এনে দিতে পারবে ?
এভাবেই জন্মদিনের আগের দিন ২৩ আগস্ট শুক্রবার প্রথম শ্রেণীতে পড়া সুমাইয়া অপ্সরী তার মনের কথাগুলো বলছিল। কাল সুমাইয়া ৮ বছরে পা রাখবে। সে এখনো জানেনা চার বছর আগে একুশে আগস্ট ২০১৫ সালের তার বাবা গুম হয়ে গেছে। সুমাইয়া অপ্সরীর বাবা কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ। একই দিনে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাভলুও গুম হয়েছিল। লাভলু ফিরে আসলেও আজও সাজ্জাদ হোসেন সবুজ ফিরে আসে নাই।
এবার সবুজের বড় ছেলে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছে। সবুজের বৃদ্ধ মা-বাবার চোখ শুকিয়ে গেছে, এখন আর চোখের পানি আসে না। প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকে এই বুঝি সবুজ আসবে। কিন্তু আজও সবুজ আসেনি। কেউ জানেনা সবুজ কবে আসবে ? অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না।
ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে ৭বার , ঢাকাতেও একবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছে সবুজের পরিবার। সাংবাদিক সম্মেলনে ছোট্ট শিশু সুমাইয়া বলেছে আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দেন। তার সেই আহ্বান আজও বাস্তবায়ন হয় নাই। সবুজকে কেউ ফিরিয়ে দেয় নাই।
প্রতিবছরই ফিরে আসে সুমাইয়ার জন্মদিন। কত মানুষ আসে, সবাই দোয়া করে। কিন্তু বাবা ফিরে আসে না। সুমাইয়া চায় বাবাকে। তাহলেই জন্মদিনে সবচাইতে বড় পাওয়া হবে। সে আবেদন করে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আপনারা আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমরাও চাই আইন-শৃংখলা বাহিনী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুমাইয়ার বাবাকে ফিরিয়ে দিয়ে জন্মদিনের সেরা উপহার দিবে সুমাইয়াকে।