Tue. Oct 14th, 2025
Advertisements

নিজের সম্পর্কে এই কথাগুলো বলছিলেন পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নোমান সৈকত। ২০০৯ সালে ঢাকা পলিটেকনিক থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করেন নোমান সৈকত। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৪ সালে শুরু করেন নিজের সাইকেল তৈরির কারখানা। গ্রাহকদের চাহিদা মতো পছন্দের ডিজাইনের বাইসাইকেল তৈরি করে দেন তিনি। ২০১৫ সালে পাটের বাইসাইকেল বানানোর কাজ শুরু করেন তিনি।

সাইকেলের ফ্রেম বানাতে হালকা এবং টেকসই বস্তু খুঁজতে গিয়ে পাটের আঁশ দিয়ে বাইসাইকেল বানানোর ধারণাটা মাথায় আসে তার। চার বছরের চেষ্টায় সফল হন তিনি। সৈকত জানান, ‘শুরুটা অনেক কঠিন ছিলো, ঘনত্ব কি রকম হবে, কোন আঁশটা আমি ব্যবহার করবো, হবে কিনা, কাগজে-কলমে জানতাম যে হবে, কিন্তু করার সময় আমি আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলাম না।’

বাইসাইকেল তৈরির পদ্ধতির ব্যাপারে সৈকত বলেন, ‘অনেক শক্ত পাটের তৈরি পাইপ যা দিয়ে আমি বাইসাইকেল বানাই। একটা স্টিলের পাইপের উপরে পাটের কাপড় প্যাচানো হয় রেজিন আঠা সঙ্গে দিয়ে। শুকানোর পরে এটাকে খোলা হলে একটা আকার চলে আসে। এরপর, এটাকে কেটে আপনার প্রয়োজন অনুসারে যেভাবে দরকার ব্যবহার করতে পারেন। আপাতত শুধু ফ্রেম পাট দিয়ে তৈরি করা। বানানোর পদ্ধতি যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে হ্যান্ডেলবার, ফর্ক, রীম, স্যাডেল, স্ট্যান্ড এগুলো পাট দিয়ে বানানো সম্ভব। তবে, বানানো সম্ভব না টায়ার, টিউব ও চেইন।’

সৈকত আরও বলেন, ‘আপাতত কোন মেশিন নাই, হাতেই বানাচ্ছি। একটা ফ্রেম যদি আমি ডিজাইন প্রসেস থেকে চিন্তা করি- ডিজাইন প্রসেস, জিনিসপত্র কেনা এসব মিলিয়ে এক সপ্তাহ তো লাগেই। আর, টেকসইয়ের কথা যদি বলতে চাই, ৫০ বছরেও কিছু হবে না। মানে একটা জেনারেশন চালাতে পারবে, কিছু হবে না।’

কতটুকু টেকসই এই পাটের বাইসাইকেল? পরিবেশের জন্য এটি কতটুকু উপকারী?

এই প্রশ্নের উত্তরে এই তরুণ উদ্যোক্তা জানান, ‘সাইকেলে ব্যবহৃত পাটের তৈরি পাইপ সহজে পচনশীল নয়। রেজিনের মিশ্রণ থাকায় এটি মাটির সঙ্গে মিশতে বেশি সময় নেয়। এটাকে শতভাগ পরিবেশ বান্ধব বলা যাবে না। তবে, এক কেজি অ্যলুমিনিয়াম বা এক কেজি স্টিল তৈরি করতে প্রচুর পানি নষ্ট হয়, যেটা আর পরে ব্যবহারই করা যায় না। কার্বন ফাইবার দিয়ে জিনিস তৈরি করা তো পরের কথা। কার্বন ফাইবার তৈরি করতেই প্রচুর পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। সে জায়গা থেকে এটা বেশি পরিবেশ বান্ধব। তবে, পাটকে আমরা যতটা পচনশীল হিসেবে দেখি, এটা ঠিক ততটা না।’

একেকটি পাটের বাইসাইকেল বানাতে খরচ হয় ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে ১০ হাজার টাকায় তৈরি করা সম্ভব।

সাইকেলের বিক্রি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান আবু নোমান সৈকত। তিনি বলেন, ‘পাটের তৈরি সাইকেলের জন্য আমার কাছে ক্রেতা আসছে। কিন্তু, আমি এখনও বিক্রি করছি না। কারণ, এটার কি কি সুবিধা-অসুবিধা আছে, কোন কোন জায়গায় আরও উন্নতি করার সুযোগ আছে এবং কিভাবে করা যাবে তা আরও ভালো করে জানতে হবে। এ কারণে আমি এখনও এই সাইকেল কারও কাছে বিক্রি করছি না।