Wed. Sep 10th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,রবিবার,১৩অক্টোবর,২০১৯ঃ র‍্যাগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ পরিচয় পর্ব । এ জন্য নতুন মানুষের সাথে প্রথমে পরিচিত হতে হয় এটাই রীতি। কিন্তু সেই পরিচিতি পর্ব যদি হয় আতঙ্কের নাম তাহলে! র‍্যাগিং শুরু হয় গ্রিকে সপ্তম ও অষ্টম শতকে। আর বাংলাদেশে শুরু হয় নব্বই দশকে। নবীব ছাত্রছাত্রীদের র‍্যাগিং শেখানো হয় সেক্স বিষয়াবলি- বাধ্য করা হয় হস্তমৈথুনে আর মেয়েদের ব্রেস্টের মাপও দিতে হয় এই র‍্যাগিং নামের জঘন্য অনুষ্ঠানে। দেশে র‍্যাগিংয়ের আইন কী !
  • যেভাবে শুরু : র‍্যাগিং (Ragging) অর্থ পরিচিত হওয়া, তিরস্কার করা অথবা আবেগে কিছু করা আরও ভালোভাবে বললে, র্যাগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ হচ্ছে ‘পরিচয় পর্ব’ অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে পুরাতন শিক্ষার্থীদের একটা সখ্যতা গড়ে তোলার জন্য যে পরিচিতি প্রথা সেটাকে র‍্যাগিং বলে অভিহিত করা হয়। র‍্যাগিং শুরুর ইতিহাসে দেখা যায় গ্রিক সংস্কৃতিতে প্রথম এর ব্যবহার হয়- র‍্যাগিং শুরু হয় সপ্তম ও অষ্টম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিড বাড়াতে। কোনো ক্রীড়া সমপ্রদায়ে নতুন খেলোয়াড় বা শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটলে, তার ভেতর কতটুকু একতা রয়েছে তা ঝালাই করে নিতে এবং তার মধ্যে ‘টিম স্পিরিট’-এর বীজ বপন করে দিতে, প্রবীণরা মিলে তাকে নানাভাবে উপহাস করত, তার নানা পরীক্ষা নিত, তার শারীরিক ও মানসিক শক্তি যাচাই করত। সময়ের সাথে সাথে এই প্রক্রিয়ায় অনেক পরিবর্তন আসে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর র্যাগিং সংস্কৃতিতে এক বিশাল পরিবর্তন আসে। এটি আগের থেকে আরো বেশি ভয়াবহ, সহিংস ও নৃশংস হয়ে ওঠে। যুদ্ধ চলাকালীন অনেকেই সৈন্যদলে নাম লিখিয়েছিল এবং সেখানে তারা অনেক কঠিন কঠিন রীতিনীতির সাথে পরিচিত হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে যখন তারা আবার কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এলো, তারা চিন্তা করল সৈন্যদলে শেখা রীতিনীতিগুলোকেই এবার প্রাতিষ্ঠানিক র্যাগিংয়ের অন্তর্ভুক্ত করার। এভাবেই বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ র‍্যাগিংয়ের অংশ হয়ে উঠলো। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালীন সৈন্যদলে যেসব রীতিনীতি মানতে হতো, সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা ছিল দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা, কঠিন কোনো মিশনে যাওয়ার জন্য তারা উপযুক্ত কি না তা যাচাই করা। কিন্তু নন-মিলিটারি শিক্ষার্থীরা যখন এসব রীতিনীতির সাথে পরিচিত হলো, তারা এগুলোর কার্যকারিতা না জেনেই যথেচ্ছ ব্যবহার শরু করে দিলো। কালের বিবর্তনে পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এটা ঢুকে যায়। অষ্টাদশ শতকে, বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে এর প্রচলন বাড়ে। ১৮২৮ থেকে ১৮৪৫ সালের দিকে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর প্রসার ঘটে বিভিন্ন ছাত্রসংস্থার মাধ্যমে।
  • উপমহাদেশে র‍্যাগিং : উপমহাদেশে ৬০-এর দশক থেকে র‍্যাগিংয়ের প্রচলন শুরু হয় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোতে। প্রথমে ভারতবর্ষের সৈন্যদল ও ইংরেজি স্কুলগুলোতে র‍্যাগিং আসে। আশির দশকে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আর ৯০-এর দশকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে র‍্যাগিংয়ের প্রচলন বাড়তে থাকে । ভারতের অনুকরণে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর প্রচলন দ্রুত বাড়তে থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট এ দেখা যায়। এর ধীরে ধীরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগনাথ বিদ্যালয়, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ ছড়িয়ে পড়ে দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে
  • র‍্যাগিং যে দেশে যে নামে : র‍্যাগিং মূলত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে, অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে প্রচলিত রয়েছে। তবে অনুরূপ সংস্কৃতি বিশ্বের আরো অনেক দেশেই বিদ্যামান। উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে একে বলা হয় ‘ হেজিং’, ফ্রান্সে ‘বিজুটাহে’, পর্তুগালে ‘প্রায়ে’, অস্ট্রেলিয়ায় ‘বাস্টার্ডাইজেশন’ র্যাগিংয়ের নামকরণ করা হতো বিভিন্ন গ্রিক বর্ণ, যেমন- আলফা, ফি, বিটা, কাপা, এপসাইলন, ডেল্টা প্রভৃতির নামানুসারে।
  • র‍্যাগিংয়ে যা হয় : র‍্যাগিং কিন্তু একটি ভালো দিক আছে র্যাগিংয়ের মাধ্যমে সিনিয়রদের সাথে সম্পর্ক ভালো হয়। ক্লাসের যে হ্যান্ডনোটগুলো দেয়া হয়- তা একমাত্র সিনিয়ররাই দিয়ে থাকে। আর পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের গাইডলাইন এই সিনিয়ররা দিয়ে থাকে। তাই তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা জরুরি হয়ে পড়ে। একজন জুনিয়রের জড়তা কিংবা অহামিকা থাকবে না। মানুষের সাথে কথা বলা, চাল-চলন, উঠা-বসার সিস্টেমটা র‍্যাগিংয়ের মাধ্যমেই শেখানো হয়। তাছাড়াও ব্যাচের সবার সাথে একতা বজায় রাখার নির্দেশনা সিনিয়ররা দিয়ে থাকে। কিন্তু এই র্যাগিং কালের বির্বতনে আতঙ্ক নামে পরিচিতি হয়েছে নতুন ছাত্রছাত্রীরে কাছে। কারণ সবার সামনে নতুন ছাত্রছাত্রীদের সিনিয়রদের কাছে পরিচয় দেয়া বা দিতে হয়, গান গাওয়া, নাচা, কবিতা আবৃতি করতে হয়, রোদ্রে ক্যাম্পাসে দৌড়ানো, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করা করতে বলা হয়। এর মাঝে তার থেকে বড় সিনিয়র আপুদের প্রপোজসহ বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন হয়ে থাকে র‍্যাগিংয়ের ভেতর। মূল লক্ষ্যই থাকে প্রবীণ শিক্ষার্থী কর্তৃক নবীন শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা। একাধারে যেমন তাদের মৌখিক গালিগালাজ করা হয় (তার বাবা-মা তুলে, যে জেলা থেকে এসেছে সেই জেলাকে হেয় করে ) বিভিন্ন অপমানজনক কাজ করতে বাধ্য করা হয়, বিভিন্ন দুঃসাহসী কাজ করতে বলা হয় যেমন- সিনিয়র কাউকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়া, শীতের রাতে পুকুরে নেমে গোসল করে আসতে বলা হয় এমনি কি সরাসরি গায়ে হাতও তোলা হয় নবীন ছাত্রছাত্রীদের। একজন জুনিয়রের সর্বনিম্ন পার্সোনালিটি থাকে কি না সেটা অনুমেয়- জুনিয়রকে সারারাত কিংবা রাতের বেশি অংশই শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে নির্ঘুম কাটাতে হয়। সবার সামনে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয় জুনিয়রদের। তাদের প্রাথমিক জীবনে নেমে আসে দূর্বিসহ অন্ধকার। র‍্যাগিংয়ের নামে শেখানো হয় সেক্স বিষয়াবলি। এমনকি সবার সামনে হস্তমৈথন করতে বাধ্য করা হয়। আর জুনিয়র মেয়েদের তো র্যাগিং মানেই আতঙ্ক। জুনিযর মেয়েদের ব্রেস্টের মাপ দিতে হয় সিনিয়র মেয়েদের কাছে এমনি কি সিনিয়রদের মতো কথা না শুনলে ক্যাম্পাসে বড় ভাইদের (রাজনৈতিক ছাত্রনেতাদের) কাছে রাত্রিযাপন করার ভয় ও দেখান হয়। তবে সবশেষে সিনিয়ররা জুনিয়রদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে।
  • র‍্যাগিংয়ের কারণে মৃত্যু যাদের : ১৮৭৩ সালে নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি হন মর্টিমার লেগেট। বাবা ছিলেন আমেরিকান গৃহযুদ্ধেও এক বিখ্যাত জেনারেল। মর্টিমার প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি হওয়ার পর তিনি অন্তর্ভুক্ত হন র‍্যাগিংয়ের কাপা আলফা ফ্র্যাটার্নিটিতে। (কাপা আলফা একটি র‍্যাগিংয়ে নাম) এক রাতে, সেই ফ্র্যাটার্নিটির দীক্ষা পর্রের অংশ হিসেবে, তাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলে। তার করণীয় ছিল পথ চিনে ইথাকায় অবস্থিত চ্যাপ্টার হাউজে ফিরে আসা। নিয়ম অনুযায়ী, ফ্র্যাটার্নিটির অন্য দুই নবীনের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার পর তারা তার চোখ খুলে দেন। এরপর তারা তিনজন মিলে একটি ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করেন, নিকটবর্তী কোনো রাস্তায় গিয়ে ওঠা যায় কি না, সেই আশায়। কিন্তু খুব বড় ভুল করে ফেলেছিল তারা। যেটিকে তারা ঢাল বলে মনে করেছিল, যেটি আসলে ছিল ৩৭ ফুট উচ্চতার খাড়া পাহাড়ের দেয়াল। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একদম নিচে গিয়ে পড়েন মর্টিমার। শক্ত পাথরের উপর পড়ে তার শরীরটা পুরোপুরি থেঁতলে যায়। তার সঙ্গী দুজনও আহত হয়েছিলেন কিন্তু তিনি মারা যান। আর এজন্য তাকে র‍্যাগিংয়ের কারণে মারা যাওয়া প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে ধরা হয় মর্টিমার লেগেট কে। এরপর ২০০৯ সালে ভারতে ঘটে করুন ঘটনা ১৯ বছরের আমান ভর্তি হয়েছিলেন ভারতে হিমাচল প্রদেশের টানডা মেডিকেল কলেজে। কলেজের ছাত্রাবাসের কয়েকজন সিনিয়র ছাত্র তাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করত। কিন্তু সেসব কথা মা-বাবাকে বলেননি। কিন্তু একদিন সেই ছাত্ররা তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। এতে আমান মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যান। মারা যাওয়ার আগে আমান সেই নির্যাতনের কথা তার বাবাকে বলে যান। আমানের ঘরে কিছু চিরকুট পাওয়া যায়, যাতে র্যাগিং সম্পর্কে লেখা ছিল। আমানের মৃত্যুর পর তার বাবা রাজেন্দ্র কাচুরি সামাজিক আন্দোলন শুরু করেন। গঠন করেন র‍্যাগিংবিরোধী হেল্পলাইন, যেখানে র্যাগিংয়ের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগের কথা জানাতে পারেন।
  • র‍্যাগিংয়ের শাস্তি ও বিশিষ্টজনের মতামত: প্রতিটা পাবলিক ভার্সিটিতে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা থাকে। যদি র‍্যাগিং প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের কারণে ছাত্রছাত্রী বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে।
  • র‍্যাগিং অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র্যাগিংয়ের ধারণা বেশ পুরনো। একটা সময় র‍্যাগিং ছিলো সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে তা বেশে নির্মম আকার ধারণ করেছে। তাই যে র্যাগিং শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের মাধম হয়ে দাঁড়ায় তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। তবে র‍্যাগিং বন্ধে আলাদা কোনো আইন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন দিয়েই এটা বন্ধ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিন, প্রভোস্ট, প্রক্টরসহ অন্যরা যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তাহলে আর আলাদা আইন দরকার হবে না। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে প্রচলিত আইন যথেষ্ট নয়, তাহলে নতুন আইন তারা করতে পারে। সে ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। জুনিয়রদের সাথে পরিচিত হওয়ার নামে যে নির্যাতন এখন হচ্ছে অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া উচিত।
  • র‍্যাগিংয়ের নামে ক্ষমতা প্রদর্শন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবিএম নাজমুল সাকিব বলেন, একটা সময় র্যাগিংয়ের যে ধারণা ছিলো, বর্তমানে তা নেই। তখন র্যাগিং মূলত সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি সম্পর্ক তৈরি করতো। কিন্তু বর্তমানে র্যাগিংয়ের নামে ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা রীতিমতো ভীতিকর। র্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থী এমন একটি ট্রমার মধ্য দিয়ে যায়। যার কারণে তার একাডেমিক জীবন, ব্যক্তি জীবন, এমনকি পারিবারিক জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অনেকেই অস্বাভাবিক জীবন যাপন করে। আমি শিক্ষক হিসেবে র্যাগিংয়ের বর্তমান অবস্থার অবসান চাই। একই সাথে সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ চাই। যার মাধ্যমে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।
  • র‍্যাগিং একটি বাজে সংস্কৃতি: সাধারণ শিক্ষার্থী আন্দোলনের নেতা ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, র্যাগিং আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি বাজে সংস্কৃতি বা অভ্যাস। ‘র‍্যাগিং’ নামে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক ধরনের সহিংসতা নীরবে-নিভৃতই চলে আসছে। কুৎসিত ও নিষ্ঠুর আচরণের মাধ্যমে নবাগত শিক্ষার্থীদের ‘অভ্যর্থনা’ জানানোর নামই হলো ‘র‍্যাগিং’। আর র‍্যাগিংটা সাধারন শিক্ষার্থীরা কখনোই করতে সাহস পায় না। অতিতের সকল র‍্যাগিংয়ের ঘটনা সরকারের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের দ্বারাই হয়েছে। সরকার ছাত্রলীগকে বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংসহ সকল ধরনের অপকর্ম চালানোর লাইসেন্স দিয়েছে বলেই তারা এত বেপরোয়া।
  • বড় ভাই বলে কর্তৃত্ব ফলানো সমীচীন নয়: স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তপন মাহমুদ লিমন বলেন, র্যাগিং বিষয়টাকে আমি দেখি ছাত্র অধিকার ও মানবিক মর্যাদার পরিপন্থি কাজ হিসেবে। কোনোভাবেই কারোর ওপর কখনো বড় ভাই বলে কর্তৃত্ব ফলানো সমীচীন নয়। যারা বিভিন্ন অজুহাতে র‍্যাগ দেয়, সেটা তারা নিছক বিনোদন মনে করলেও আমি এটা অপরাধ হিসেবেই দেখি। আমি কখনোই মানুষকে এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে র‍্যাগিং দেয়ার পক্ষে নই। আসলে বিভিন্ন সময় র্যাগিংয়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়, কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়। আসলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও যথেষ্ট শক্তিশালী না, তাই তারা ইচ্ছা করলেও র‍্যাগিংয়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন না।
  • র‍্যাগিংয়ের কারণে আত্নহত্যারসিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হয় না: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম.এ. মমিন বলেন, একটা ছেলে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় প্রবেশ করে তখন সে থাকে ফ্রেশার্স, অনেক স্বপ্ন নিয়ে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু আজকাল রাগিং নামক ভয়াবহ ব্যাধির কারণে অনেকের স্বপ্ন শুরুতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাগিংয়ের কারণে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে, অনেক সময় র্যাগ দেয়ার ঘটনাটি ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয়, এইসব নানান কারণে রাগকৃত ছেলেটা অথবা মেয়েটা আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হয় না। র্যাগিং বর্তমানে একটা ব্যাধিতে পরিণত হয়ছে।
  • র‍্যাগিং বন্ধে মনিটরিং জরুরি: র‍্যাগিং বন্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ দরকার জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, র‍্যাগিংয়ের ভয়াবহতা জানা সত্ত্বেও এ বিষয়ে আইন তৈরির বিষয়ে উদাসীন হলে হবে না। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক সহায়তায় জন্য এন্টি র্যাগিং কমিটি গঠন এবং মনিটরিংয়ের জন্য এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড গঠন করতে হবে। নচেৎ এটা থামানো সম্ভব নয়।