
মৌলভীবাজার প্রতিনিধীঃ আলোকিত মানুষ গড়ার, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৫ অক্টোবর) আজ থেকে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শুরু হয়েছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চার দিন ব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব।
সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহায়তায় আয়োজিত এই বইমেলা চলবে ২৫ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
পাঠের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা কর্মসূচি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ বইমেলার ইউনিট ইনচার্জ অমিত চক্রবর্তী জানান, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাদের চলমান ‘আলোকিত মানুষ’ গড়ার কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা কর্মসূচি চালু করেছে। এর লক্ষ্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঠপ্রেমী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের হাতে সহজলভ্যভাবে বিশ্বসেরা বইগুলো পৌঁছে দেওয়া।
তিনি আরও জানান, মেলায় থাকছে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, ইতিহাস, অনুবাদ, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, রূপকথা এবং শিশু-কিশোরদের জন্য বাছাইকৃত বই। পাঠপ্রেমীদের জন্য বইমেলায় প্রতিটি বইয়ে থাকছে বিশেষ মূল্যছাড়।
(২৫ অক্টোবর) শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ বইমেলার শুভ উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তানভীর হোসেন।
উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত থাকার জন্য মৌলভীবাজারের পাঠক, সংস্কৃতিসেবী ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ বইমেলার ইউনিট ইনচার্জ অমিত চক্রবর্তী।
জ্ঞান, মনন ও সৃজনশীলতার এক উজ্জ্বল যাত্রা—কমরেড আমিরুজ্জামান।
মেলার সফলতা কামনা করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক, ইংরেজি দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল পোস্ট ও সাপ্তাহিক নতুন কথা–এর বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন।
আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের হাত ধরেই সত্তর দশকের শেষভাগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। হাটি হাটি পা পা করে ৪৬ বছর অতিক্রম করেছে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাধীন, চিন্তাশীল, সৃজনশীল ও মানবিক মূল্য বোধ সম্পন্ন মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যেই কেন্দ্রটি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কোনো গৎবাঁধা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি জ্ঞান, মনন ও সৃজনশীলতার এক সজীব অঙ্গন। যারা অনুসন্ধিৎসু, সৌন্দর্যপ্রবণ, সত্যান্বেষী ও মানবকল্যাণে নিবেদিত, তাদের মিলনস্থলই এই কেন্দ্র। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, জ্ঞানচর্চা ও রুচিশীল সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানোই এর লক্ষ্য।
কমরেড আমিরুজ্জামান আশা প্রকাশ করেন, মৌলভীবাজারে আয়োজিত এই চারদিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলায় জ্ঞানপিপাসু মানুষের অবারিত অংশগ্রহণে আলোকিত মানুষ গড়ার আন্দোলন আরও বেগবান হোক।
পাঠ প্রেমীদের মিলনমেলা, স্থানীয় সংস্কৃতিমনা তরুণ-তরুণী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পাঠকসমাজ ইতিমধ্যেই এই আয়োজনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। মৌলভীবাজার শহর ও সদর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের দলগতভাবে মেলায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখা গেছে।
প্রেক্ষাপট, ১৯৭৮ সালে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ-এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে বইপড়ার অভ্যাস ও প্রজ্ঞামূলক সংস্কৃতিচর্চা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে। বর্তমানে এর পাঠচক্র, লাইব্রেরি ও মোবাইল লাইব্রেরি কর্মসূচি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃত।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এই বইমেলাকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা ও জেলা শহরজুড়ে বই ও পাঠের এক উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এ আয়োজন শুধু বই বিক্রির মেলা নয়, এটি এক আলোকিত সমাজ গড়ার অনুপ্রেরণার উৎসব।


