Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

কামরুল হাসান, ঠাকুরগাঁও, খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
IMG_0313ঠাকুরগাঁওয়ে আমাদের জানা মতে অতিমাত্রায় অ্যালকোহল মিশিয়ে ফেন্সিডিলের বিকল্প হিসেবে বিক্রি হচ্ছে এনার্জি ড্রিংকস্। জেলার প্রতিটি উপজেলায় এখন জম-জমাট ব্যবসা। পঁচা ফলের রস, পঁচা সুপারির রস, গাছ-পালা, লতা-পাতার রস, বিভিন্ন পঁচাছালের রস, সেকারিন, চিনি পানি, পিয়েড রাসায়নিক, সাইট্রিকএসিড, পটাশিয়াম সালফেডও অ্যালকোহল মিশিয়ে তৈরি হয়ে থাকে বাহারি নামের এই ড্রিংকস্। জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

এসব এনার্জি ড্রিংকস্ পান করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী ,উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েরা এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে আমাদের গোটা সমাজে। অবৈধভাবে তৈরি করে তা অবাধে বিক্রি করেছে একটি কুচক্রি মহল,পরিকল্পিত ভাবে সরকারকে ফাঁকি দিচ্ছে এই মহলটি। কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিচ্ছিন্ন ভাবে জেলা প্রশাসন,র‌্যাব ,মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর সহ ভ্রাম্রমান আতালত চালালেও কোনভাবেই থামছেনা এনার্জি ড্রিংকস নামের এই ব্যবসা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান,এনার্জি ড্রিংকস প্রস্তুতকারী সিন্ডিকেট টির প্রভাব এতটাই শক্তিশালি যে, বিভিন্ন অভিযান ও অনেক সময় বিফল হয়ে যায় । এমনকি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি সহ দোলীয় নেতাদের কাছ থেকেও এ ব্যপারে সুপারিশ আসে । এদিকে অনেক ব্যবসায়ী এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি সুযোগ নিয়ে রাতভর অন্যান্য মাদক ব্যবসা ও করে থাকেন বলে মন্তব্য ব্যবসায়ীদের আশেপাশে ব্যক্তিদয়ের। বিশেষঙ্গ ডাক্তারদের মতে,এগুলো নিয়মিত পান করলে মানুষের কিডনি ও লিভারের বড় ধরনের সমস্যাসহ জীবন হুমকির মুখে পরতে পারে। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে যুব সমাজ। এনিয়ে অভিভাবক দের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

সুত্র জানায়, ২০১১সালের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেশে কয়েকটি ড্রিংকস কম্পানি থাকলেও বি.এস.টি.আই ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় ভয়াবহতা বেড়েই চলছে।

একটি বিশ্বস্থ’ সুত্রে জানা যায় ২০১২ সালে ভেজাল বিরোধী অভিযানের জেলা প্রসাশনের নির্বাহী ও সাহসী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার গোপন সুত্রে ঠাকুরগাঁও নিশচিন্তপুর নামক এলাকায় একটি কারখানায় শিশুদের জন্য নকল জুস ও নেশা জাতীয় রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে এনার্জি ড্রিংকস বাজার জাত করা হচ্ছিল,যাতে স্কুল পড়–য়া কোমল মতি বাচ্চারাও আসক্ত হয়েছেন।

পরে তার নেতৃত্বে একটি মোবাইল কোট ঠাকুরগাও থানার ওসি,র‌্যাব ও প্রসাশনের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ওই কারখানায় অভিযান চালায়,অভিযানে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান জব্দ করাহয় ,কিন্তু ঐ সময়ে অদৃশ্র শক্তির করনে এ বিষয়ে আইন গত ব্যবস্থা বেশিদুর যায়নি। বর্তমান জেলা শহর সহ প্রতিটি উপজেলার হাট বাজার এমনকি গ্রামঞ্চলের অলি-গলিতে ও খোলামেলা ভাবে অ্যালকোহল মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংকস্,বিক্রি হচ্ছে। এরাবিয়ন হর্স, হর্স ফিলিংস,যাদুহর্স,জিনসেন,হর্সপাওয়ার,ব্লাকহর্স,হটফিলিংস,মাউন্টেনভিউ,স্ট্রং,মাছুম সহ বিভিন্ন নামে এনার্জি ড্রিংকসে বাজার সয়লাব। এসব দ্রব্য এনার্জি ড্রিকস হিসেবে বিক্রি করা হলেও কার্যত: কারও কোন বৈধতা নেই বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছক জনৈক বি.এস.টি.আই এর একজন কর্মকর্তা। বিক্রেতাদের মতে,অর্ধশতাধিক বা তারও বেশি নামে বেনামে এই এনার্জি ড্রিংকস বাজারে রয়েছে। অনেক বিক্রেতার মতে,অধিকলাভ হওয়ায় তথাকথিত ঐ এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। অনেক ব্যবসায়ী আবার শুধু এই এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।

সরজমিনে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন টার্মিনাল ও বাসস্টেন্ড ঘুরে দেখা গেছে গভির রাত পর্যন্ত সেখনে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের মানুষ এবং বখাটেদের আড্ডা জমে ওই এলাকা গুলোতে। গভির রাত পর্যন্ত হেটেল ও রেস্টুরেন্ট খোলা থাকায় ওই এনার্জি ড্রিংসের দোকান খোলা থাকে। যদি ও এই দোকান গুলোর কোন স্টেশনারী নাম নেই অ্যালকোহল মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংকস গুলোর বোতলের গায়ে লেখা রয়েছে শুধু মাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। বি.এস.টি.আই এর সিল এবং কোম্পানির নাম লেখা নেই। যা খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বোতলের গায়ে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করা হচ্ছে,যাতে সহজে কেউ ধরতে না পারে।

কিছু মাদক সেবনকারি উর্তি বয়সের যুবকদের কাছে আমাদেও প্রতিনিধি জানতে চেয়েছিলো , এই এনার্জি ড্রিংকস গুলো মূলত আপনাদেরকী কাজে আসে উত্তরে জানায়,ফেন্সিডিলের বিকল্প হিসেবে কাজ করে অনেকটাই। এটি পান করার পর মাথা ঝিম ঝিম করে নেশানেশা লাগে,চোখের আলো বৃদ্ধি পায় । এক বোতল (৩৫০মিলি)পান করলে প্রায় ৪/৫ঘন্টা এর ফিলিংস থাকে শরীরে। নিয়মানুযায়ী এসব এনার্জি ড্রিংকসে অ্যালকোহল থাকার কথা নয় ।এরপরও ড্রিংকসে অ্যাকোহল মেশাচ্ছে একটি মহল ।আবার কেউ কেউ বৈধতার মোড়কে অতিমাত্রার অ্যালকোহল মেশাচ্ছে বিশেষ ভাবে অধিক অ্যালকোহলের কথা জেনে যুব সমাজ ওইসব এনার্জি ড্রিংসের দিকে মারাত্বক ভাবে ঝুঁকে পড়ছে।

ঠাকুরগাও রোডের একজন বিক্রেতা জানান,ইদানিং হঠাৎ করেই এনার্জি ড্রিংসের চাহিদা বেড়ে গেছে । স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও উঠতি বয়সীরাই এই ড্রিংকসের ক্রেতা।

জানা যায়,বিদেশী এনার্জি ড্রিংকসে কোন অ্যালকোহল থাকেনা। বিয়ারের মতো ড্রিংকসে তার পরিমান
নির্দিষ্ট হারে থাকে। বৈধভাবে প্রস্তুতকৃত বিয়ারে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত অ্যাকোহল থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে আট শতাংশও থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে কিছু ক্ষেত্রে চার দশমিক ছয় শতাংশ অ্যালকোহল লেখা থাকলেও প্রকৃত পক্ষে তাতে অ্যালকোহলের মাত্রা থাকে আরও বেশী। অনেক সময় আট থেকে১২ শতাংশ পর্যন্ত অ্যলকোহল মিশিয়ে বাজারজাত করা হয়। নিয়মানুযায়ী বাজারজাত করা ড্রিংকসে অ্যালকোহল আছে কিনা,তা পরীক্ষার দায়িত্ব সরকারী একাধিক সংস্থার সহ জেলার জেলা প্রসাশন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর ।কিন্তু রহস্যজনক কারণে কি পরিমান অ্যালকোহল মেশানো রয়েছে তা পরীক্ষা করা হয় না। পরীক্ষা করলে সরকারের রাজস্ব বেড়ে যেত । বিয়ার ক্যানের জন্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে ৯ দশমিক ৫৫টাকা শুল্ক দিতে হয়। এরবেশী অ্যালকোহল মেশানো হলে আনুপাতিক হারে শুল্কের পরিমান বাড়বে।এদিকে,প্রকৃত চিত্র জেনেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর,প্রসাশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অগ্রাত করনে নিরব। তবে গত ২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন দোকানে নেশা জাতীয় পানি ও যৌন উত্তেজনীয় পানি বিক্রয় এর কারণে ভ্রামমান আদালত অভিযান চালায়।উক্ত অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রামমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত ফেরদৌস।অভিযান চলাকালে শহরের বিভন্ন দোকানে থেকে ১০০ বতল নেশা জাতীয় পানি ও যৌন উত্তেজনীয় পানি জব্দ করে এবং জরিমানা করে।ভ্রামমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত ফেরদৌস জানায়, নেশা জাতীয় পানি ও যৌন উত্তেজনীয় পানি বিক্রয় এর কারণে, স্কুল কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে । এর ফলে যুব সমাজ দিন দিন ধংব্স এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।