Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

॥ প্রভাষ আমিন ॥
খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
86অসরহবাংলাদেশের রাজনীতিতে ওয়ান-ইলেভেন হিসেবে পরিচিত ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দুই বছর মেয়াদে সে সরকার ভালোমন্দ অনেক কিছুই করেছে। যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে দেশজুড়ে। প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমেদকে সামনে রেখে সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে নানামুখী সংস্কার আনার চেষ্টা করেছেন। যার কিছু নন্দিত হয়েছে, কিছু তুলেছে সমালোচনার ঝড়। তবে তাদের সবচেয়ে বড় সংস্কার চেষ্টা ছিল, ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। এবং তাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা সেই ফর্মুলা কার্যকর করতে না পারা। আর সেই ব্যর্থতাতেই লুকিয়ে ছিল গণতন্ত্রের জয়। ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ ছিল, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও দেশ থেকে মাইনাস করে দেওয়া। এই ফর্মুলা কার মাথা থেকে এসেছিল, তা এখনও জানা যায়নি।
তবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারও কারও সায় ও উস্কানি ছিল এ ফর্মুলা বাস্তবায়নে। তখন বড় বড় পত্রিকার বাঘা-বাঘা সম্পাদকেরা ‘মাইনাস টু’র পক্ষে ওকালতি করে বিশাল বিশাল কলাম লিখেছেন। বুদ্ধিজীবীরা এ ফর্মুলার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে ঝড় তুলেছেন চায়ের কাপে আর টক শো’র টেবিলে। ফর্মুলা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়া হয়েছে। জিয়াকে জোর করে দেশের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা হয়েছে। না পেরে দুই নেত্রীকে বন্দি করা হয়েছে। কিন্তু টলানো যায়নি। দুই নেত্রীর দৃঢ়তা আর জনগণের সমর্থন না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় এ সর্বনাশা ফর্মুলা।
দুই নেত্রীর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক লেখা-বলা হয়েছে, হচ্ছে, হবে। ভালোমন্দ যাই হোক, গত ৩৩ বছর ধরে এই দুই নেত্রীর হাতেই সমর্পিত আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতির বর্তমান-ভবিষ্যৎ। দেশ যতটুকু এগিয়েছে, তার কৃতিত্ব যেমন তাদের; আবার রাজনীতিতে বিদ্বেষ, কাদা ছোড়াছুড়ি, দলে গণতন্ত্রহীনতা, আন্দোলনের নামে নৃশংসতার দায়ও তাদেরই নিতে হবে। আশির দশকের শুরুতে কাছাকাছি সময়ে রাজনীতিতে এসেছেন হাসিনা-খালেদা। একজন পিতা, আরেকজন স্বামীর রাজনীতির উত্তরাধিকার নিয়ে এলেও তারা দল, দেশ, জাতিকে এতগুলো বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতার গুণেই। দুজনের আদর্শ-চিন্তা দুই মেরুর। একজনেরর হাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নেতৃত্বের পতাকা; আরেকজন জামায়াতকে পাশে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতির ঝা-া বহন করছেন। আদর্শে ভিন্নতা থাকলেও দুজনই লক্ষ্যে অবিচল। তাদের মিলিত আন্দোলনেই পতন ঘটে স্বৈরাচার এরশাদের, মুক্তি পায় গণতন্ত্র। ৯১ সাল থেকে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শুরু। সে পথও কুসুমাস্তীর্ণ নয়, অনেক চড়াই-উৎড়াই, উত্তাল। কিন্তু দুই নেত্রী দক্ষ নাবিকের মতো ধরে রেখেছেন হাল। দুই নেত্রীর একটা ভালো সিদ্ধান্ত দেশকে যেমন অনেক এগিয়ে নিতে পারে; তেমনি তাদের ছোট্ট ভুলেও অনেক বড় খেসারত দিতে হয় জাতিকে।
নববর্ষে, দুই ঈদে দুই নেত্রী সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বছরের এই দিনগুলোয় সর্বস্তরের মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়, সরাসরি তাদের অভাব-অভিযোগের কথা বলে। এবারই প্রথম তার ব্যতিক্রম হলো। দুই নেত্রী একসঙ্গে কখনও দেশের বাইরে ছিলেন বলে মনে পড়ছে না। তবে ঈদের সময় দুই নেত্রী একসঙ্গে কখনও দেশের বাইরে ছিলেন না, এটা নিশ্চিত। আমি কখনও নববর্ষে বা ঈদে কোনও নেত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাইনি। কিন্তু টিভিতে লাইনে দাঁড়িয়ে সবার শুভেচ্ছা বিনিময়ের ছবি দেখতে ভালো লাগে। নিজে না গেলেও দুই নেত্রী আছেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন, এটা এক ধরনের স্বস্তি এনে দেয়। এবার তাই সবকিছু কেমন খালি খালি লাগছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক গেছেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন গেছেন চিকিৎসা ও একমাত্র জীবিত পুত্রের সঙ্গে দেখা করতে। কাকতালীয় হলেও আট বছর পর ওয়ান-ইলাভেনের কুশীলবদের স্বপ্নপূরণ হয়েছে, দুই নেত্রীই এখন দেশের বাইরে। কিন্তু আমরা নিশ্চিন্ত দুই নেত্রীই নির্ধারিত কর্মসূচি দেশে ফিরবেন, নেতৃত্ব দেবেন দেশ ও দলের।
ওয়ান-ইলাভেনের সরকারের কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছুই। সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা হলো গণতন্ত্র ছাড়া আমাদের চলে না এবং গণতন্ত্রের চেয়ে ভালো কিছু নেই। এই শিক্ষাটা যদি আমরা ভুলে না যাই, তাহলেই সবার জন্য মঙ্গল।
লেখক: অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।