Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

॥ গোলাম মাওলা রনি ॥
খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ০২ অক্টোবর ২০১৫
29শিরোনামের বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য অনেকেই তাগিদ দিয়ে আসছিলেন বহুদিন থেকে। যারা তাগিদ দিচ্ছিলেন তারা কেউই ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিত কিংবা বন্ধু-বান্ধব নন। প্রায়ই টেলিফোনে তাদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনে কোনো লেখা ছাপা হলে তারা ফোন করেন। একথা-ওকথা বলার পর স্মরণ করিয়ে দেন শিরোনামের প্রসঙ্গটি। তাদের বক্তব্য- ঢাকা শহর তো বটেই, সারা দেশে এখন নারী নির্যাতনের তুলনায় পুরুষ নির্যাতনের পরিমাণ এবং সংখ্যা বেশি। পুরুষরা নির্যাতন করে একক প্রচেষ্টায় বা একমাত্রিকভাবে। অন্যদিকে নারীরা নির্যাতন করে কমপক্ষে ত্রিমাত্রিকভাবে। তারা নিজেরা পুরুষদের পেটায় এবং তাদের মেয়ে বান্ধবীদের দাওয়াত করে এনে সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ চালায়। অন্যদিকে যেসব গৃহবধূ কোনো শক্তিশালী পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া করে যেসব নারী তাদের স্বামীদের ছ্যাঁচা দেয় সেসব শক্তিমান নাগর কিংবা নাগরের সাঙ্গপাঙ্গদের দ্বারা। ত্রিমাত্রিক এ নির্যাতনের বাইরে মিথ্যা অভিযোগে থানা-পুলিশ কোর্ট কাছারি এবং সমাজ সংসারের লোকজনের বহুমাত্রিক নির্যাতন ও টিটকারী নির্যাতিত পুরুষদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তাই এসব পুরুষ তাদের ওপর চালিত সব নির্যাতন, জুলুম এবং অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নারী নির্যাতন আইনের আদলে পুরুষ নির্যাতন আইন চান। একইভাবে তারা নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের আদলে ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র কোনো ট্রাইব্যুনাল দাবি করেন।
টেলিফোনকারীদের আবেদন-নিবেদন এবং অনুরোধ নিয়ে আমি চিন্তাভাবনা করতে থাকি। কিছুটা দ্বিধা এবং সঙ্কোচ আমাকে পেয়ে বসে। কারণ আমাদের দেশের পাঠকসমাজ এখনো পরিপূর্ণভাবে কোনো খবর, সম্পাদকীয় কিন্তু মন্তব্য মূল্যায়ন করতে পারে না। তারা সব কিছুকেই সহজে সমীকরণ ও সরলীকরণ করে ফেলে। তারা মনে করে লেখক যা কিছু লেখে তার সবই বোধ হয় নিজস্ব অভিজ্ঞতা, স্বার্থ, বোধ এবং বেদনা থেকে লেখে। কাজেই শিরোনামের প্রসঙ্গে লিখতে গেলে একশ্রেণির পাঠক হয়তো ভেবে বসবেন লেখক হয়তো হররোজ বউয়ের পিটুনি খায়। কেউ কেউ হয়তো সহানুভূতি দেখিয়ে বলবেন- ভাই! ভাবী আপনাকে কখনো মারে! কীভাবে মারে কিংবা কি দিয়ে মারে! তারপর বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলবেন আহ্হা। কী যে জমানা এলো! আপনার মতো দেবতুল্য মানুষকে কেউ মারতে পারে তা ভাবাই যায় না। লেখার প্রতিবন্ধকতার অন্য কারণও আছে। আমার এ ক্ষুদ্র জীবনে পুরুষ নির্যাতনের কথা আপনজনদের কাছ থেকে খুব কমই শুনেছি। আর সারা জীবনে দেখেছি মাত্র একটি। বাকিটা জেনেছি পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনের খবর, ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম থেকে। আমার দেখা পুরুষ নির্যাতনের একটি কাহিনী এবং আমার স্ত্রীর দেখা অন্য একটি কাহিনী বলার আগে বলে নেই আবহমান বাংলার নারী-পুরুষের চিরায়ত দাম্পত্য সম্পর্ক এবং পারিবারিক আচার-আচরণ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা যা আমি দেখেছি আমার স্বর্ণালী শৈশবে এবং কৈশোরে।
আমার জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের একটি আদর্শ গ্রামে। সেখানে ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলমান, অভিজাত এবং হরিজন সবাই মিলেমিশে বাস করতেন। ছোটরা মুরব্বিদের সম্মান করতেন আর বড়রা ছোটদের সন্তানের ন্যায় স্নেহ করতেন। সব পেশার মানুষ একে অপরকে শ্রদ্ধা করতেন এবং কেউ কাউকে ঠকানোর কথা চিন্তাও করতেন না। আমাদের বাড়িতে নিয়মিত গোয়ালা এসে দই দিয়ে যেতেন, নাপিত কাকা আসতেন চুল কাটার জন্য। ধোপা কাকা আসতেন ময়লা কাপড় নেওয়ার জন্য এবং ব্রাহ্মণ কাকা যাকে আমরা গণক ঠাকুর বা বাউন কাকা বলতাম তিনি আসতেন আমাদের কোষ্ঠী বিচার করার জন্য। এর বাইরে ছিলেন ডাক্তার কাকা, ঘোষ কাকা এবং মাস্টার মশাই। ফেরিওয়ালারা এসে হাঁড়িপাতিল, কাচের চুড়ি, বাঁশি, খেলনা, মিটাই-ম-া, কটকটি ইত্যাদি বিক্রি করে যেতেন। বাড়ির মহিলা এবং ছেলেপুলেরা এসব সামাল দিত। অন্যদিকে ব্যাটা ছেলেরা কিংবা মুরব্বিরা ভুলেও বাড়ির কোনো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। তারা উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে মাছ-মাংস, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি কিনে আনতেন দূরের হাটবাজার কিংবা গঞ্জ থেকে।
আমাদের গ্রামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ দলবদ্ধ হয়ে একেকটি এলাকায় পৃথক মহল্লা বানিয়ে বাস করতেন। কামার, কুমার, জেলে, ধোপা, নাপিত, চামার, মুচি, মুটে, মেথর, সাহা, ব্রাহ্মণ, চ-াল, গৃহস্থ, কারিগর, চাষা, মজুর, গাছি, মাঝি, কাঠমিস্ত্রি, ঘরামি, কর্মকার (স্বর্ণকার) প্রভৃতি শ্রেণি-পেশার মানুষ আৎদীয়-পরিজন নিয়ে একেক এলাকায় মিলেমিশে বসবাস করতেন। প্রতিটি পরিবারই ছিল ভীষণ ব্যস্ত। নারী-পুরুষ উভয়ে একত্রে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতেন। এমনকি পরিবারের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরও কাজ করতে হতো। প্রায় সব ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি পিতা-মামা অথবা পরিবারের কর্তা গিন্নিকে পারিবারিক কাজকর্মে সহায়তা করতেন। পরিবারের কর্ম পরিবেশ এমনই ছিল যে সঙ্গতিপূর্ণ এবং সচ্ছল পরিবারের কিশোর-কিশোরী স্কুলে যাওয়ার আগে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি প্রভৃতি গৃহপালিত পশু-পাখিকে খাবার খাইয়ে যেত। তারা বিকালবেলায় মাঠে গরু-ছাগল চরাতে যেত, ঘুড়ি ওড়াত এবং রাখালদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘাস কাটত আর সুযোগ পেলে মহিষ, গরু কিংবা ছাগলের পিঠে চড়ত।
আমি আমার শৈশব এবং কৈশোরে নিজেদের বাড়ি তো দূরের কথা, গ্রামের কোনো দরিদ্র পরিবারেও দেখিনি স্বামী-স্ত্রীকে প্রকাশ্যে ঝগড়া করতে। নারী-পুরুষের নিষিদ্ধ সম্পর্কের কথা শুনিনি। প্রেম করে বিয়ের মতো একটি ঘটনাও আমাদের গ্রামে ঘটেনি ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে। পরের কথা বলতে পারব না। কারণ এরপর আমরা ফরিদপুর ছেড়ে চলে যাই পটুয়াখালী জেলায়। নারীরা পুরুষকে সম্মান করতেন আর পুরুষরা নারীদের মর্যাদা দিতেন। আমার দাদারা ছিলেন অনেক ভাইবোন। দাদার সামনে দিয়ে দাদিসহ পরিবারের অন্য মহিলারা ঘোমটা টেনে মাথা নিচু করে নিঃশব্দে চলাচল করতেন। আব্বার ক্ষেত্রেও তাই দেখেছি। আম্মা, চাচি-খালা, ফুফুসহ বাড়ির অন্য মেয়েরা কোনো দিন আব্বার সামনে এসে বসবেন এমন কথা কল্পনা করতে পারতাম না। রান্না হলে প্রথমে পুরুষ মানুষ ছেলেপুলেদের নিয়ে খানা খেতেন। পরে বাড়ির মেয়েরা একসঙ্গে বসে খোশগল্প করতে করতে দীর্ঘ সময় নিয়ে খানা খেতেন।
আমরা সাত ভাই। চাচাত ভাইবোন, খালা-ফুফুদের সন্তান মিলে আমাদের বিরাট এক পরিবার। সব মিলিয়ে হাজারখানেক তো হবেই। আমি পরিবারের বড় সন্তান, বাপ-দাদার মতো না হলেও প্রায় একই সমান্তরালে পরিবার চালিয়ে যাচ্ছি। ফলে এ অবস্থায় পুরুষ নির্যাতন নিয়ে কোনো কিছু লেখার জন্য যে বাস্তব ধ্যান-জ্ঞান দরকার তা অনেক কিছুই আমার নেই। তবুও যতটুকু পারিপাশ্বর্কি অবস্থার কারণে আঁচ করতে পারি তা নিয়ে লিখলেও রীতিমতো মহাকাব্য রচনা করা সম্ভব। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে পুরুষ নির্যাতনের বিষয়ে দুটি বাস্তব উদাহরণ দিয়ে নেই। ঘটনাটি ১৯৯৬ সালের। আমার পাশের অফিসের মালিক ভদ্রলোক এলেন দেখা করতে। ৩৫/৩৬ বছর বয়সী কেতাদুরস্ত ভদ্রলোক। ব্যবসা শুরুর আগে তিনি একজন রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। কথাবার্তা বলতে বলতে কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের ঘনিষ্ঠতা এবং অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি হয়ে গেল। একদিন ভদ্রলোক মলিন মুখে জানালেন যে, তার স্ত্রী তাকে প্রায়ই মারধর করেন। হাতের কাছে যা পান তা দিয়েই পেটান। ভদ্রলোক যদি স্ত্রীকে নিবৃত্ত করার জন্য তার দুই হাত চেপে ধরেন কিংবা সামনে থেকে অথবা পেছন থেকে জাপটে ধরার চেষ্টা করেন তখন মহিলাটি তাকে আচ্ছা মতো কামড়ে দেন। ভদ্রলোক বাবারে-মারে! মরে গেলাম ইত্যাদি বলে চিৎকার না করা পর্যন্ত মহিলার কামড়ানো বন্ধ হয় না। ঘটনাটি আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলো। আমি সে কথা বলা মাত্র ভদ্রলোক তার শার্ট খুলে আমাকে দেখাতে থাকলেন তার স্ত্রী কোথায় কোথায় কয়টি দাঁত বসিয়ে দিয়েছিল এবং শরীরের কোন কোন স্থানে খুন্তি, ডাল ঘুটনি এবং রুটি বেলুন দিয়ে আঘাত করেছিল। দ্বিতীয় ঘটনাটি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে শোনা। আমি তখন একটি নামকরা জাতীয় দৈনিকের বার্তা বিভাগের শিফট ইনচার্জ হিসেবে কাজ করি। আব্বার অনুমতি নিয়ে কিছু দিনের জন্য ধানম-ির মধুবাগে আলাদা বাসা নেই। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন আরেক নব দম্পতি। স্বামী-স্ত্রী একই অফিসে চাকরি করেন। স্বামীটি বেশ লম্বা চওড়া এবং স্বাস্থ্যবান। উ”চতা কম করে হলেও সোয়া ছয় ফুট হবে। অন্যদিকে স্ত্রীর উ”চতা বড়জোর পাঁচ ফুট। গায়ের রং কালো, বেঢপ শরীর এবং দেখতে মোটেও আকর্ষণীয় নন। আমরা অবাক হয়ে ভাবতাম এমন স্ত্রীকে কেন স্বামী এত তোয়াজ করে চলেন। একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি স্ত্রী মুখ ভার করে আছেন। জিজ্ঞেস করতেই বললেন- জান! আজ না পাশের বাসার ভাবী ভাইকে অনেক মেরেছে। নির্মমভাবে জুতাপেটা করেছে।
আমি যে কাহিনীর কথা বললাম তার একটি ঘটেছিল ১৯৯৬ সালে এবং অপরটি ১৯৮৯ সালে। ২০১৫ সালে এসে বাংলাদেশের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহামারী দেখা দিয়েছে। স্ত্রীর প্রেমিক কর্তৃক স্বামী খুন, বাসার কাজের লোক, বাবুর্চি, দারোয়ান, পিয়ন, ড্রাইভারের সঙ্গে গৃহকর্ত্রীর অবৈধ প্রণয়ের বহু নিকৃষ্ট খবর পত্রপত্রিকায় অহরহ ছাপা হয়। অন্যদিকে তিন সন্তানের জননী ছেলের বয়সী গৃহশিক্ষকের হাত ধরে পালিয়েছে এমন শত শত ঘটনা হররোজ ঘটছে। রাজধানীর ধনীদের ক্লাবে মদ-জুয়ার আসরে নারী-পুরুষের বেলেল্লাপনা এবং অবাধ যৌনতা অনেকের গা-সওয়া হয়ে গেছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে শত শত রংমহল। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েরা সেখানে গিয়ে নানা কীর্তিকলাপ করে অনৈতিক আনন্দে মেতে ওঠার পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের ধান্দা করে এবং সেই টাকা দিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করে। ঘরের গৃহবধূরাও বসে নেই। তারাও ওসব রংমহলে যায়। কেউ যায় নিজেদের নাগরকে নিয়ে নিরাপদে কুকর্মটি করে আসার জন্য। আবার কেউ যায় রেডিমেট নাগরের দোলা খাওয়ার জন্য।
সমাজে বাবা-ছেলে, মা-মেয়ে, জামাই-শাশুড়ি, শ্বশুর-পুত্রবধূ, দেবর-ভাবী, ভাশুর-ভ্রাতৃবধূ প্রভৃতি পবিত্র সম্পর্কগুলো আজ কলঙ্কিত হতে শুরু করেছে। অর্থ-বিত্ত ক্ষমতা, স্বার্থ এবং যৌনতা নিয়ে পরিবারগুলোর নোংরা অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একেকটা পরিবার যেন জাহান্নামের টুকরা হয়ে গেছে। রাজধানীর একটি অভিজাত ক্লাবে ৬৩ বছর বয়স্ক এক ধনী ব্যবসায়ী বললেন- তার নাকি ২০/২৫ জন মেয়ে বন্ধু আছে, যাদের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। এদের মধ্যে বিবাহিতরা যখন তার সঙ্গে নির্ধারিত হোটেলে কুকর্ম করতে আসে তখন নাকি ওইসব মহিলার স্বামীরা তাদের স্ত্রীকে হোটেলে পৌঁছে দেয়। অনেক সরকারি-বেসরকারি অফিসের নারী ও পুরুষ কর্মকর্তাদের পরকীয়ার বেলেল্লাপনা সংশ্লিষ্ট সবার কাছে রীতিমতো ওপেন সিক্রেট।
সমাজে দেহব্যবসা, পরকীয়া, ধর্ষণ, জোর করে বিয়ে ইত্যাদি আদিকাল থেকেই ছিল। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো- অনাদিকাল থেকে পুরুষরাই এসব কর্মে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। অন্যদিকে সমাজ এসব অপরাধীকে ঘৃণা করত। তাদের কাজে বাধা প্রদান করত এবং সমাজে তাদের অপাক্সেক্তয় বলে বিবেচনা করা হতো। এর বাইরে পুরুষ কর্তৃক স্ত্রী, কন্যা বা আশ্রিত বিধবা বোন, ভাইয়ের স্ত্রী প্রমুখকে শাসনের নামে মারধরের ঘটনাও ছিল কোনো কোনো সমাজের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। যৌতুকের জন্য স্ত্রী বা পুত্রবধূকে পরিবারের সবাই মিলে নির্যাতন এবং হত্যার মতো শত শত ঘটনার চাঞ্চল্যকর খবর আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি। নারীর দুর্বলতা, অক্ষমতা এবং অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পুরুষরা এসব কুকর্ম করত বিধায় গত ৩০/৩৫ বছর ধরে রাষ্ট্র সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে আসছে নারীকে শিক্ষিত, স্বাস্থ্যবতী এবং ক্ষমতাবান করার জন্য। বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে নারীকে অসাধারণ সব সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা, আশ্রয় এবং স্বতন্ত্র জায়গা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে সব কর্তৃপক্ষ প্রাণপণে চেষ্টা করছে। নারীর জন্য সৃষ্টি হচ্ছে নিত্যনতুন কর্মক্ষেত্র, পদ-পদবি এবং ক্ষমতার বলয়।
গত ৩০/৩৫ বছরের রাষ্ট্রীয় চেষ্টার ফলে নারীর যথেষ্ট ক্ষমতায়ন হয়েছে। অন্যদিকে পরিবর্তিত সমাজে পুরুষদের পৌরুষের প্রকৃতি প্রদত্ত সৌন্দর্য ও গুণাবলি মারাৎদকভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘুষ, দুর্নীতি, অনাচার মিথ্যাচার, ব্যভিচার, অন্যায়, অপরাধ, জুলুম, জুয়া, মদ, প্রতারণা প্রভৃতি কর্মে পুরুষরা নিজেদের এতটাই জড়িয়ে ফেলেছে যে, নারীরা শ্রদ্ধা করার মতো মানুষ পাচ্ছে না। পরিবারের পুরুষটির ওপর নির্ভর, বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন কিংবা তাকে মন থেকে ভালোবাসার মতো স্পৃহা হারিয়ে ফেলছে। যেসব নারীর ক্ষমতা রয়েছে তারা প্রথমে বাধা দেয়, তারপর ঝগড়াঝাটি করে এবং শেষমেশ শুরু করে পুরুষ নির্যাতন। এত তো গেল ঘটনার প্রাথমিক পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে গিয়ে নারীবিদ্রোহী এবং স্বৈরচারী হয়ে ওঠে। সেও স্বামীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার শক্তি সামর্থ্য অনুসারে শুরু করে অন্যায়, অত্যাচার, ব্যভিচার। তৃতীয় পর্বে এসে পরিবারের তরুণ-তরুণী, আয়া-বুয়ারাও গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুকর্ম করতে করতে সমাজকে বিষাক্ত করে তোলে।
সমাজের উল্টোমুখী বিবর্তনের কারণে মেয়েদের অনৈতিক কর্মকা-, স্পর্ধা, বদভ্যাস ইত্যাদি কর্মকা- ভাইরাসের মতো এক পরিবার থেকে অন্য পরিবারে বিস্তার লাভ করে। ফলে অনেক নিরীহ, সৎ এবং প্রকৃত অর্থে ভদ্রলোক তাদের পরিবারের উ”চাভিলাষী বখে যাওয়া স্ত্রী-কন্যা এবং বোনদের দ্বারা নির্মম শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। ওইসব মহিলা প্রথমদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম পুরুষটিকে বলতে থাকে- ওমুক ভাই এত টাকা উপার্জন করে, তুমি পার না কেন? পুরুষটি যখন সততার দোহাই দিতে থাকেন তখন নারীরা বলে ওঠে- গোষ্টি মারি তোমার সততার। গোদে কাপড় নেই আর উনি সততা মারায়! তারপর নারীরা ধীরে ধীরে অন্ধকারের পথে পা বাড়ায় এবং মনের মতো ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ এবং কামুক প্রকৃতির জেনাকার সঙ্গী খুঁজে নেয়। কুকর্ম করতে করতে তাদের স্পর্ধা এতটাই বেড়ে যায় যে, নিজেদের গৃহে কুকর্মের সঙ্গীকে আমন্ত্রণ করে এনে স্বামী-সন্তানের সামনে বেলেল্লাপনা শুরু করে। কোনো স্বামী যদি এ কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তবে বহুমুখী নির্যাতন এবং সন্ত্রাসের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত হত্যাকা-ের শিকার হয় অথবা আৎদহত্যা করে।
সামাজিক মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক, স্কাইপে, হোয়াটস এ্যাপ, ভাইবার, ট্যাংগো ইউটিউব এমএসএন প্রভৃতি যারা ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা খুব ভালো করেই জানেন যে, নারী-পুরুষের সম্পর্ক এখন অনৈতিকতার কোন স্তরে পৌঁছে গেছে। অনেকেই সারা রাত ঘুমায় না, তারা একেকজন তাদের বিপরীত লিঙ্গের শতাধিক জনের সঙ্গে সারা রাত ধরে এমন সব কথাবার্তা বলে এবং কা-কারখানা করে যা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। ফলে দিনের বেলায় এসব লোক একটি ক্লান্ত দেহ, বিষাক্ত চিন্তা এবং অশ্লীল মন নিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে যে যার অবস্থান থেকে শুরু করে মহাজুলুম। হয়ে যায় মস্তবড় ফেরাউন, আবু জেহেল কিংবা মোকিম গাজীর মতো দুর্র্ধষ ডাকাত। ইতিপূর্বে এসব পদ-পদবি এককভাবে পুরুষরা ভোগ করত। এখন নারীরা ব্যাপকভাবে ফেরাউন, আবু জেহেল কিংবা মোকিম গাজী হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করতে করতে বিজয়িনীর আসন দখল করেছে। এদের নির্যাতনের কোনো বাপ-মা নেই, নেই স্বামী-পুত্র বা কন্যার বাছবিচার। এ অবস্থায় অসহায় ভুক্তভোগীরা রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা দাবি করতেই পারে। অন্যদিকে রাষ্ট্র তার নির্যাতিত পুরুষ গোষ্ঠীর জন্য কী করবে তা তো কেবল কর্তৃপক্ষেরই এখতিয়ার।