Sat. Sep 20th, 2025
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৫ প্রথম সুযোগেই সাফল্য পেয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং 93ধোনি। জিতেছিলেন ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এরপর তাঁরই নেতৃত্বে ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপ জয়, ২০১৩ ইংল্যান্ডের প্রতিকূল কন্ডিশনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়। ধোনিই একমাত্র অধিনায়ক, যাঁর অধীনে দল জিতেছে আইসিসির তিনটি টুর্নামেন্টই। তা-ই নয়, ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়কও তিনি। তবুও কেন ভারতীয়দের কাছে ধোনি নিন্দিত? জেনে নিন এর নেপথ্য পাঁচ কারণ- ১. সিনিয়র হটাও ২০০৭ সালে নেতৃত্ব নেওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করা অনেক খেলোয়াড়কে দলে সুযোগ করে দিয়েছেন ধোনি। তবে এ কারণে কপাল পুড়েছে অনেক সিনিয়র খেলোয়াড়ের। ২০০৭ বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে তুমুল সমালোচনার মুখে ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়, শচীন টেন্ডুলকার, অনিল কুম্বলে ও সৌরভ গাঙ্গুলির মতো সিনিয়র খেলোয়াড়েরা। অধিনায়কত্বও চলে যায় দ্রাবিড়ের। তা-ই নয়, টেন্ডুলকার বাদে ওয়ানডেতে অধিকাংশ সিনিয়র খেলোয়াড় ব্রাত্য হয়ে পড়েন। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর সিনিয়র খেলোয়াড়দের তালিকায় আরেকবার কাঁচি চালানো হয়। গৌতম গম্ভীর, জহির খান, যুবরাজ সিং ও বীরেন্দর শেবাগদের মতো পরীক্ষিত সৈনিকদের খুব বেশি সুযোগ দেওয়া হয়নি তখন। পথ প্রশস্ত করা হয়েছে আইপিএলে ভালো খেলা তরুণ খেলোয়াড়দের। গাম্ভীর, শেবাগদের আর কখনোই ভারতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ার পেছনে ধোনির হাত রয়েছে বলেই অনেকের ধারণা। ২. বিদেশে ত্রাহি দশা ২০০৮ সালে অনিল কুম্বলের কাছ থেকে নেতৃত্ব নেওয়ার পর ধোনি কেবল সীমিত ওভারে সাফল্য পাননি, পেয়েছেন ক্রিকেটের বড় দৈর্ঘ্যেও। টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত এক নম্বর দল হয়েছে ‘ক্যাপ্টেন কুলে’র নেতৃত্বেই। তা-ই নয়, সৌরভ গাঙ্গুলির সর্বোচ্চ ২১ টেস্ট জয়ের রেকর্ডটিও ভেঙে দিয়েছেন ধোনি। তবে এর বাইরে ব্যর্থতাও রয়েছে। ধোনির অধিনায়কত্বে বিদেশের মাটিতে একের পর এক ব্যর্থতায় হাবুডুবু খেয়েছে ভারত। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধবলধোলাই, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হার। সর্বশেষ অধিনায়কত্ব করা অস্ট্রেলিয়া সিরিজও হার। বিদেশের মাটিতে ধোনির অধিনায়কত্বে ৩০ টেস্টের ১৫ টিতে হেরেছে ভারত। আর একটি ম্যাচ হারলেই ছুঁয়ে ফেলতেন স্টিভেন ফ্লেমিং ও ব্রায়ান লারার সর্বোচ্চ ১৬টি টেস্ট হারের রেকর্ড। ৩. অতিমাত্রায় ‘চেন্নাই-প্রীতি’ আইপিএলের শুরু থেকেই চেন্নাই সুপার কিংসের (সিএসকে) অধিনায়কত্ব করছেন। ২০১০ ও ২০১১ সংস্করণে দলকে চ্যাম্পিয়নও করেছেন। সন্দেহ নেই, আইপিএল থেকে উঠে এসেছে ইউসুফ পাঠান, সুরেশ রায়না, স্টুয়ার্ট বিনি, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়েরা। তবে ধোনির বিরুদ্ধে অভিযোগ, যোগ্য অনেক খেলোয়াড়কে এড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে সিএসকে খেলোয়াড়দের জাতীয় দলের সুযোগ করে দিয়েছেন। ৪. বাজে ফর্মের পরও দলে রাখা ফর্ম নেই, তবুও দিনের পর দিন দলে পছন্দের খেলোয়াড়কে সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগও ধোনির বিরুদ্ধে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ রোহিত শর্মা। ২০১২ সালটা ভীষণ বাজে গেছে এ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। ওই বছর ১৩ ম্যাচে রোহিতের মাত্র এক ফিফটি। এর মধ্যে দুই অঙ্কই ছুঁতে পারেননি আট ম্যাচে। তবুও রোহিত নিয়মিত সুযোগ পেয়েছেন। তা-ই নয়, রোহিতকে ব্যাটিং অর্ডারে চার-পাঁচ থেকে ‘পদোন্নতি’ দিয়ে ওপেনিংয়ে নিয়ে এসেছেন। অবশ্য ওপেনার হিসেবে রোহিত সাফল্য পাওয়ায় ধোনির বিরুদ্ধে ওঠা সে সমালোচনা থেমেছে। রোহিতের ভাগ্য যতটা সুপ্রসন্ন ছিল, রবীন্দ্র জাদেজার ততটা নয়। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অসাধারণ খেলার পর আর বলার মতো পারফরম্যান্স নেই জাদেজার। গত বছর নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফরে ছন্দে থাকা অশ্বিনের জায়গায় কেন জাদেজাকে একাদশে নেওয়া হয়েছিল, সে উত্তর আজও অজানা। বাজে পারফরম্যান্সের পরও ধোনির নিয়মিত সমর্থন পেয়েছেন জাদেজা। ৫. ‘ফিনিশ’ হওয়ার পথে ফিনিশার বিশ্বের অন্যতম সেরা ‘ফিনিশার’ তকমা যাঁর গায়ে, সেই ধোনি নিজেই যেন ‘ফিনিশে’র পথে! ধোনি উইকেটে থাকছেন অথচ দল জিততে পারছে না। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আগের সেই বীরত্বগাথা। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৮ রানের তাড়া করতে নেমেছিল ভারত। ৪১ বলে ৭০ করে জয়ের কাজ বেশ এগিয়ে দিয়ে এসেছিলেন বিরাট কোহলি। তবে ম্যাচটা কঠিন করে ফেললেন ধোনি। দরকার ছিল ৪২ বলে ৪৯। উইকেটে যুবরাজ সিং ও ধোনি। যখন রান তোলার ভীষণ তাড়া, ধোনি খেললেন ২৩ বলের ২২ রানের ইনিংস। ছক্কা নেই একটিও। চার মাত্র দুটি। ভারত হারল ১ রানে। গত বছর সেপ্টেম্বরে বার্মিংহামে ইংলিশদের বিপক্ষে ১৮১ রানের লক্ষ্য ছিল ভারতের। একপর্যায়ে ভারতের দরকার ছিল ৩৫ বলে ৫০। রায়না-ধোনি উইকেটে। রায়না ফিরে গেলে ছন্দে থাকা আম্বাতি রাইডুকে অপেক্ষায় রেখে জাদেজাকে নামালেন। জাদেজা ফেরার পর শেষ সাত বলে তিনটি সিঙ্গেল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেননি। হয়তো নিজের কাছেই স্ট্রাইক রাখতে চেয়েছিলেন। শেষ ২ বলে দরকার ছিল ৫ রান। ভারতীয়রা বড় আশা নিয়ে যখন ধোনির দিকে তাকিয়ে, নিতে পারলেন ১ রান। ভারত হারল ৩ রানে।