Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১১ অক্টোবর ২০১৫ চীনে বর্তমানে ২০ বছরের কম বয়সী যেসব ছেলেরা 9ধূমপান করছে, এ বদভ্যাস না ছাড়লে ২০৩০ সাল নাগাদ ওই ধূমপায়ীদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন অকালে মারা যেতে পারে। সম্প্রতি দ্য লেনসেট নামের একটি চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকীতে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনেই এমনটা দাবি করা হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ‘দ্য চাইনিজ একাডেমি অব মেডিসিন সায়েন্স’ ও ‘চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ যৌথভাবে এ গবেষণাটি করে। তারা গত ১৫ বছর ধরে চীনের কয়েক লাখ মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করে। গবেষণায় দেখা যায়, ২০ বছরের আগেই দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ ছেলে ধূমপান শুরু করে। তাঁদের অর্ধেকেরই ধূমপানের কারণে মৃত্যু হয়। এ গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসি গত শুক্রবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই গবেষণায় জানানো হয়, ২০১০ সালে চীনে প্রায় ১০ লাখ মানুষ তামাক গ্রহণের কারণে মারা গেছে। কিন্তু গবেষকেরা জানিয়েছেন, বর্তমান হারে তামাক গ্রহণ অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে তামাক সৃষ্ট রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২০ লাখে দাঁড়াবে। যাদের বেশির ভাগই ছেলে। এটিকে ‘অকাল মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান মহামারি’ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চীনে মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ (৩০ কোটি) মানুষ ধূমপান করে। দেশটির মোট পুরুষদের অর্ধেকের বেশি ও নারীদের দুই দশমিক চার শতাংশ ধুমপায়ী বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এমন অবস্থার পরও সহগবেষক রিচার্ড পেতো আশাবাদী। তিনি বলেন, জনগণকে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে এ বদঅভ্যাস ছাড়াতে আগ্রহী। পেতো বলেন, ‘মৃত্যুর এ মহামারি রোধ করার একমাত্র উপায় হলো এখনই ধূমপান বন্ধ করা। আর আপনি যদি তরুণ হন, তাহলে দয়া করে ধূমপান করতে শুরু করবেন না।’ চীনে ধূমপানের এমনই অবস্থা এমন যে, দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা খাবার শেষে করেই টেবিল থেকে চেয়ারটা পেছনে ঠেলেই সিগারেট ধরান। দেশটিতে নামীদামি ব্র্যান্ডের সিগারেট উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। আবার সিগারেটের দামও খুব গরিব ক্রেতার সামর্থ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে। মাত্র আড়াই ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ টাকার সমান) খরচ করে এক প্যাকেট সিগারেট কেনা যায়। ধূমপান যেন চীনাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ পরিণত হয়েছে। তাঁদের খুব কমই ধূমপানের ক্ষতিকারক দিকটা অনুধাবন করতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে চীনে মাত্র ২৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ফুসফুসের ক্যানসার ও হৃদ্রোগের মতো অসুখের জন্য ধূমপানকে দায়ী করে। এ ছাড়া, মাত্র ১০ শতাংশ ধূমপায়ী নিজের ইচ্ছায় ধূমপান ছাড়ে। বাকিরা ধূমপান ত্যাগের চেষ্টা করে, তবে তারা ধূমপান ছাড়তে গিয়ে আসলে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে ধূমপান করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। যেখানে উন্নত বিশ্বে ধূমপায়ী লোকদের সংখ্যা দিন দিন কমছে, সেখানে চীনের চিত্রটা ঠিক বিপরীত। বিশ্বে সিগারেটের সবচেয়ে বড় ভোক্তা চীন। দেশটির একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ২২টি সিগারেট খান। দেশটির শাসন কর্তৃপক্ষ এ কারণে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এরপর জনসমক্ষে সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ করা বা সিগারেট পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে সরকারকে বেগ পেতে হচ্ছে। কেননা সিগারেট লোকজনের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। আর তামাক খাত থেকে সরকার বিশাল অঙ্কের রাজস্ব পায়। এক হিসাবে দেখা গেছে, চীন সরকার প্রতি বছর তামাক খাত থেকে ৬ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে ধূমপায়ীদের অর্ধেক তামাকজনিত রোগে মারা যাচ্ছে।