খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৫: যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আবেদন শুনানি শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় এই রিভিউয়ের রায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত। একই সময়ে আরেক যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মো. মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের রায় হওয়ার কথা রয়েছে।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সকাল ৯টার পর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
শুরুতে সাকা চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার যুক্তি তুলে ধরেন। দেড় ঘণ্টা শুনানির পর আদালত বিষয়টি রায়ের জন্য রাখে।
মঙ্গলবার আপিল বিভাগে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের রিভিউ শুনানির দিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকার আবেদনের শুনানি হওয়ার দিন ঠিক ছিল।
তবে মুজাহিদের আবেদনের শুনানির পর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সময় চাইলে তা মঞ্জুর করে আদালত।
সাবেক দুই মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ উভয়েরই প্রধান আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার মাহবুব।
এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার রিভিউ শুনানি ও রায়ের দিন থাকায় আগের দিনের মতোই সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো প্রবেশ পথে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। ঢোকার সময় সবার পরিচয়পত্র দেখা হচ্ছে। সন্দেহ হলে করা হচ্ছে তল্লাশি।
মৃত্যুদণ্ড বহালের রায়ের পর যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদেরের শেষ আইনি সুযোগ এই রিভিউ আবেদন। এ আবেদনে রায়ের কোনো পরিবর্তন না হলে তার সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে।
এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে।
রিভিউ শুনানিতে পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজনের সাফাই সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন করেছিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের। তার ওই আবেদন ২ নভেম্বর খারিজ হয়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে গত ২৯ জুলাই আপিল বিভাগও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর।
এরপর নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে থাকা সালাউদ্দিন কাদেরকে সেই মৃত্যু পরোয়ানা ১ অক্টোবর পড়ে শোনানো হয়।
সালাউদ্দিন কাদেরের রিভিউ আবেদন দায়েরের পর রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য গত ১৫ অক্টোবর আবেদন করে।
এরপর সালাউদ্দিন কাদের রিভিউ শুনানিতে পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ১৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, যাতে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ওই আটজনের নামে সমন জারির আরজি জানানো হয়।
এরা হলেন- পাকিস্তানের স্থপতি মুনিব আরজুমান্দ খান, পাকিস্তানের ডন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমবর হারুন সায়গল, পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি, ভিকারুন্নেসা নূনের নাতি রিয়াজ আহমেদ নূন এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মিয়া মোহাম্মদ সুমরো।
২০ অক্টোবর এসব আবেদন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে, আদালত রিভিউসহ এ আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।
২ নভেম্বর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ সালাউদ্দিন কাদেরের আবেদন খারিজ করে ১৭ নভেম্বর রিভিউ শুনানির দিন ঠিক করে দেয়।