Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

56খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৫ : বাস্তব জীবনে এমনও এমনও অনেক ঘটনা ঘটে যা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। জীবনের যত অদ্ভুত এবং প্রকাশ করা যায় না এমন অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে উৎসাহ জোগায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। সেখানে এক তরুণ তার জীবনের এমন অভিজ্ঞাতার কথা জানালেন যা মুহূর্তেই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে গেলো। তার স্ত্রীর ধর্ষকের সন্তানকে তিনি কিভাবে বুকে টেনে নিলেন সেই কাহিনী তুলে ধরেছেন এখানে।
তিনি যেভাবে অভিজ্ঞতার বয়ান করেছেন সেভাবেই তুলে ধরা হলো। তিনি লিখেছেন, ‘আমার বয়স ২৯ বছর। সাত বছর আগে বিয়ে হয় আমাদের। ফুটফুটে একটা মেয়ে রয়েছে ঘর আলো করে। ওর বয়স এখন ছয় বছর। বিয়ের ঠিক ৯ মাসের মাথায় জন্ম হয় ওর।
মেয়েটার জন্ম আমার সামনে এক নতুন পৃথিবীর জন্ম দেয়। তবে একটা বিষয় মাঝে মধ্যে চিন্তা হয়ে ধরা দিতো। বিয়ের পর আমার স্ত্রী অধিকাংশ সময়ই তার বাবার বাড়িতে থাকতো। খুব দ্রুতই সে ওই বাড়িতেই থাকা শুরু করলো। সেখানেই আমাদের সন্তানের জন্ম হলো। সেখান থেকেই সে হাঁটা শিখলো এবং একসময় স্কুলে যাওয়া শুরু করলো। আমার স্ত্রী এবং কন্যার সময়টা নানা বাড়িতেই কাটতে থাকলো টানা ৫ বছর।
এরপর হঠাৎ করেই এই ছোট পরিবারটাকে আরো বড় করার প্রয়োজন অনুভব করলো আমার স্ত্রী। খুব সিরিয়াস হয়ে গেলো সে। তা ছাড়া সাংসারিক জীবনের নিয়মিত টানাপড়েন তো আছে। ভাবলাম, আরো একটা সন্তান আসলে হয়তো অনেক ঝামেলাই দূর হবে। কিন্তু সমস্যাটা হলো অন্য জায়গায়। এক বছর পর বোঝা গেলো, আমার স্ত্রী গর্ভধারণ করতে পারছেন না। আমার শুক্রাণু এবং ওর গর্ভের উর্বরতা পরীক্ষা করতে গেলাম চিকিৎসকের কাছে। রিপোর্টে জানলাম, আমার শুক্রাণুর উৎপাদনশীলতা নেই। আমার স্পার্মে স্ত্রীর গর্ভধারণ সম্ভব নয়।
প্রচণ্ড যন্ত্রণা আর কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরলাম রিপোর্ট হাতে। স্ত্রী বিরামহীনভাবে কেঁদে চলেছেন। আরেকটি সন্তান দিতে পারলাম না স্ত্রীকে। আমি ওর কাছে অন্তঃস্থল থেকে ক্ষমা চাইলাম। বললাম, আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমাকে আরেকটা সন্তান দিতে পারলাম না আমি। কিন্তু একটা ফুটফুটে উপহার ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন।
ঠিক সেই সময়টাতেই আমার স্ত্রী নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। অসম্ভব বেদনা আর যন্ত্রণাকাতর হয়ে সে আমাকে যে কাহিনী শোনালো, তাতে আমার ভেতরটা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেলো। স্ত্রী বলে যেতে লাগলো, আমরা যেখানে থাকতাম সেখানকার একটি ছেলে আমাকে বিয়ে করতে চাইলো। কিন্তু আমি ওকে মোটেও দেখতে পারতাম না। ও বার বার আমাকে প্রস্তাব দেয়। প্রতিবারই ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি আমি। আমার এই আরচণ ছেলেটি মেনে নিতে পারেনি। তোমার সঙ্গে বিয়ের কিছু দিন আগেই ছেলেটি তার বন্ধুদের সহায়তায় আমাকে অপহরণ করলো। আমি কলেজ থেকে ফিরছিলাম। ওরা আমাকে তুলে নিলো। সেই ছেলেটি আমাকে ধর্ষণ করলো এবং রাস্তার পাশে ফেলে চলে গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেলো, এটা তার প্রতিশোধ।
রসধমবথ২৭০৪৭৩.ভধঃযবৎস্ত্রী বলতেই থাকলেন, কিছুদিন বাদেই আমাদের বিয়ে হলো। ঠিক তখন থেকেই আমি পিরিয়ড মিস করলাম। এ অবস্থায় আমরা হানিমুনে চলে গেলাম। কি করবো এবং কিভাবে করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কেবল সময় চলে যেতে থাকলো।
বিয়ের প্রথম বছর বাবা বাড়িতে ঘন ঘন যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, ওই ধর্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে হাজিরা দেওয়া। আমার শুক্রাণুর উর্বরতা ছিল শূন্য। তাই আমি বুঝিনি আমার স্ত্রীর গর্ভে আমার সন্তান আসেনি। এভাবেই বিয়ের ৯ মাসের মাথায় ঘর আলো করে আমার সংসারে এলো ধর্ষকের সন্তান। ওকে পরম আদরে বড় করতে থাকলাম। দেখতে দেখতে ছয় বছর বয়স হলো আমার কলিজার টুকরার।
স্ত্রীর কাছ থেকে এ গল্প শোনার পর আমার দুনিয়াটা কাঁপতে থাকলো। বিগত ৫ বছরে আমার স্ত্রী চোখে-মুখে স্পষ্ট হয়ে থাকা কষ্টের কারণ আমি বুঝতে পারলাম। সেও এ যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে চলেছে। যে সন্তানে জন্ম দিয়েছে সে, তাকে ঘৃণা করতে পারেনি। ঘটনা জেনে আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশি অবর্ণনীয় কষ্ট আমার স্ত্রী ভোগ করে চলেছে। তার তো কোনো দোষ ছিল না। ওর ধর্ষকই তো আসল দোষী। যে শিশুটিকে আমি প্রতিদিন বুকে জড়িয়ে রাখি, তারই বা কি দোষ?
তবে যেদিন এই গল্পটা আমি শুনেছি ওই দিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের এই মেয়েটিকে মৃত্যু আগ পর্যন্ত ভালোবেসে স্ত্রীর জীবনের সব ‘ভুল’ শুধরে নেবো’।