Mon. May 5th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

43খোলা বাজার২৪॥ মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৫: জনপ্রিয় নাট্য অভিনেতা অপূর্বর প্রথম সিনেমা হিসেবে ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এর প্রতি অপূর্ব ভক্তদের আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। পরপর কয়েকটি অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা নির্মাণের পর পরিচালক আশিকুর রহমানের কাছ থেকে ভালো কিছুই আশা করেছিল দর্শক। কিন্তু কিছুটা হতাশই হতে হলো।
‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’- এর গল্পে নতুন কিছু নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর অভাবের তাড়নায় অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে স্নাতকপড়ুয়া এক যুবক। পরিস্থিতি বদলানোর পর যখন সে এই জগত থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তখন তার খেসারত দিতে হয় পরিবারকে হারিয়ে।
সিনেমাটির গল্প নতুন না হলেও চিত্রনাট্যের গাঁথুনি সবল হলে তা উৎরে যেতে পারতো। সিনেমার প্রথমার্ধে বলা হয়েছে এক বছর আগের গল্প, যা অনেকটা তাড়াহুড়ো করে শেষ করা হয়েছে। যার ফলে কয়েকটি দৃশ্য বাস্তবঘনিষ্ট মনে হয়নি। এমনকি গল্পের গতি-প্রকৃতি বুঝে নিতেও ঝক্কি পোহাতে হয়। এর ফলে বিরতির আগেই ধৈর্যচ্যুতি ঘটার সম্ভাবনা রয়ে যায়।
কিন্তু বিরতির পরে চোখে পড়ে যতেœর ছোঁয়া, যা প্রথমে ছিল অনুপস্থিত। মূলত সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধেই শুরু হয় গ্যাংস্টার শাওনের আসল গল্প। তবে ‘কিস্তিমাত’- এর মতো আরো একবার সিনেমায় দৃশ্যায়নের বেলায় হাস্যরস ও গাম্ভীর্যের সামঞ্জস্য রাখতে পারেননি পরিচালক।
সিনেমাটির মূল চরিত্র গ্যাংস্টার শাওনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। যদিও তার চেয়ে সিনেমায় শক্তিশালী মনে হয় খলনায়ক রবির চরিত্রকে। সিনেমার শুরুতেই অপূর্বকে দেখা যায় মারদাঙ্গা অ্যাকশন দৃশ্যে, যার ফলে চরিত্রটির সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে দর্শককে কিছুটা বেগ পেতে হয়।
রোমান্টিক আর পারিবারিক চরিত্রে সাবলীল অপূর্ব অ্যাকশন দৃশ্যে ততটা মানিয়ে নিতে পারেননি। তবে অভিনেতা হিসেবে চেষ্টার কমতি ছিল না তার। হয়তো তাকে অ্যাকশন হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠায় পরিচালকের আরো একটু দক্ষতা দেখানোর দরকার ছিল।
‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’- এ নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া এবং লাক্স তারকা আরাবি। শাওনের কলেজ জীবনের প্রেমিকা তিতলির চরিত্রে আরাবির অভিনয় অতি-অভিনয় মনে হয়েছে। তবে সিনেমার প্রথম অংশেই তার চরিত্রের অবসান ঘটে।
এছাড়া নায়কের বোনের চরিত্রটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ থাকলেও পর্দায় তা ফুটিয়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন অভিনেত্রী কোয়েল।
এবার আসা যাক পিয়ার অভিনয় প্রসঙ্গে। অভিনেত্রী হিসেবে ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই র্যাম্প মডেল, কিন্তু ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এ তার অভিনয় মাঝে মাঝে আনাড়ি মনে হয়েছে। সিনেমাতে পিয়ার আগমন একটি আইটেম গানের মাধ্যমে। গানটিতে তার দৈহিক গঠনের সঙ্গে মানানসই নাচের ভঙ্গি দেখা যায়নি।
পিয়ার দৈহিক গঠন অনুযায়ী পোশাক নির্বাচনের বিষয়েও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন ছিল। বলা যায়, পিয়ার সৌন্দর্যকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি।
‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র রবিউল ইসলাম ওরফে টাইগার রবি। খলচরিত্রে এই অভিনেতা যা দেখিয়েছেন তা নায়কের চরিত্রকেও হার মানিয়েছে। খলনায়কের দাম্ভিকতার পাশাপাশি মাঝে মাঝে হাস্যরসেরও অবতারণা করেছেন। তবে কোনোটাই অতি-অভিনয় মনে হয়নি শিল্পী হিসেবে তার দক্ষতার কারণে। তার অভিনয়ের ধরন অনেকটা ভারতীয় অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের কথা মনে করিয়ে দেবে দর্শককে।
মূলত চিত্রগ্রাহক হিসেবে ঢাকাই সিনেপাড়ায় পা রাখা পরিচালক আশিকুর রহমান সিনেমাটির চিত্রগ্রহণে কোন ক্রুটি রাখেননি। তবে কারিগরি দিক থেকে অনেক ধরণের ভুল আর অদক্ষতা চোখে পড়েছে। বিশেষ করে সিনেমার প্রথমার্ধে আলোর ব্যবহার আর দৃশ্যগুলোতে রঙের তারতম্য ছিল চোখে লাগার মতো। আর গ্রাফিক্সের বেলায় নতুন করে কিছু বলার নেই, কারণ আনাড়ি ধাঁচের গ্রাফিক্স যেন বাংলা সিনেমার অংশ হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রকৌশলবিদ্যার ছাত্র আশিকুর রহমান চিত্রগ্রাহক হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন আরো আগে, কিন্তু পরিচালনার ক্ষেত্রে এবারও দেখা গেছে কয়েকটি নির্দিষ্ট ভুল। দর্শকের প্রত্যাশা আর চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরো শক্তিশালী চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করলে এই নির্দেশক চমৎকার চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারবেন বলেই মনে হয়।