Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

38খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫: যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল দুই বাংলার চলচ্চিত্র ‘ব্ল্যাক’- এর বিরুদ্ধে। সিনেমাটি দেখে বলতে হয়, যা রটে তা একটু হলেও ঘটে।

হাতে গোনা কয়েকজন বাংলাদেশি কলাকুশলী, গতানুগতিক গল্পকাঠামো আর রঙচঙে কয়েকটি গান দিয়ে সাজানো হয়েছে অ্যাকশন-রোমান্স ‘ব্ল্যাক’। নির্মাণ করেছেন কলকাতার পরিচালক রাজা চন্দ। এতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের বিদ্যা সিনহা সাহা মিম এবং পশ্চিমবঙ্গের সোহম। এছাড়া আছেন অমিত হাসান, রজতাভ দত্ত, আশিস বিদ্যার্থী এবং রুদ্র নীল।

‘ব্ল্যাক’- এর গল্প গড়ে উঠেছে বুলেট চৌধুরী নামের এক যুবককে কেন্দ্র করে। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে যার জীবন কার্বনের মতোই ‘ব্ল্যাক’ অর্থাৎ কালো। বুলেটের সৎ পুলিশ কর্মকর্তা বাবাকে মিথ্যা সামলায় ফাঁসিয়ে তার জীবন কেড়ে নেয় পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। শুরু হয় বুলেটের প্রতিশোধ নেয়ার খেলা।

অ্যাকশন ঘরানার হওয়ায় ‘ব্ল্যাক’কে নায়ককেন্দ্রিক সিনেমাই বলা যায়। প্রায় তিন ঘণ্টার সিনেমায়, পর্দা সোহমের দখলেই ছিল বলা চলে। ‘ব্ল্যাক’ দশকের পর দশক ধরে যে গৎবাধা ফর্মুলায় মাঝারি মানের বলিউডি অ্যাকশন সিনেমাগুলো নির্মিত হয়ে আসছে, সেই একই ফর্মুলা মেনে বানানো। প্রতিশোধপরায়ণ নায়ক আর অসহায় নায়িকার এই সেই চিরচেনা গল্পে বাংলাদেশের মিম তেমন একটা জায়গা করে উঠতে পারেননি। তবে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে সিনেমায় জৌলুস বাড়ানোর কাজটি করেছেন। তাকে যথেষ্ট গ্ল্যামারাস করে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে গানগুলোতে দর্শকের চোখ থাকবে মিমের দিকেই। যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশি নায়িকারা নিজের কাজ দেখানোর যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন, সেদিক থেকে মিমের খাতায় তেমন কিছুই যোগ হয়নি।

বিশেষ করে তুচ্ছ কারণে সিনেমার প্রেমিক সোহমের হাতে তার চড় খাওয়া কিংবা খলনায়কের ছোট ভাইয়ের তাকে ধর্ষণ করার চেষ্টার মতো পুরুষতান্ত্রিক দৃশ্যগুলো মিমকে কেবল একটি পরোক্ষ নারী চরিত্র হিসেবেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।

বুলেটের মূল শত্রু, একজন দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের শিল্পী অমিত হাসান। যাকে হত্যা করার জন্য প্রায় ২০ বছর ধরে অপেক্ষা করছে বুলেট, তার মৃত্যু এতো সহজেই হয়ে যায় যে দৃশ্যটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। এছাড়াও সিনেমার মূল মারামারির দৃশ্যে খলনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয় অন্য কেউ। ফলে বিরতির আগেই উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে ‘ব্ল্যাক’এর গল্প।

নায়ক হিসেবে সোহমের অভিনয় অতিরঞ্জিত মনে হয়নি। তবে চরিত্রের বিন্যাসে ছিল গাফিলতির চিহ্ন। ফলে নায়ক হয়েও জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারেননি তিনি।
সিনেমার বাকি অংশে উত্তেজনা ধরে রেখেছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা আশিস বিদ্যার্থী। ‘অগ্নি টু’র মতো ‘ব্ল্যাক’এও অন্যতম আকর্ষণ ছিল তার পর্দা উপস্থিতি। ওপার বাংলার জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়কে এখানে খানিকটা ভিন্নভাবে দেখা গেছে। তবে তার চরিত্রটি তেমন গুরুত্ব পায়নি বললেই চলে।

ভালো অভিনয় করেছেন হাওড়ার শিল্পী রুদ্রনীল ঘোষ। তার চরিত্রটি তেমন বড় কিছু না হলেও মূলত নিজের প্রতিভা দিয়েই দর্শকের মনে দাগ কাটবেন তিনি। এছাড়া মূল খলচরিত্রে দেখা গেছে রজতাভ দত্তকে।

পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য সিনেমার মতো ‘ব্ল্যাক’এও দেখা যায়নি বড় ধরনের কোনো কারিগরি খুঁত। বরং নেপথ্য সঙ্গীত, গ্রাফিক্স এবং চিত্র গ্রহণের দিক থেকে ঢাকাই সিনেমার চেয়ে এগিয়েই আছে তারা।

সিনেমাটির গানগুলোর চিত্রায়ন ছিল যথেষ্ট ভালো। বিশেষ করে মিম প্রতিটি গানে নিজের সৌন্দর্য দিয়ে দর্শককে মুগ্ধ করবেন। তবে মনে রাখার মতো কোনো গান শোনা যায়নি।

নানা ধরনের আইনি জটিলতার পর শেষমেশ বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মুক্তি পেয়েছে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘ব্ল্যাক’। কিন্তু যখন বাংলাদেশি দর্শকরা বিজয়ের চেতনা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে যাবেন সিনেমাটি দেখতে, তখন তাদের নিঃসন্দেহে হতাশ হতে হবে।