খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আন্দোলন নয়, নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারকে পরাস্ত করতে হবে।
বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
দশম সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির সময় কর্মসূচিতে বাধা পেয়ে চলতি বছরের শুরুতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ করে বিএনপি। সে সময় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়।
তবে ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের দ্বিতীয় বছর পূর্তি সামনে রেখে খালেদা জিয়া বলেন, “বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা বলতে চাই, দেশ বাঁচানোর জন্য আন্দোলন নয়, নির্বাচন দিয়ে তাদের (সরকার) ঘায়েল করতে হবে।”
পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো সময়ে পৌরসভা নির্বাচন দলীয় প্রতীক দিয়ে হয়নি। আমি আপনাদেরকে আহ্বান জানাব- আপনারা যে যেখানে আছেন, যে পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে ধানের শীষ প্রতীককে সম্মান করে ভোট দিন।”
বিএনপি ফের ক্ষমতায় এলে দেশে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য থাকবে না বলে অঙ্গীকার করেন খালেদা জিয়া।
“বিএনপি সরকারে আসলে সকল ধর্মের মানুষ শান্তিতে, আনন্দে এবং একসঙ্গে বসবাস করবে। কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। তাদের চাকরি ক্ষেত্রে কোনো রকম সমস্যা হবে না।”
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালযে খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে তেজগাঁও ক্যাথলিক মিশনের ফাদার এলবার্ট রোজারিওসহ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শতাধিক সদস্য অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন শিশুদের নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের আনা বড়দিনের কেক কাটেন।
খালেদা জিয়া খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের কল্যাণ কামনা করেন।
বক্তব্যে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, “আওয়ামী লীগ আজকে হিংস্র হয়ে উঠেছে। এরা মানুষের মতো মানুষ নেই। এদের মধ্যে মনুষ্যত্ব বলে কিছু নাই। এরা হিংস্র হয়ে গেছে। এরা পশুর চেয়েও অধম হয়ে গেছে।
“সেজন্য বলছি যে, আওয়ামী লীগের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে কোর্ট থেকে যে রায়টা দেওয়া হয়েছিল- ‘রং হেডেড’। আসলে যে পাগল মানুষকে দিয়ে কেনো দিন দেশ শাসন হয় না, তার অবস্থান গণভবনে না। তার অবস্থান হতে পারে পাবনারৃ কী যে বলে? অবস্থান সেখানে হলে সুস্থ হয়ে আবার রাজনীতি করতে পারেন।”
নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এখন তিনি সম্পূর্ণ অসুস্থ এবং মানসিক দিক থেকে আরও বেশি অসুস্থ। মানসিক রোগী কখনো দেশ শাসন করতে পারে না।”
বছরের শুরুতে বিএনপির আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, “আপনারা দেখেছেন, আমাদের ওপর কী নানা রকম ঝামেলা করেছে।”
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের সময় তাদের ওপর ‘দমন-নিপীড়ন না হলেও’ এখন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, “তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছে, কত গাড়ি জ্বালিয়েছে, কত ব্যাংক লুট করেছে, কত ব্যাংক জ্বালিয়েছে। চট্টগ্রাম পোর্ট বন্ধ করে রেখেছে। চট্টগ্রাম-ঢাকার সব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।
“তারপরও আমরা কখনো পুলিশ দিয়ে গুলি করে কোনো মানুষকে হত্যা করার কথা চিন্তা করিনি। কারণ আমার দেশের মানুষকে গুলি করে মারতে পারি না, আমার দেশের ছেলেদের গুম করতে পারি না। কিন্তু আজ সেটা চলছে।”
বর্তমানে দেশে কারোর কথা বলার অধিকার নেই দাবি করে বিএনপি নেত্রী বলেন, “কথা বলতে দেওয়া হয় না। টকশোতে কেউ সত্যিকার অর্থে কথা বললে তাদের ধরে নিয়ে যায়। অথচ সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকারীকে আজও ধরেনি।”
প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে দলীয়করণের অভিযোগের পাশাপাশি ন্যায়বিচার না পাওয়ার কথা বলেন খালেদা জিয়া।
বড়দিনে সরকার পতনের প্রার্থনার আহ্বান জানিয়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা চাই, আপনারা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে বড়দিন পালন করুন। সেদিন আপনারা প্রার্থনা করবেন- আমাদেরকে ওই সব জালেম, অত্যাচারী, খুনিদের হাত থেকে, গুম-খুন-হত্যার হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করে। যিশু খ্রিস্টের কাছে এটাই হোক প্রার্থনা। এ দিনটি আপনাদের কাছে যেমন আনন্দের, আমাদের কাছেও তেমন।”
খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এলবার্ট পি কস্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকোমল বড়ুয়া, বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জন গোমেজ, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক মার্শেল এম চিরান, ময়মনসিংহের শশধর দ্রং, দিনাজপুরের যাজক নির্ভয় দাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী, দলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন ও জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।