Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

47খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ : বাংলা কিংবা ইংরেজি কোন অভিধানেই ‘পিনিক’ শব্দটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আটপৌরে জীবনে আকাশে মেঘ ডাকলেও পিনিক না ডাকলেও পিনিক। দিনে-রাতে সবসময় পিনিক। চাঁদ উঠলে কিংবা না উঠলেও পিনিক। নিমাই কিংবা কলকি অথবা ডাইল, কেরু অথবা ভেরন্স, ভিসা কিংবা পাসপোর্ট সব কিছুতেই নাকি পিনিক। জুতার আঠা তাতেও নাকি আবার বিরাট পিনিক। আর ইদানিং সবচেয়ে বেশি পিনিক নাকি বাবার (ইয়াবা) পিনিক।
‘পিনিক’ শিরোনামে খোঁজের এ অনুষ্ঠানটির নাম করণের স্বার্থকতা জানানোর পাশাপাশি ৫৬ হাজার বর্গ মাইল জুড়ে ‘পিনিক’ অর্থাৎ মাদক সা¤্রাজ্যের রাজা, উজির আর প্রজাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো।
‘পিনিক’ একভাবে অর্থহীন শব্দ আর অন্যভাবে বহু অর্থবোধক। রাজধানী থেকে সীমান্তের কাঁটাতার পর্যন্ত ‘পিনিক’ শব্দটি বহুল উ”চারিত। রাজধানীতে পৌনে সাত হাজার জায়গায় তার স্পট রয়েছে। অংকের নিয়মে প্রায় প্রতি এক বর্গ কিলোমিটারে রয়েছে একাধিক পিনিকের স্পট। তার মধ্যে আবার জনপ্রিয়তার বিচারে আছে টপ চার। এর মধ্যে রোল এক তেজগাঁও, দুই দয়াগঞ্জ এভাবে রোল হল আট হল কমলাপুরের। নেশার পরিভাষায় ডাইলে এক পিনিক, বাবায় আরেক পিনিক আর গাজায় অন্য মাত্রার পিনিক। পিনিক মানে সুখ নেশার সুখ সাময়িক বুদবুদের মতো। যা কিছুক্ষণ পর উড়ে যায়।
আমাদের লোকেশন কমলাপুর। পা টিপে-টিপে পিনিক গোষ্ঠীর একজন সেজে সেখানে পৌঁছালো খোঁজের অনুসন্ধানি দল। নেশার দ্রব্য বেচা-বিক্রিতে খুব একটা রাখ-ঢাক নেই।
এবারের লোকেশন নি¤œমধ্য বিত্তের স্বপ্নের ঠিকানা মিরপুর। মোটামুটি একই পদ্ধতিতে এই এলাকার জনপ্রিয় মাদক জোনে ঢুকে পড়ল খোঁজ।
এর পরের লোকেশন বস্তি। ঢাকার ৪ হাজার বস্তিতে বাসিন্দা ৩৫ লাখ। যাদের বেশিরভাগই দিন মজুর অথবা রিকশা-ভ্যান চালক। অভাবের অভিশাপ আর বাড়তি আয়ের লোভে তারা সেখানে তৈরি করেছে ‘পিনিক’ পল্লী।
যার একটির নাম আনন্দ বাজার বস্তি। বস্তির একজন বলেন, ‘সব মহল্লার লোক করে কিন্তু নাম হয় বস্তি আলাগোরে। বেচেয় বাইরের মানুষ কিন্তু না বেচবার দিলে রাইতে আসে সন্ত্রাসীদের নিয়া’।
এবার তালিকার এক নম্বরে থাকা তেজগাঁও মাদক জোনে প্রবেশের পালা। ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক দুটি সুবিধার কারণেই তার প্রথম স্থান অন্যদের পক্ষে দখল করা বেশ কঠিন। এখানে একই সঙ্গে আছে বস্তি, রেলস্টেশন আর শিল্প কারখানা।
প্রথমে দেখা যাক কারা এই ব্যবসায়ের সাথে জড়িত? উত্তর-সাধারণত একেবারে নি¤œ আয়ের মানুষেরা এই ব্যবসায়ের প্রান্তে অবস্থান করে। কেন এই ব্যবসা তার উত্তর একটাই বিপুল মুনাফা।
যেসব নেশার দ্রব্য আমদের দেশের বাজারে প্রতিদিন ছড়িয়ে পড়ছে তার একটিও দেশি নয়। একেবারে সবটাই বিদেশি। বাইরে থেকে সীমান্ত পার হয়ে আসে এসব নেশার দ্রব্য। কিভাবে সীমান্তে কাঁটাতার পেরিয়ে আসে এসব নেশার দ্রব্য তা জানতে খোঁজ টিম সীমান্তের মাদক স¤্রাজ্যে যায়।
সীমান্তের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে স্বদেশি আর ভিনদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে তাক করা বন্দুক। খোঁজ টিমের গন্ত্যব বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তের আখাউড়া অংশ। আকাঁ-বাঁকা অচেনা সীমান্ত পথ। কোথাও আবার উচুঁ- নিচু পাহাড়ি আর নির্জন পথ তবুও এগিয়ে চলা।
সীমান্ত বাসীদের সঙ্গে খোশ গল্পের ছলে পাওয়া গেল অনেক তথ্য। বোনাস হিসাবে চোরা কারবারিদের ছোট তালিকা পাওয়া গেল। তারা জানায় রাতের বেলা সীমানা প্রাচীর টপকে গাজা, ডাইল ছাড়াও অনেক ধরনের নেশার দ্রব্য আসছে প্রতিনিয়ত।
সরকারি হিসাব মতে বাংলাদেশ সীমান্তে শীর্ষ মাদক চোরাকারবারির সংখ্যা ৫৮ জন। অন্য দিকে ভারত থেকে ফেনসিডিল পাঠাচ্ছেন ৮২ জন। আর মিয়ানমারের তের ইয়াবা ব্যবসায়ী বাংলাদেশে প্রতিনিয়মিতই পাঠাচ্ছে গুটি। আর যে পরিসংখ্যানটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৮০ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে ৫০ টিরও বেশি স্পট দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ঢুকছে মাদক।
আখাউড়া সীমান্তের কাঁটাতারের ‘পিনিক’ স¤্রাজ্য মূলত তিনটি জোনে বিস্তৃত। তার একটি হল বিজয় নগর,দুইয়ে আখাউড়া আরেকটি হল কসবা। এই স্পট দিয়ে যেসমস্ত মাদক চোরাচালান হয় তার শীর্ষে আছে ফেনসিডিল।
আখাউড়া বর্ডারকে বলা হয় ডাইলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার। যেহেতু পাইকারি বাজার সেহেতু দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট বড় ডিলারদের ভিড় সেখানে লেগেই থাকে।
আখাউড়া সীমান্তে বা”চুর নাম সাকিব খানের নামের চেয়ে বেশি উ”চারিত। সব কিছুতেই নাকি তার ফিনিশিং টাচ থাকতেই হয়। না হলে হজম হবে না কারো। বা”চুর মটর বাইকের নিজস্ব ড্রাইভার আছে। নাম তার যাই হোক অভিনব এই ড্রাইভারের মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা। বা”চু সম্পর্কে স্থানীয় লোকেরা বলেন বা”চু প্রতি মাসে পুলিশকে ৯ লাখ টাকা মাসোয়ারা দেন। এলাকায় তার অনেক প্রভাব।
এই গল্পের শেষ নেই। অনেকেই নানাভাবে এই সব গল্প বলে সুপথ দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে যে খুব একটা লাভ হয়েছে তা বলা যায় না। কারণ আজও মাদকের কাল টাকার অর্থনীতি সাদা টাকার সমান্তরাল। তবে গণমাধ্যমকে তার কাজ করতেই হবে। তাই বলছি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণিদের মধ্যে একটি মাত্র পার্থক্য সেটি হল বিবেক-বুদ্ধি অথবা বোধশক্তি। কিন্তু সাময়িক সুখের এই পিনিক বিবেককে বিবশ করে, বোধকে করে বধির। তাই যারা নিজেকে ভালবাসেন তারা মাদককে হ্যাঁ বলবেন না।