Sat. Jun 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

imagesখোলা বাজার২৪, সোমবার, ৪ জানুয়ারি ২০১৬: গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় নির্বাচন হলো ক্ষমতা আরোহনের একমাত্র বৈধ পন্থা। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা এরং অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা নির্বাচন কমিশনের দ্বায়িত্ব। কিন্তু আমরা গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কি দেখতেছি। গত ০৫ জানুয়ারী ২০১৪-র নির্বাচনে আমরা কি দেখলাম। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ছিল সে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তারপর শোনা গেল বিনা প্রতিদন্দিতায় ৮/১০ জন নির্বাচিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ পার হলেও গণ হারে প্রায় ১৬ তারিখ পর্যন্ত বিনা প্রতিদন্দিতায় নির্বাচিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের চেয়েও বেশী ১৫৪ জনকে বিরোধীদলের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও; কোন নিয়মে, না-কি কোনো চাপে পরে বিনা প্রতিদন্দিতায় নির্বাচিত ঘোষনা করেন। যা বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের ইতিহাসেও বিরল। সে নির্বাচনে এরশাদ সাহেব চিকিতসার অজুহাতে-না-কি কোনো প্ররোচনায় অনেকদিন গুম হয়ে ছিলেন। সে নির্বাচনে এরশাদ সাহেব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য প্রত্যাহার পত্র নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠালেও নির্বাচন কমিশন না-জানি কার প্ররোচনায় তা আমলে না নিয়ে বহাল রাখেন। সে নির্বাচনে এরশাদ সাহেব এক পয়সারও লিফলেট বা ব্যানার না বানালেও ঠিকই তার নির্বাচনী এলাকায় কার প্ররোচনায় কে বা কারা লিফলেট বা ব্যানার টানায়।এমনকি এরশাদ সাহেব বা তার দলের কেউ তার পক্ষে একদিনও প্রচারনা চালান নি। অত:পর তিনি নির্বাচিত হয়ে গেলেন। তিনি যে নিখোঁজ অবস্থায় ছিলেন নির্বাচন কমিশনের দ¦ায়িত ¡(একজন প্রার্থী হিসেবে) থাকা সত্ত্বেও একটিবারের জন্যও খোঁজ নিলেন না। সারা বাংলাদেশে সহিংস ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী নামান নি। সে নির্বাচনে দেখা গেছে কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোট দিতে কোনো ভোটারি ছিল না বরং কেন্দ্রে কুকুর দেখা গেছে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন বলে বিদেশী কোনো পর্যবেক্ষন সংস্থা বা ব্যাক্তি এসেছিলেন না । মিডিয়ার কল্যাণে সারাদিন কেমন ভোট হয়েছে তা দেশবাসী দেখছে। ০৫% ভোটকে নির্বাচন কমিশন ৪০% বলছে এবং সন্তোষজনক বলে মত প্রকাশ করছে। এ নির্বাচন কমিশন যে নিজের সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে চলতে পারে না তার প্রমান পাওয়া গেল ২০১৫ সালে। প্রশাসনের এক ব্যাক্তি এক সন্মেলনে বললেন ২৮ এপ্রিল সিটি নির্বাচন হবে। অত:পর নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ হয়ে ২৮ এপিলেই নির্বাচনের ঘোষনা দেন এবং কমিশনের কাছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সমান চান। পুলিশ-প্রশাসন সে সময় বিরোধীদলের লোকজন গ্রেফতার করলেও নিব্যাচন কমিশন কোনো ভূমিকা রাখেন নি। সেনাবাহিনীও নামান নি। সরকারীদল বিরোধীদলের এজেণ্টদের বাসায় বাসায় গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে, সেই সাথে ধরপাকড়ও চলে। অত:পর ২৮ এপ্রিল সিটি সমূহে নির্বাচনের জন্য যান চলাচলও নিষিদ্ধ করেন এবং দেখা গেল কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিরোধীদলের এজেণ্ট ঢুকতে দেন নি। সাধারণ ভোটারদেরও ভোট প্রদানে সরকারী দল বাঁধা দেন ও বিরত রাখেন এবং পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে বাসে করে অ’লীগ লোক এনে ভোট দিয়ে নেন। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিলেও নির্বাচন কমিশন নির্বিকার ভূমিকা পালন করেন। টি ভি মিডিয়া ও পত্রিকার মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও ভোট জালিয়াতির কারনে সকল বিরোধীদল (জাতীয় পার্টি সরকারী দল না নিরোথী দল তা বলা গেল না) নির্বাচন বয়কট করে। তারপরও নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনকে সুষ্ঠ ও সন্তোষজনক বলে। এরপর বহু ঘটনা অতিক্রমের পর কোনো আলোচনা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন হুট করে ২০১৫ সালের নভেম্বরের শেষে ঘোষনা দেয় ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনের এবং দলীয় প্রতীকে। বিরোধীদলসমূহে প্রথমে কিছু কিছু আপত্তি জানালেও নির্বাচন কমিশনের কাছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সমান চেয়ে নির্বাচন অংশগ্রহন করে। কিন্তু এ নির্বাচনে শুরু থেকেই আগের রেকর্ড ভঙ্গ করে অনিয়ম দেখা দেয়। সরকারী দলের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি’রা বিধি লংঘন করতে থাকে। নির্বাচন কমিশন কিছুই বলেন না। উপরোন্ত বেগম খালেদা জিয়া যেন নির্বাচনে প্রচারনা চালাতে না পারেন তার জন্য নির্বাচন কমিশন ব্রিফিং দেন -দলীয় প্রধানরা প্রচারনা চালাতে পারবেন না।

পত্র-পত্রিকায় এসেছে আওয়ামীলীগ শুধু ফেনীতেই কয়েকজন মেয়রসহ ৩৩ ওর্য়াডে বিএনপি সহ কোন দলকে কোন মনোনয়ন জমা দিতে নি। আরও কয়েক জায়গায় এরকম ঘটনা ঘটেছে। অর্থাত বিনা প্রতিদন্দিতায় নির্বাচিত আবারো হয়েছে।এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তো কোনো ভূমিকাই রাখেন নি ও প্রশাসনও কোনো বাঁধা দেন নি উল্টো বি এন পি’র উপর চাপ দিয়েছে। সরকারীদল যে কোনো উপায়ে নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায় প্রায় দুই থেকে তিন হাজার সন্ত্রাসী সক্রিয় করেছেন ভোটার ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে ভয় ঢোকাতে। তাছাড়া সরকারী দল অবাধে ভোট করে নেওয়ার জন্য নৈশ্য প্রহরী, পিয়নদের পোলিং কর্মকর্তা বানায়েছেন। বিএনপি’র আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন তা আমলে নেন নি। এবারেও এজেন্টদের উপর হুমকি-ধুমকি, গ্রেফতার করছে। নির্বাচনের দিন দেখা গেল-গুলি, সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, অবাধে ব্যালটে ছিল, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অবৈধভাবে শতভাগ ছিল মেরে নেওয়া,সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বাঁধা প্রদান, রিজাল্টশিটের রিজাল্ট উল্টানো,অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা ভোট করে নেওয়া ইত্যাদি হাজারো অনিয়ম। এতই অনিয়ম হয়েছে যে, ব্যালট পেপার যেখানে-সেখানে এমনকি পুকুরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। মিডিয়ার কল্যাণে দেখা গেল এক কেন্দ্রে ভোটাররা লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে-এক মিডিয়াকর্মী জিজ্ঞেস করছে একজনকে ভোট দিতে এসেছেন, বলছে হ্যাঁ, পিতার নাম কি ? বলে-কাগজে লেখা আছে, আরেকজনকে বলেন আপনার পিতার নাম কি ? বলেন- মনে নেই। আরেকজনকে বলেন আপনার আই ডি কোথায় ? বলে- আই ডি নেই, আরেকজনকে বল্লে, বলেন-আই ডি বাসায়। এই ছিল পৌর নির্বাচনে ভোটারদের চিত্র। সকাল থেকেই কয়েক দফায় বিএনপি থেকে নির্বাচন কমিশনে এবং নয়াপল্টন পার্টি অফিসে প্রেস ব্রিফিং দিয়ে জানানো দিলেও নির্বাচন কমিশন কোনো ভূমিকা দেখান নি। বিএনপি থেকে ১৫৭ পৌরসভায় গুলি, সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, অবাধে ব্যালটে ছিল মারা, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অবৈধভাবে শতভাগ ছিল মেরে নেওয়া, সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বাঁধা প্রদান,(এমনকি প্রার্থী নিজেও ভোট দিতে পারেন নি) অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা ভোট করে নেওয়া ইত্যাদি হাজারো অনিয়ম তুলে ধরা হয়। চারদিকে যেনো সরকারী দলরা ভোট নিয়ে তা-ব ও মহোতসব করছে , যে ভানুমতির খেলা আ’লীগ দেখাচ্ছে সে দিকে খেয়াল নেই নির্বাচন কমিশনের, যেনো এক্কেবারে চুপ, । র্নিবাচন কমিশন যেন সেই কবিতার মতো-চোখ নেই, কান নেই, নখ নেই, শিং নেই,— ছোটে না, ফোঁসফাস করে না,ঢুঁশ ঢাশ মারে না, কোনো উতপাত করে না, খায় শুধু দূধ-কলা ভাত—তবে তারা বিরোধীদলকে পরাজিত করতে তেড়ে মেরে ডা-া ঠিকই করে দিয়েছে ঠা-া।

সরকার এভাবে মেরুদ-হীন,অর্থব,বেহায়া,বেলাজ, একান্ত অনুগ্রহ আজ্ঞাবহ কৃতদাসের মতো নির্বাচন কমিশনের দ্বারা নির্বাচন করে নিয়ে কোন গণতন্ত্রের কথা বলছেন। কথায় কথায় কোন গণতন্ত্রকে অ’লীগ ভারতের গণতন্ত্রের সাথে তুলনা করছেন। আবার দেশটাকে মাহথির মোহাম্মাদের মালএশিয়া বানাতে চান। দেশের গণতন্ত্র যে আজ তাদের দ্বারা ভূলণ্ঠিত তা কি তারা জানে ? তাই সূধী সমাজসহ আপামর জনসাধারণ আজ ভাবছে-দেশে নেই কোনো সুষ্ঠ ভোটের পরিবেশ, কোন দিকে যাচ্ছে দেশ ?
লেখক: কবি ও কলামিস্ট।