খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি ২০১৬: টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আইন করে মুসলমানদের ওপর বাড়তি পুলিশি নজরদারি আরোপের দীর্ঘ একযুগ পর নিউ ইয়র্কে সমঝোতা চুক্তির মধ্য দিয়ে তার অবসান হতে চলেছে। নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনসহ পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুব্ধ মুসলিম সম্প্রদায়’ ও ‘সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের’ করা দুটি মামলার প্রেক্ষিতে ৭ জানুয়ারি ম্যানহাটানের ফেডারেল কোর্টে এ সমঝোতা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, নিউইয়র্ক পুলিশের নজরদারিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে তদারকির জন্যে একজন স্বাধীন অ্যাটর্নি নিয়োগ করা হবে।
সমঝোতায় উল্লেখ করা হয়েছে, “যে কোনো ধরনের তদন্তের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে না- এমন প্রক্রিয়া অবলম্বন করবে নিউইয়র্কের পুলিশ। “ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী কারও বিরুদ্ধে যে কোনো কারণে তদন্ত করলে তার সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে এবং বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, ধর্ম অথবা বর্ণের কারণে কাউকে ‘টার্গেট’ করা যাবে না। এমন কিছু করা হলে তা হবে বে আইনি। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ‘ধর্মীয় উগ্রপন্থি’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন তাদের ওয়েবসাইটে রেখেছে, সেটি সরিয়ে ফেলতে হবে।’ সংশ্লিষ্ট সবার স্বাক্ষরিত সমঝোতা-চুক্তির অনুলিপি ফেডারেল কোর্টের বিচারক চার্লস হ্যাইটের এজলাসে জমা দেওয়া হয়েছে।
আদালতের অনুমোদন পেলে মামলার বাদিপক্ষের অ্যাটর্নির ফি বাবদ সিটি কর্তৃপক্ষকে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে। নিউইয়র্কবাসী মুসলিমদের অভিযোগ, মসজিদগামীদের টার্গেট করে সন্ত্রাস দমনের নামে তল্লাশি এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীদের গতিবিধির ওপর অবৈধভাবে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হচ্ছে। কিন্তু এসব অভিযোগের শতকরা ৯৯ ভাগেরই সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে নিউইয়র্ক টাইমসসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে ২০১১ সালে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনসহ পুলিশের বিরুদ্ধে এ দুটি মামলা হয়। নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার সমুন্নত রাখার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী নিউ ইয়র্কেও সাধারণ ব্যবস্থা ১৯৮৫ সাল থেকে চালু ছিল।
কিন্তু ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার পর তা বাতিল করা হয়। নিউ ইয়র্ক পুলিশ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে নজরদারি বাড়ানোর জন্য নতুন প্রক্রিয়ায় আইন পরিবর্তনের চেষ্টা চালায়, যার ফলে ২০০৩ সালের ৮ এপ্রিল ডিসট্রিক্ট কোর্ট নতুন আইন জারি করে। এর পর থেকেই সিটি প্রশাসন বা পুলিশ নিরাপত্তার অজুহাতে স্থানীয় মসজিদগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি, মসজিদে আসা মুসলমানদের গতিবিধি এবং মুসলমানদের সভা-সমাবেশ ও পারিবারিক অনুষ্ঠানের ওপর নজরদারি জোরদার করে।