খোলা বাজার২৪ শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাছাইপর্বের তথাকথিত ‘সুপার টুইসডে’ আগামী ১ মার্চ। এদিন একসঙ্গে ১২টি অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান সমর্থকেরা তাঁদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট দেবেন। এর তিন দিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার টেক্সাসের হিউস্টনে এক উত্তপ্ত বিতর্কে অংশ নেন দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে এখনো টিকে থাকা পাঁচজন। প্রায় তিন ঘণ্টার ওই বিতর্কের শুরু থেকেই সব আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন দলের শীর্ষ মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি আক্রমণে নেতৃত্ব দেন দুই নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর টেড ক্রুজ ও সিনেটর মার্কো রুবিও।
অভিবাসন, স্বাস্থ্যবিমা, বৈদেশিক নীতি ও অর্থনীতির প্রতিটি প্রশ্নে একের পর এক ব্যক্তিগত আক্রমণ করে ট্রাম্পকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন ক্রুজ ও রুবিও।
রুবিও মনে করিয়ে দেন, অবৈধ অভিবাসনের ব্যাপারে কড়া কথা বললেও ট্রাম্প নিজের ব্যবসায়ে বিস্তর অবৈধ অভিবাসীকে চাকরিতে নিয়োগ করেছেন।
রুবিও বলেন, ‘তুমি যেভাবে ট্রাম্প টাওয়ার বানিয়েছ, সেভাবে যদি মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল বানাতে যাও, তাহলে তুমি নির্ঘাত অবৈধ শ্রমিক নিয়োগ করবে।’
ফ্লোরিডায় ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র জালিয়াতির অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে উল্লেখ করেন রুবিও।
বাবার কাছ থেকে পাওয়া ২০০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে ট্রাম্প ব্যবসা শুরু করেন—সে কথা শুনিয়ে রুবিও বলেন, সেই অর্থ না পেলে ট্রাম্প হয়তো এখন ম্যানহাটনে হাতে হাতে ঘড়ি বিক্রির কাজ করে বেড়াতেন।
রুবিওর এই বক্তব্যের সময় ট্রাম্প হাত নেড়ে প্রতিবাদ করে বলেন, ১ মিলিয়ন ডলার, ২০০ মিলিয়ন নয়।
বিতর্ক চলাকালে রুবিও তাঁর ওয়েবসাইটে ট্রাম্পের ভাঙাচোরা মুখ-সংবলিত ‘ট্রাম্প ঘড়ি’ ১০ ডলারে বিক্রি শুরু করেন।
রুবিওর এমন আক্রমণের মুখে ট্রাম্প বলেন, রুবিও বা ক্রুজ কেউই জীবনে কাউকে চাকরি দেননি। অন্যদিকে তিনি হাজার হাজার মানুষকে চাকরি দিয়েছেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আক্রমণে যোগ দিয়ে ক্রুজ মনে করিয়ে দেন, অবৈধ শ্রমিক ব্যবহারের জন্য আদালত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এক মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছেন।
ক্রুজ অবশ্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর আক্রমণ করেন বিভিন্ন উদারনৈতিক প্রশ্নে সমর্থন জানানো এবং ডেমোক্রেটিক রাজনীতিকদের সময়-সময় মোটা অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার জন্য।
ট্রাম্প সম্পর্কে ক্রুজ বলেন, ‘এমন লোক যদি প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে তিনি কখনোই কোনো প্রকৃত রক্ষণশীলকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে মনোনয়ন দেবেন না।’
গত সপ্তাহে বিচারপতি স্কালিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর শূন্যস্থান পূরণ প্রসঙ্গে ওই কথা বলেন ক্রুজ।
ট্রাম্পের বার্ষিক কর প্রদানের হিসাব-নিকাশ অবিলম্বে প্রকাশ করার যে দাবি সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রমনি করেছেন, ক্রুজ ও রুবিও তার পুনরুক্তি করেন।
ট্রাম্প যুক্তি দেখান, তাঁর আয়-ব্যয় নিয়ে কর বিভাগ হিসাব নিরীক্ষণে ব্যস্ত। সে নিরীক্ষণ শেষ হলে তিনি তাঁর কর প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন।
ট্রাম্পের এ কথায় আপত্তি জানিয়ে ক্রুজ বারবার বলতে থাকেন, কেন তাঁকে (ট্রাম্প) সরকার ‘অডিট’ করছে, তা জানা দরকার।
বৈদেশিক নীতি প্রশ্নেও আক্রান্ত হন ট্রাম্প। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রশ্নে নিরপেক্ষ থাকবেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির এক অলঙ্ঘনীয় নীতি হলো—ইসরায়েলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন। সেই নীতি থেকে সরে আসার জন্য ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেন ক্রুজ ও রুবিও।
আক্রমণের মুখে ট্রাম্প অবশ্য ইসরায়েলের প্রতি তাঁর জোরালো সমর্থনের কথা বার কয়েক বলার চেষ্টা করেন। তবে প্রতিপক্ষের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তিনি কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেন।
অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই একমত, গতকালের বিতর্কে ট্রাম্পকে একহাত নিয়েছেন রুবিও ও ক্রুজ। এই তিনজনের কথা-কাটাকাটিতে প্রবেশের চেষ্টায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বাকি দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী জন কেইসিক ও বেন কারসন।
এ পর্যন্ত চারটি অঙ্গরাজ্যে বাছাইপর্বের নির্বাচন হয়েছে। তার মধ্যে তিনটিতেই ট্রাম্প ভালোভাবে জিতেছেন। ক্রুজ আইওয়াতে জিতলেও পরবর্তী তিনটি নির্বাচনে তিনি রুবিওর চেয়েও কম ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছেন।
১ মার্চের বাছাইপর্ব নিয়ে সবশেষ জনমত গণনায় বলা হচ্ছে, ১২টি অঙ্গরাজ্যের ১০টিতেই ট্রাম্প বেশ ভালো ব্যবধানে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন।
এমন অবস্থায় গতকালের বিতর্কই ছিল ট্রাম্পকে কুপোকাত করার শেষ সুযোগ। ট্রাম্পকে বিব্রত করতে রুবিও ও ক্রুজ যে সক্ষম হয়েছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ভোটে তাঁকে ধরাশায়ী করতে তাঁরা সক্ষম হবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে।