Sat. Mar 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

19kখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০১৬ : দুই বছর আগে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাবার পথে নিখোঁজ হয়েছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান এমএইচ৩৭০। আজও হদিস মেলেনি সেই বিমানটির। সন্ত্রাসীদের টার্গেট হওয়া, বিধ্বস্ত হয়ে সাগরের গভীরে তলিয়ে যাওয়া কিংবা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মত হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়াসহ সব ধরণের অনুমান এবং অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। কিন্তু জানা যায়নি ঠিক কী ঘটেছিল বিমানটিতে-জানা যায়নি কী ঘটেছিল ২৩৯জন যাত্রীর ভাগ্যে।
নিখোঁজ হওয়া যাত্রীদের স্বজনেরা গতকাল সোমবার কুয়ালালামপুরে জড়ো হয়েছিলেন হারানো প্রিয়জনদের স্মরণে। অনুষ্ঠানে যারা এসেছেন, তারা কেউই একে একটি শোকাতুর ভাবগম্ভীর সভা বানাতে চাননি। চোখভর্তি পানি আর ভারী মন নিয়ে তারা একত্রিত হয়েছেন একসাথে বসে কিছুক্ষন হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের প্রিয় স্মৃতিগুলো রোমন্থন করবেন বলে। সেকারণে মঞ্চে বেজেছে গান আর তার সাথে নাচ। হারিয়ে যাওয়া বোয়িং ট্রিপল সেভেন বিমানটির কোন একজন যাত্রী ভীষণ ভালবাসতেন এই গান। আয়োজকেরা বলছেন, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের কাছে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্জি পৌঁছে দিতে চান।
আর সেটি হলো হারানো বিমানটি খোঁজার কাজ যেন কিছুতেই থামিয়ে দেয়া না হয়। তাদের ভয়, যত দিন, মাস আর বছর পেরিয়ে যাবে, হারানো স্বজনকে ফিরে পেতে তাদের আকুলতার কথা সবাই আস্তে আস্তে ভুলে যাবে। নিখোঁজ হবার পর একেবারে গায়েব হয়ে যাওয়া প্লেনটিকে খোঁজার জন্য দীর্ঘদিন দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে অনুসন্ধান চলেছে। মাত্র গেল সপ্তাহে মোজাম্বিকের সমুদ্র সৈকতে বিমানের একটি খন্ডিত ডানা ভেসে এসেছে, যেটিকে হারিয়ে যাওয়া এমএইচ৩৭০টির খণ্ডাংশ বলে মনে করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার যোগাযোগ মন্ত্রী লাইও টিওঙ লাই বলছেন, এটি সেই বোয়িং ট্রিপল সেভেন বিমানটির ডানা কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। অনুগ্রহ করে কেউ অনুমান করে কিছু বলবেন বা লিখবেন না।
কারণ এটি এমএইচ ত্রিসেভেনটি বা সেই বোয়িং ট্রিপল সেভেন বিমানটির অংশ কিনা, সেটি ঐ খন্ডিত ডানাটি যাচাই করার আগ পর্যন্ত বলা যাবেনা। আমাদের কিছুটা সময় দিন। কত দ্রুত ভেরিফিকেশনের কাজটি শেষ করা যায়, আমরা সেই চেষ্টাই করছি। এই ঘটনাটিকে বিশ্বের বিমান শিল্পে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা বলে ধারণা করা হয়। ব্যবসায়িক সুনামের জন্যও সবচে খারাপ ঘটনা হিসেবে একে চিহ্নিত করেন কেউ কেউ। তবে, শেষ পর্যন্ত নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবারের সদস্যদের জন্যই এটি সবচে বড় ট্র্যাজেডি। প্রিয়জনকে যারা শেষ বিদায় জানাতে পারেননি, যারা বিশ্বাস করেননা হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনেরা মারা গেছেন, আর সেকারণে স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করবেন নাকি ফিরে পাবার আশা ছেড়ে দেবেন, জানেননা তারা দিশেহারা বোধ করেন।
এদেরই একজন গ্রেস নাথান, তাঁর মা এ্যান ডেইজি ছিলেন সেই বিমানে। গ্রেস নাথান বলেন, আমরা আসলে স্তব্ধ হয়ে গেছি। আমরা জানিনা কি করা উচিত। প্রথম দেড় বছর তো আমি প্রতিদিন কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় ভাবতাম, ঘরে ঢুকেই দেখব মা তার নিজের প্রিয় চেয়ারটিতে বসে আছেন। কিন্তু এই অনুভূতিটা এখন আর আগের মত ঘনঘন হয়না আমার। আমি এখনো প্রতিটি দিনই তাকে মিস্ করি। কিন্তু আমি কোনভাবেই এটা মানতে পারিনা যে আমার মায়ের সঙ্গে আমার আর কোনদিনই দেখা হবে না।
এমএইচ৩৭০ বিমান নিখোঁজ হবার দুই বছর পূর্তিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসা স্বজনদের লেখা ছোট-বড় বিভিন্ন কার্ডে যেসব বার্তা তার প্রায় কোনটিই শোকবার্তা নয়। অনেকদিন দেখা না হবার যন্ত্রণা, আর শীঘ্রই দেখা হবে এমন সব আশাবাদ লেখা সেগুলোয়। ছোট ছোট বাচ্চারা এসেছে, কেউবা হারিয়ে যাওয়া বাবা কিংবা মায়ের জন্য রঙ্গিন একটি বেলুন উড়িয়ে দিচ্ছে-যাতে লেখা “শিগগির বাড়ি এসো, অনেক মজা করব আমরা”।