অজয় দাশগুপ্ত : খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২১ মার্চ ২০১৬ : সবাই মিলে যখন বিষয়টাকে আরো জটিল করে তুলছে তখন রহস্য নাটকের মত দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেল জোহা। তানভীর হাসান জোহাকে আমাদের চেনার কোন কারণ ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার খোয়া যাওয়ার ঘটনার পর তাকে দুএকবার টিভিতে দেখি। ঝাঁ চকচকে স্মার্ট একটি যুবক। কথাও বলছিল সাহসের সাথে। যতটা বুঝতে পেরেছি তার আসলে কিছু কথা বলার ছিল। এবং সেটা প্রধানমন্ত্রী অবদি পৌঁছানোর অভিপ্রায়ও জানিয়েছিল সে। তারপর খবরে দেখি, উধাও। অনভিপ্রেত হলেও মানতে হবে এমনটা এখন নিয়তি। আফসোসের ব্যাপার এই কেন বা কি কারণে তাকে এভাবে গুম হতে হলো জানা যাবে না। কারো বুকে যদি সৎ সাহস না থাকে সে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হতে চাইবে না। আশ্চর্যের বিষয় এই তার অন্তর্ধানের পর এবিষয়ে কেউ একটা কথা বলেনি। বরং তুলে নিয়ে যাবার পর যেসব থানায় ডায়েরি বা জিডি করার চেষ্টা হয়েছিল তাদের অনীহাও এড়িয়ে যাওয়ার ভেতর মনে হবে জোহাকে তুলে নিয়ে যাবার ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটেনি। ঘটেছে অন্য কোন গ্রহে। পুলিশের এই নির্লিপ্ততা এবং অনীহা মনে করিয়ে দিচ্ছে, এর সাথে সরকার বা প্রশাসনের যোগসাজশ আছে। তা না হলে নিজেদের একজন মানুষ হারানোর জন্য বাংলাদেশের প্রশাসনেরতো উদ্বিগ্ন হবার কথা।
কারা আসলে এর পেছনে? এর আগে আমরা খবরে দেখেছি জোহা যখন তদন্ত বিষয়ে কথা বলেছিলেন রাকেশ আস্তানার তা পছন্দ হয়নি। রাকেশরা এও বলেছিল, এখনো তদন্ত চলছে তাই মুখ বন্ধ রাখা উচিৎ। রাকেশ বাবুরা বলতেই পারে। কারণ এটা তাদের টাকা না। তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে কিভাবে ডলার চুরি হলো সেটা না বলে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার মাড়োয়ারী বুদ্ধি আমরা মানবো কেন? আমরা তো জানতাম আমাদের সরকার এ নিয়ে বিব্রত। কয়েক ইঞ্চি স্ফীত নাকের ঠোলা দেখিবে অর্থমন্ত্রী যেভাবে বিড়বিড় করে রাগ দেখালেন তাতে এটা ধরে নেয়া স্বাভাবিক তিনি কিছু জানতেন না। রাখাল গর্ভনর শেষ বংশীবাদনে এমন ভাব করলেন যে এ ঘটনা এত জটিল আর এত অভিনব তাঁর মর্মে ঢোকেনি। নিরীহ চেহারা করে বললেন আমি বুঝলেতো বলবো বা জানাবো। কেউই যখন জানে না বা বোঝে না তখন তানভীর জোহা যেটুকু বুঝেছিল সেটুকুই কি তার অপরাধ?
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার খোয়া গেল আমেরিকা থেকে, ডলার উড়লো ফিলিপাইনে, শ্রীলঙ্কায় মরতে মরতে বেঁচে গেল রিজার্ভের ডলার আর মানুষ গায়েব হলো রাজধানীতে। আপনারা কি ভাবেন আমরা সবাই খুব বোকা? এ যুবকটিকে কারা সরিয়ে নিতে পারে পেছনে কাদের হাত আছে এটা শিশুও বুঝতে পারে। বরং এর ভেতর দিয়ে বাজারে হাওয়ায় যেসব গুজব সেগুলোকেই ভিত্তি দেয়া হলো। আজ খবরে দেখলাম প্রয়াত সিরাজ সিকদারের একমাত্র পুত্র মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন। তার মতে এটা বাকশালীদের পুরনো পেশা। ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগে কলংকিত ১৯৭৩ সালকেও মনে করিয়ে দিয়েছেন। বাজারে মাঠে বিদেশে গুজব আর গুজব। বলাবাহুল্য সন্দেহের তীর শীর্ষমুখী। এমন কঠিন সময়ে জোহার মত তরুণকে তুলে নিয়ে যাওয়াটা আগুনে ঘি ঢালার মত। একাজটা কারা করেছে তারচেয়েও বড় কথা যারা ঠেকাতে পারতো বা এর ব্যাখ্যা দিতে পারতো তারা মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। এর আগেও আমরা গুম নাটক দেখেছি। ক্রস ফায়ার দেখেছি কিন্তু জবাব মেলেনি।
এবারের ঘটনাটা ছিল ভিন্ন। এতবড় একটা আর্থিক কেলেংকারী এতবড় লোকসান তারপরও কারো দায় মেটানোর ইচ্ছে দেখি না। পারস্পরিক দোষারোপ মুই বড় না তুই বড়র খেলায় ক্লান্ত জাতি এসব নাটক আর দেখতে চায় না। সত্য জানা আর সত্য বলার অপরাধে হিন্দি সিনেমার মত অপহরণ বা গুম করে ফেলার এই সংস্কৃতি যারাই শেখাক না কেন এ বড় আত্মঘাতী। ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা মুখে বলে কাজে প্রাগৈতিহাসিক ও তুঘলকী আচরণ আপন পায়ে কুড়াল মারা। বাইরে এসে দেখুন মানুষ কিন্তু ফুঁসছে। একটা সময় সামাল দেয়ারও পথ পাওয়া যাবে না।
জোহা কি রহস্যের বেড়াজালেই হারিয়ে যাবে না ফিরে আসবে সেটাই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। আর ফিরলেও আমরা কি আসল জোহাকে ফেরত পাবো না মগজ ধোলাই করা অসুস্থ কোন শিলংএর সালাউদ্দিনের মত তানভীর জোহাকে আর কোনদিন চিনতে পারবে না কেউ। এত পাপের পরও ঈশ্বরের আসন টলটল করে না? আজবতো।