খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০১৬: ১৯৯৩ সালে যখন ইন্টারনেট এখনকার মতো প্রসার লাভ করেনি, সে সময় নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়। সে কার্টুনে একটি কুকুরকে কম্পিউটারের সামনে বসে অন্য একটি কুকুরের সঙ্গে চ্যাট করতে দেখা যায়। তাতে চ্যাট করতে গিয়ে একটি কুকুর অন্যটিকে লিখেছিল, ‘ইন্টারনেটে কেউ জানে না যে তুমি একজন কুকুর।’ দুই দশক আগের সে কার্টুনের ঘটনা বর্তমানে সত্য বলে প্রমাণিত হওয়ার পথে। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিবিসি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসারের এ যুগে বর্তমানে অনলাইনে কোনো ব্যক্তির সঠিক পরিচয় প্রায়ই জানা যায় না। এ কারণে অনলাইনে পরিচয় গোপন করে নানা পরিচয়ে অন্যের কাছে নিজেকে উপস্থান করছেন অনেকেই। কোনো পুরুষ সহজেই অনলাইনে নিজেকে নারী বলে পরিচয় দিতে পারছন। তরুণেরা বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধরা তরুণ বলে পরিচয় দিতে পারছ।
এছাড়া অনভিজ্ঞরা অভিজ্ঞ কিংবা গ্রামের মানুষেরা শহুরে বলে নিজের পরিচয় দিতে পারছেন। তবে অনলাইনের এ পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টি শেষ কথা নয়। অনলাইনে অনেকেরই এখন নাম-পরিচয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বহু মানুষেরই ব্যক্তিগত ছবিসহ নানা বিষয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে হ্যাকিংয়ের মতো বিষয়, যা আর্থিক ক্ষতিরও কারণ হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমের কল্যাণে বর্তমানে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ও বন্ধুত্ব গড়ে তোলার সহজ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে মধুর এবং তিক্ত দুই ধরনের সম্পর্ক ঘটার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম অনলাইন। বিশেষ করে অনলাইন ডেটিংয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২৫ বছর আগে অনলাইনের কল্যাণে যেভাবে আমাদের জীবনযাপনে অগ্রগতি শুরু হয়, এখন সে পর্যায় আর নেই। এখন নানাভাবে অনলাইনের ক্ষতিকর দিকগুলো আমাদের সামনে আসছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে বহু মানুষের জীবন। অনলাইনে রয়েছে ভালো-মন্দ বহুধরনের মানুষের ছড়াছড়ি। তাই অতিমাত্রায় সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন হয়।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনে সাবধানতা অবলম্বন করেও বহু মানুষ এ বিপদের হাত থেকে বাঁচতে পারছেন না। এ কারণে অনেকেই শেষ অস্ত্র হিসেবে অনলাইন ত্যাগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে অনলাইন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কি সঠিক সমাধান? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বর্তমানে একজন মানুষের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। একজন মানুষের যদি ৩০০ বন্ধু থেকে থাকে এবং সে ৩০০ জনের আরও ৩০০ করে বন্ধু থেকে থাকে তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়ায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেক্ষেত্রে সংখ্যাটি গিয়ে দাঁড়ায় ৯০ হাজার। এ মানুষদের মাঝে ৯০ শতাংশও যদি একক ব্যক্তি হয় (কমন ফ্রেন্ড) তাহলে সংখ্যাটি দাঁড়ায় নয় হাজার। অর্থাৎ আপনার লাইক, কমেন্ট ও অন্যান্য বিষয়গুলো এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সামনে চলে আসতে পারে সহজেই। বিশ্বের অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তৃতিতে একজন মানুষের গোপনীয় তথ্য এত সহজেই এখন অন্য মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। আর এ অবস্থায় গোপনীয়তার বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে অনেক বিশেষজ্ঞই শেষ উপায় হিসেবে অনলাইনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলছেন।