Sat. Jun 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

41kখোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৮ মে ২০১৬: বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিধান রেখে ‘বৈদেশিক অনুদান স্বেচ্ছাসেবকমূলক কার্যক্রম রেগুলেশন বিল-২০১৬’ চুড়ান্ত করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিলে কোন এনজিও বা এনজিও কর্মকর্তা সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অশোভন মন্তব্য করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা শেষে বিলটি চুড়ান্ত করা হয়।
কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আবদুল মতিন খসরু, বেগম সাহারা খাতুন, মো. শামসুল হক টুকু, তালুকদার মো. ইউনুস, অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউল হক মৃধা ও সফুরা বেগম বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আহ্বায়ক ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সাব-কমিটি’ বেগম রেবেকা মমিন ও সাব-কমিটির সদস্য হুইপ মোছা. মাহবুব আরা বেগম গিনি এবং বিভিন্ন এনজিও এর প্রতিনিধিগণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শেষে জাতীয় সংসদের মিডায় সেন্টারে এক প্রেসব্রিফিংয়ে কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না। কোন এনজিও সেটা করতে পারবে না। কেউ সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অশালীন বা অশোভন মন্তব্য করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এই বিল পাস হলে টিআইবিসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো সংবিধান বা বিচার বিভাগ নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ দিতে পারবে কিনা জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে কমিটির সভাপতি বলেন, সমালোচনা করা যাবে, তবে গালি-গালাজ করা যাবে না। পার্ল্টামেন্ট সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাকে সম্মান দিতে হবে। মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বললে রাষ্ট্র যায় কোথায়? তিনি আরো বলেন, টিআইবি আমার কাছে আসছিল। আমি বলেছিলাম ক্ষমা চাইতে। কিন্তু তারা আর এলো না।
তিনি বলেন, সংসদ নিয়ে মন্তব্য করেন। কিন্তু পুতুল নাচের নাট্যশালা তো বলতে পারে না। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। তাই সংবিধান বা সাংবিধান প্রতিষ্ঠান নিয়ে যা ইচ্ছে তাই মন্তব্য করা যাবে না।
উল্লেখ্য, এনজিও কার্যক্রম বর্তমানে পরিচালিত হয় ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে। সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ দুটি একত্রে করে নতুন আইন করতে বিলটি উত্থাপন করা হয়। পরে তা অধিকতর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলটি উত্থাপনের পর থেকেই এই বিলের একাধিক ধারা নিয়ে আপত্তি জানায় বেসরকারী সংস্থাগুলো। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। সর্বশেষ বৈঠকে বিলটি পাসের সুপারিশ করে সংসদে প্রতিবেদন উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী সংসদ অধিবেশনে প্রতিবেদন উত্থাপনের পর বিলটি পাস হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বিলে বলা হয়েছে, একটি এনজিও ১০ বছরের জন্য নিবন্ধন পাবে। তবে আইন অমান্য করলে যে কোনো সময় নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করা যাবে। এনজিওতে বিদেশি উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তায় ছাড় নিতে হবে। বিদেশি অনুদান একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে (মাদার অ্যাকাউন্ট) থাকতে হবে। ব্যয়ের হিসাব অডিট করার পর এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে দিতে হবে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এসব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। আইন না মানলে প্রথমে সতর্ক করা হবে। নিবন্ধন বাতিল ও জরিমানার বিধানও আইনে রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারী, এ আইনের অধীনে নিবন্ধিত এনজিও বা সংস্থার কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ করতে পারবে না। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তালিকাভুক্ত কিংবা নিষিদ্ধ ব্যক্তি বা সংগঠন বিদেশি অনুদান নিতে পারবে না বলেও প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে।
এদিকে প্রেসব্রিফিংয়ে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সম্পর্কে জানতে চাইলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, অরিজিনাল কনস্টিটিউশনের বিরুদ্ধে জাজমেন্ট চলে না। এটা মিমাংশিত ইস্যু। বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। এটা আদালতের কোন বিষয় না।
তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের বেঞ্চে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে, আশা করি আদালত বিবেচনা করবে। সংবিধান সংশোধন নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর ড. কামাল হোসেন যা বলেছেন তা স্ববিরোধী। সংবিধান প্রণয়নের সময় উনি যা বলেছেন, আজ তার বিপরীত বলছেন। কি কারণে বলছেন, সেটা উনিই ভাল জানেন।
নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী আরোও অনেক গুণীজন বলেছেন। এটা সমর্থন যোগ্য না। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হবে বলে আশা করি।