খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৯ জুন ২০১৬: ঢাকার খিলগাঁওয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য’ শরিফুল ওরফে সাকিব বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, “শরিফুল বিভিন্ন সময়ে সাকিব, শরিফ, সালেহ, আরিফ ও হাদী নাম ব্যবহার করে পরিচয় গোপন করে আসছিল। সে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সরাসরি অংশ নেয়। তাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।”
শনিবার রাত ২টার দিকে খিলগাঁও মেড়াদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসীদের’ গোলাগুলিতে ওই যুবক নিহত হন বলে পুলিশের ভাষ্য।
খিলগাঁও থানার এসআই নীরেন্দ্র নাথ পাল সকালে ওই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ খবর দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন, নিহতের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তবে তার নাম-পরিচয় সে সময় জানাতে পারেননি তিনি।
নিহতের পরিচয় কীভাবে পাওয়া গেল জানতে চাইলে মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, “অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে তাকে দেখা গেছে। এর আগে গ্রেপ্তার আনসারুল্লা সদস্যদের কাছ থেকেও তার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।”
ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজন যে ছয় জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ মাসখানেক আগে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাদের মধ্যে শরিফুল দ্বিতীয় জন যার সন্ধান পাওয়ার খবর দিল পুলিশ।
এর আগে গত ১৫ জুন একই দলের সদস্য সুমন হোসেন পাটোয়ারি ওরফে সিহাব ওরফে সাকিব ওরফে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান বলেন, সুমন পাটোয়ারি জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, তার ভিত্তিতে গোয়েন্দারা শনিবার রাতে বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালান।
“রাতে মেরাদিয়াতে অভিযান চালানোর সময় একটি মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবক পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে একজন আহত হয়, বাকি দুজন তাকে ফেলে পালিয়ে যায়।
গুলিবিদ্ধ ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণ্ করেন বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. বাচ্চু মিয়া জানান।
এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কথা জানান উপ-কমিশনার মাশরুকুর।
তিনি বলেন, লেখক ব্লগার হত্যার যতগুলো ঘটনা ঘটেছে ‘তার প্রত্যেকটি’ শরিফুল জানত।
“প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টার দিন লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ের বাইরে সে অবস্থান করছিল। ব্লগার নীলাদ্রী নীলয়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াজ মোর্শেদ বাবু হত্যার মিশনেও সে সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিল।”
এছাড়া জাগৃতি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, পুরান ঢাকায় নাজিমুউদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে শরিফুলকে চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা।
মাশরুকুর বলেন, শরিফুল ওরফে সাকিব একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ছাত্র ছিল। তার বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে। একটি বেসরকারি এনজিওতে তিনি চাকরি করতেন বলেও আগে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গতবছর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বা ‘ক্রসফায়ারে’ মোট ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক মাসেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কয়েক ডজন।
এ ধরনের ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে আসছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।