খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০১৬: ঈশ্বরদী পাবনা: ঈশ্বরদীতে জমে উঠেছে এবারের ঈদের কেনাকাটা। আলোক ঝলমলে শহরের শপিংমল গুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই মার্কেট গুলোতে কেনাবেচা জমে উঠছে। ঈদে ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে বিক্রেতারাও আগে ভাগেই তাঁদের পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। অন্যান্য বছর রমজান মাসের মাঝামাঝি থেকে ঈদের কেনাকাটা জমলেও এবার ১০ রমজান পার হতে না হতেই ঈশ্বরদীর বিভিন্ন বিপণী বিতানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। শহরের কাপড়পট্টি, মনির প্লাজা, জাকের প্লাজা, পৌরসুপার মার্কেটসহ বড় বড় মার্কেটগুলোতে যেন তিলধারনের ঠাঁই নেই। ক্রেতাদের ভিড়ে মার্কেটের দোকান গুলো ঠাসাঠাসি। তবে বাজারে নারী ও শিশু ক্রেতার সংখ্যাই বেশী।
এবারের কেনাকাটায় নারী, শিশু এবং বিশেষ করে ফ্যাশন সচেতন তরুনীরাই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে পিছিয়ে নেই পুরুষ এবং তরুণরাও। তরুনীদের পছন্দের পোষাক এবার ‘কিরনমালা থ্রি-পিস। তরুনদের রঙ্গিন পাঞ্জাবী এবং শিশুদের তানসী ফ্রকসহ রকমারি পোশাক তো পাওয়া যাচ্ছেই। উপরন্তু এবার ঈদে ঈশ্বরদীতে নতুন আকর্ষণ মেয়েদের হাল ফ্যাশনের ‘বাজিরাও মাস্তানি’, সারারা, ফ্লোর টার্চ, আনার কলি, গাউন ও লেহেঙ্গা পোশাক।
সরজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এবার ঈদে ঈশ্বরদীতে নতুন আকর্ষণ মেয়েদের হাল ফ্যাশনের ‘বাজিরাও মাস্তানি’ বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫শ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবারে মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিস ১ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর শাড়ির দাম ৬শ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। আর ছেলেদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ১২শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। শেরওয়ানি বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ১১ হাজার টাকায়।
শহরের গার্মেন্টসের দোকানগুলোতে ক্রেতারা তাদের পছন্দের পোষাক কিনছেন। শিশুদের তানসী ফ্রক প্রকার ভেদে ৬শ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা, কিরনমালা থ্রি-পিস ৬শ টাকা থেকে প্রায় ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাড়ির দোকান গুলোতেও প্রচন্ড ভিড়। জামদানী, বেনারসি, কাতান, কাঞ্জিলরাম, মীরপুর সিল্ক এবং তাঁতের সুতি শাড়ির ব্যাপক চাহিদা। জামদানীর লেহেঙ্গা প্রকারভেদে ৫শ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তরুনী ক্রেতাদের পাশাপাশি তরুনরা এবার রঙ্গিন পাঞ্জাবীর প্রতি বেশী ঝুঁকেছে। নানা রঙ্গের পাঞ্জাবী বেচাকেনা শুরু হয়েছে বেশ জোড়ালো ভাবে।
এদিকে শহরের জুতোর দোকানগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। উন্নতমানের জুতোর শো-রুম এ্যাপেক্স, লোটো, লুলু, আস্তা এবং বাটার দোকানে বিত্তবানদের ভিড়। নিম্ন আয়ের মানুষগুলো অন্যান্য ছোট দোকান বা ফুটপাতে ভিড় জমিয়েছে তাদের সাধ্যের ভিতর পোষাক আর জুতো কেনার জন্য।
ঈদের কেনাকাটা করতে সপরিবারে ঈশ্বরদী বাজারে এসেছেন মশুড়িয়া পাড়ার আওলাদ হোসেন, জয়নগরের হাফিজুর রহমান। আওলাদ বলেন, ‘প্রতিবছর জিনিসপত্রের দাম তো বাড়ছেই। তবে এবার পোশাকের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেশি মনে হচ্ছে।
কাপড়পট্টি মার্কেটের থান কাপড় ও ছিট কাপড় ব্যবসায়ী জিপা ক্লথ স্টোরের মালিক সাইফ হাসান সেলিম বলেন, থান বা ছিট কাপড়ের জন্য আগে থেকেই ঈশ্বরদীর একটা সুনাম রয়েছে আর তাই রোজার শুরু থেকেই থানা বা ছিট কাপড়ের দোকান গুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। কারণ, ছিট কাপড় কিনে সেগুলো তৈরি করতে সময় লাগে। এ জন্য ক্রেতারা ঈদকে কেন্দ্র করে একটু আগে ভাগেই কেনাকাটা সেরে থাকেন।’
শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ইউনুস আলী মিন্টু বলেন, ঈশ্বরদীতে বেশ কিছু ভালো মানের তৈরি পোশাক বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের রুচি ও ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারা পণ্যের সমাহার রাখছেন। ফলে ঈশ্বরদীতে লোকজনকে কেনাকাটার জন্য বাইরের শহরে যেতে হয় না। ঈশ্বরদীঁ ছাড়াও বর্তমানে আশপাশের লালপুর, বাঘা, ভেড়ামারা, আটঘরিয়া, বড়াইগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন ঈশ্বরদীতে কেনাকাটা করতে আসছেন।
বিপনী বিতান গুলো ক্রেতাদের আকৃষ্ঠ করার জন্য রকমারী পসরায় সাজানো হয়েছে। রেডিমেট কাপড়ের দোকান গুলোয় ছেলে, মেয়ে ও শিশুদের জন্য এসেছে নানা নামের ও দামের পোষাক। নারী, শিশু এবং তরুনী ক্রেতারা যেন পোষাকের দোকানগুলো দখল করে নিয়েছে। তাদের পছন্দের পোষাক খুঁজে বের করে দিতে দোকানীরা হিমশিম খাচ্ছেন।
এই ঈদে এসেছে বেশ কিছু নতুন নামের শাড়ি। সাজিয়া সাওয়ারী, আজিজা জামদানী, টিসু লোন শাড়ী, ব্লক শাড়ি, নাসা শাড়ী, কুচি জর্জেট, লেহেঙ্গা শাড়ী, জল নুপুর, রাশি, চন্দ্রি, কুমকুম, জাবেদ কাতানসহ বাহারি নামের শাড়ি। আর ঢাকাই জামদানী, টাঙ্গাইল সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জামদানী তসর সিল্ক, জর্জেট তো আছেই। এসব শাড়ি নাম ও প্রকার ভেদে মূল্য নির্ধারন করে রেখেছেন দোকানীরা। তবে এবারে বাজারে শাড়ির দাম একটু বেশী বলেন দোকানীরা।
মেয়েদের পোষাকের মধ্যে নতুন আকর্ষণ ‘বাজিরাও মাস্তানি’ সহ ভারতীয় স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল স্টার জলসার “কিরনমালা” থ্রি-পিস, বোঝেনা সে বোঝেনার নায়িকা পাখির নামে লন জিপসী, উষষি, লাভস্টোরী, ইচ্ছে নদী, কটকটি, সারারা, ফ্লোর টার্চ, আনার কলি, গাউন, ইসা-আখি, পাকিজা, বি.আর.বি, লেহেঙ্গা, স্কার্ট, ফ্রক, মিতালী, চৈতী, জ্যোতি এবং তরুনদের রঙ্গিন পাঞ্জাবী এবং শিশুদের তানসী ফ্রক বিক্রি হচ্ছে বেশি।
প্রসাধণী ও জুতার দোকানেও শুরু হয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। বিশেষ করে প্রসাধণীর দোকান গুলোতে মেয়েদের মেহেদী ও নানা রকম কসমেটিকস কেনার উপচে পড়া ভিড়। পাশাপাশি টুপি ও আতরের দোকানেও রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। টেইলার্স গুলোতে অনেক আগেই অর্ডার নেয়া বন্ধ। তবে ডিপার্মেন্টাল ষ্টোরসহ মুদির দোকান গুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য সহ সেমাই-চিনি, মিছরী, কিসমিস, খেজুর, নুডলস কেনার ভিড় একটু বেশী লক্ষ করা গেছে।
দরিদ্র মানুষের একমাত্র অবলম্বন রেলওয়ে হকার্স মার্কেট ও ছোট বিপনি বিতান গুলো। তবে এবার অন্যবারের তুলনায় এসব দোকান গুলাতে বিক্রি একটু কম। কারন হিসাবে কয়েকজন দোকানি বলেন এবারে বর্ষা মৌশুমে মানুষের কাজ নেই হাতে পয়সা নেই তাই এই এলাকার মানুষদের ঈদের বাজার কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তবুও ঈদের আনন্দ থেকে মানুষ যেন পিছিয়ে নেই। সকলেই তাদের সাধ্য অনুযায়ী ঈদকে সামনে রেখে পরিবারের জন্য বাজারে নেমে পড়েছে।
এদিকে দোকানীরা বলছেন, ১৫ রমজানের পর থেকেই বেচাকেনা জমে উঠেছে। এখন শুধু মহিলা, শিশু এবং তরুন-তরুনীদেরই ভিড় বেশী। তাদের মতে, ব্যবসা এবার ভাল হবে