খোলা বাজার২৪ শুক্রবার, ১ জুলাই ২০১৬ অন্য দেশকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ যে টাকা পাচ্ছে তা লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আজ বৃহস্পতিবার এক ইফতার মাহফিলে তিনি বলেছেন, এখানে ট্রানজিটের জন্য ২০০ টাকাও না, ১৯৫ টাকা দেয়া হচ্ছে। এটা ছি ছি, এটা লজ্জার, এটা না নেয়াও উচিৎ। এটা দয়া করানো, সেজন্য যদি নিজের মান-সম্মান থাকতে চান বা আজকে বাংলাদেশের মানসম্মান বা স্বকীয়তা, স্বাধীনতা নেই। দেশ রক্ষায় দেশের মানুষকে টাইগারের ভূমিকায় আসার আহবান জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, আমি আপনাদের সাথে সব সময় আছি, থাকব। রাস্তায় যেতে বললে এখনো রাস্তায় নামার মত সাহস ও ক্ষমতা রাখি।
আজ রাজধানীর বনানীতে হোটেল সেরিনা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, সারাদেশের মানুষকে আজ বিড়াল বানিয়ে রাখতে চায়। আর তিনারা, আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য বাঘ, সিংহ সব কিছূই হতে চায়। কিন্তু আজকে সবাইকে টাইগারের ভূমিকায় আসতে হবে। লায়নের ভূমিকায় আসতে হবে। তাহলেই দেশেটা রক্ষা করা যাবে। আসুন দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। আর সহ্য করা যায় না।
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কথা জানেন না। তারা কেনো এগুলো নিয়ে কথা বলে না। কেউ কি এ ঘটনা নিয়ে কথা বলে না। জোরে কথা বলেন। হাসিনা ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটেছে। এর কি কোনো তদন্ত হয়েছে? কোনো তদন্ত হয়নি। কোনো বিচার হয়নি। আমরা জানি। সাহস করে এগুলো বলা উচিৎ।
বিডিআরের ৫৭ জন অফিসারকে শেষ করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, বাকিগুলো অবসরে পাঠানো হয়েছে। আজকে বিডিআর নেই। নামও বদলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি বিডিআরই বলে যাব। এরা এক সময় বাঘ ছিল এখন বিড়াল। তাদের হাতে বন্দুক আছে কিন্তু গুলি মারে না। দেশের মানুষকে বললে গুলিটা পট করে চালিয়ে দেবে। কিন্তু যদি বলেন, শত্রু বর্ডারে লোক ঢুকে গেছে। সীমান্তে কেনো গুলি মারতে পার না? মিয়ানমারের মত দেশ আমর আকাশসীমা লঙ্ঘন করে হেলিকপ্টার নিয়ে ঘুরে কেনো একটা গুলি মারতে পারে না? বিডিআর আজকে বাঘ থেকে আজে বিড়াল হয়েছে।
ভারতকে ট্রানজিট দেয়া প্রসঙ্গে বিএনপি প্রধান বলেন, যমুনা সেতুতে ৭০০-৮০০ টাকা টোল দিতে হয়, বাস, ট্রাকের জন্য আলাদা ফি নির্ধারণ করা আছে। অথচ ১৯৫ টাকায় যে ট্রানজিট দেয়া হলো এটা লজ্জার, এটাকে দয়াও বলা যেতে পারবে। আজকে বাংলাদেশে নিজস্বতা মান সম্মান নিজস্ব কোনো সক্রিয়তা স্বাধীনতা নেই।
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপানারা যুদ্ধ করেছিলেন দেশে গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, সুশাসন, সকলের সমান অধিকারের জন্য। আজকে দেশে কোনোটাই নেই। দেশে চলছে একব্যক্তির শাসন। আপনারা যুদ্ধ করেছেন, রক্ত দিয়েছেন অনেক মা-বোনসহ অনেকে রক্ত দিয়েছেন, সম্ভ্রম হারিয়েছেন, কিন্তু আজকে দেশের এই অবস্থা দেখার জন্য তো নয়।
তিনি বলেন, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের করার কথা বলা হয়েছে, কয়েকজন ব্যক্তির নাম বলা হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক ব্যক্তি আছে। কিন্তু এটাও ধরে নিতে তারা কি কাজ গুলো নিজ উদ্যোগে করেছেন না কি কারো নির্দেশে করেছে। তারা কারো নির্দেশেই করেছে। কাজেই সে তো বাদ যেতে পারে না। এগুলো ভুলে যেতে হবে, আমরা ভুলে যেতে চেয়েছিলাম।
খালেদা জিয়া বলেন, মুসলমান, হিন্দু সবাই এই আওয়ামী লীগ দ্বারা নির্যাতিত। সবাই আজকে আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চায়, দেশে শান্তি, উন্নয়ন, গণতন্ত্র, কথা বলার অধিকার, বাকস্বাধীনতা চায়, আজকে কোনোটাই নেই।
তিনি বলেন, আমি কথা বলতে চাই, ভয় পাই না, সাংবিধানের কথা বলব। তার আগে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি অন্য কারো হাতে তুলে দেয়ার জন্য নয়।
দেশ পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে নিজের আত্মীয় স্বজনদের মারছে। পুলিশ র্যাব দিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। গণঅভিযানের নামে ১৬ হাজার লোক কারাগারে ঢুকিয়েছে। এর মধ্যে চার হাজার বিএনপির নেতাকর্মী আছে।
খালেদা জিয়া বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ (গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি) বিভিন্ন উপদেশ দেন, কিন্তু সব কথা রাখতে পারি না। আমি বলব সবাইকে নিয়ে আসেন আমি কথা বলব, সবার কথা শুনবো। যেখানেই বসতে চান আমি বসব, কথা বলতে রাজি আছি। কারণ আমাদের সামনে কাজ হচ্ছে দেশটাকে রক্ষা করা। আমাদের ওপর যদি না নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাহলে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার মত দেশে হয়ে যেতে পারে, বা এর চেয়ে উন্নত হতে পারে, সেই মেধা, মানুষ আমাদের আছে।
বুড়িগঙ্গা শেষ হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, পানি নেই। আমার কারো দয়া চাচ্ছি না। ন্যায্য অধিকারটা চাচ্ছি। আমাদের যকতটুকু প্রাপ্ত সেটা চাচ্ছি।
গতকাল বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অত্যন্ত ভালো বির্তক হয়েছে। কাজেই অন্যরা আমাদের নিয়ে কথা বলেছে। আমরা কথা বলতে পারি না, কথা বললেই মামলা হবে। কথা বললেই ধরে নিয়ে যাবে, গুম হয়ে যাবে। কাজেই গুম খুনের ভয় করে লাভ নেই। এখন করছে আবার সুযোগ পেলেই করবে তারা (সরকার)।
এসময় মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, হাসিনার ১৫টি মামলা উঠে গেলো, হাসিনার মামলা উঠে গেলে আমার মামলাও উঠতে হবে। আমি কোনো অন্যায়, অবিচার করিনি। তাই আমি বলছি দেশে কোনো ন্যায় বিচার নেই।
তিনি বলেন, আলেম ওলামা ও এতিমদের সাথে আমরা ইফতার মাহফিল শুরু করেছিলাম আজ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ইফতারের মধ্য দিয়ে শেষ করছি।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উলফাতের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন- এলডিপি প্রধান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, কর্নেল (অব.) মোদাচ্ছের, কর্নেল (অব.) জয়নাল, মেজর (অব.) আইন উদ্দিন প্রমুখ।
এছাড়া অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বিএনপির নেতা শামছুজ্জামান দুদু, খায়রুল কবির খোকন, সাদেক খান, শহিদুল ইসলাম মিলন, সাবেক ছাত্রনেতা আতাউর রহমান ঢালী প্রমুখ।