খোলা বাজার২৪, রোববার, ১০ জুলাই ২০১৬: রবিবাসরীয় স্তাদে দ্য ফ্রান্স কী দেখবে? রোনাল্ডো না বেলের বিজয়? কার উৎসব? কার অশ্র“পাত? ইউরো ২০১৬ গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। আজই পর্দা নামবে। এরপর স্মৃতির পাতায় ঠাঁই নেবে সব ঘটন-অঘটন, রোমাঞ্চ-রহস্য, উত্থান-পতন। ফ্যাশন ও ফুটবলনগরী প্যারিসের স্তাদে দ্য ফ্রান্স শুধু পর্তুগাল-ফ্রান্স ফাইনাল ম্যাচের মঞ্চ নয়, স্মৃতিও বুকে জমিয়ে রেখেছে। দুঃস্বপ্নও। এই তো গেল নভেম্বরে এই স্টেডিয়াম ফ্রান্স-জার্মানি প্রীতি ম্যাচে আত্মঘাতী বোমা হামলার নৃশংস দৃশ্য দেখেছে। যে হামলা কেড়ে নিয়েছে ১৩০ জনের প্রাণ।
সেই বিয়োগান্তক ঘটনা এবারের টুর্নামেন্টে কালো ছায়া ফেলেছিল। সেই ছায়া ক্রমশ দূরে সরিয়ে ফ্রান্স সেমিফাইনালে জার্মানিকে হারিয়ে আনন্দপূর্ণ বাতাবরণ তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে উসকে দিয়েছে স্বপ্নটা। যে স্বপ্ন আরও সবুজ হবে, যদি আজ ট্রফিটা জিততে পারে তারা। ১৯৮৪ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ানশিপ এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর নিজেদের আঙিনায় তৃতীয় কোনো বড় আসরে শিরোপাজয়ের আনন্দ উন্মাতাল করবে তাদের।
মার্শেইয়ের সেমিতে জার্মানিকে ২-০ গোলে উড়িয়ে দেয়ার পর স্বাগতিক দলের কোচ দিদিয়ের ডেসচ্যাম্পস যেমন বলেছেন, ‘ফ্রান্সে এখন আনন্দের রেণু উড়ছে।’ আজ রাতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালকে পায়েতরা যদি পরাভূত করেন, আইফেল টাওয়ারের নগরীতে উৎসবের ঢেউ আছড়ে পড়বে। সেজন্য তাদের আজও তাকিয়ে থাকতে হবে আন্তোনি গ্রিজমানের দিকে। যার জোড়া গোল ফ্রান্সকে নিয়ে এসেছে স্বপ্নপূরণের চৌকাঠে। সেই কৃষ্ণ নভেম্বরে যেদিন স্তাদে দ্য ফ্রান্সে নারকীয় তাণ্ডব ঘটে, গ্রিজমান সেদিন মাঠে ছিলেন। আর একই দিন একই সময়ের মধ্যে প্যারিসের বাতাক্লাঁ কনসার্ট হলে আরেকটা আত্মঘাতী হামলায় বেঁচে যান গ্রিজমানের বড় বোন মাউদ। ওই হামলায় ৮৯ জন নিহত হন।
ছয় গোল করে ২৫ বছর বয়সী ফরাসি ফরোয়ার্ড গ্রিজমান গোল্ডেন বুট এবং উয়েফা টুর্নামেন্টসেরা হওয়ার দৌড়ে সবার থেকে এগিয়ে রয়েছেন। গোলসংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফাইনাল তো রইল।
গ্রিজমানকে নিয়ে এত কথা হলে, রোনাল্ডো তাহলে কী? টুর্নামেন্টে শুরুতে ম্রিয়মান থাকা রোনাল্ডো ওয়েলসের বিপক্ষে ২-০ গোলে জেতা সেমিফাইনালে আবির্ভূত হন স্বরূপে। তার বুলেটের গতিতে করা দুর্দমনীয় হেড পর্তুগালকে নির্ভার করে। রোনাল্ডোর সামর্থ্যরে সূর্য ঠিক সময়ে উদিত হওয়ায় পর্তুগাল প্রথম কোনো বড় আসরে কিস্তিমাত করার স্বপ্ন দেখতেই পারে। ফ্রান্সের বিপক্ষে কখনোই জয়ের তৃষ্ণা মেটানো সম্ভব হয়নি রোনাল্ডোর পক্ষে। তবে এ দুঃখটা রোনাল্ডোর একার নয়। পর্তুগালই যে ১৯৭৫ থেকে অদ্যাবধি ফ্রান্সের সঙ্গে শেষ ১০ ম্যাচে হেরেছে। ১৯৮৪ ও ২০০০ ইউরোতে ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল পর্তুগাল। দু’বারই শেষ চারে অতিরিক্ত সময়ে ফরাসিদের জয়ের কারিগর ছিলেন যথাক্রমে মিশেল প্লাতিনি ও জিনেদিন জিদান। ২০০৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালেও পর্তুগিজরা পরাজিত হয় ফরাসিদের কাছে। ইউরো ২০০৪-এ গ্রিস ১-০ গোলে হারিয়েছে পর্তুগালকে। একযুগ আগে সেটাই তাদের প্রথম ইউরোর ফাইনালে খেলা। তাই রোনাল্ডো ও তার দলের সামনে দীর্ঘ খরা ঘোচানোর সুযোগ। আজকের প্যারিসের রাত তাদের প্রতি কৃপা করবে কিনা, সেটাই এখন দেখার।
এ দ্বৈরথের ভেতর আরেকটি খণ্ডযুদ্ধের রথও ছুটবে। সেটি গ্রিজমান ও রোনাল্ডোর কারিশমার প্রদর্শনী। একজন টুর্নামেন্টের শীর্ষ গোলদাতা। আরেকজন স্বপ্নপূরণে ব্যাকুল। কতটা ব্যাকুল তা রোনাল্ডের কথায় স্পষ্ট, ‘ইউরো ২০০৪ আমার জন্য ছিল স্পেশাল। আজ আমার বয়স মাত্র ১৯। সেটিই আমার প্রথম টুর্নামেন্ট। এখন আমরা আবার ফাইনালে। আশা করি এবার আমরা জিতব। হাসব। দিনশেষে আমাদের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়বে আনন্দাশ্র“। এএফপি।
ইউরো ২০১৬ ফাইনালের আগে ফ্রান্স পর্তুগালের পাঁচ পূর্ববর্তী সাক্ষাৎ
নভেম্বর ১৯৫৯ (প্রীতি ম্যাচ) ফ্রান্স ৫ : ৩ পর্তুগাল
এপ্রিল ১৯৭৫ (প্রীতি ম্যাচ) ফ্রান্স ০ : ২ পর্তুগাল
জুন ১৯৮৪ (ইউরো সেমিফাইনাল) ফ্রান্স ৩ : ২ পর্তুগাল
জুন ২০০০ (ইউরো সেমিফাইনাল) ফ্রান্স ২ : ১ পর্তুগাল
জুলাই ২০০৬ (বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল) ফ্রান্স ১ : ০ পর্তুগাল