খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১১ জুলাই ২০১৬: রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন ‘কয়েক দিনের মধ্যে’ প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ঈদের ছুটি পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
গত ৩০ মে ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তা ‘পড়ে দেখে’ তারপর প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মুহিত।
সেই প্রসঙ্গ টেনে সোমবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে জবাবে মন্ত্রী বলেন, “দে হ্যাভ ফাইনালাইজ দ্য রিপোর্ট। সে অনুসারে অ্যাকশনও হচ্ছে। ইন এ ফিউ ডেইজ টাইম, আই শ্যাল রিলিজ দ্যা রিপোর্ট।”
গত ফেব্র“য়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে আট কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।
শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে।
বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল।
ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়। ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে।
এ কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে, কার বরাবরে ভুয়া পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন পাঠানো হয়েছিল, অবৈধ পরিশোধ ঠেকাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না, রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রায় এক মাস গোপন রাখা যৌক্তিক ছিল কি না, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবহেলা ছিল কি না এবং অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, গৃহীত কার্যক্রমের পর্যাপ্ততা ও পুনরাবৃত্তি রোধে গৃহীত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কমিটিকে।
বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গত ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্র্বতীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় ফরাসউদ্দিনের কমিটি। এরপর ৩০ মে দেওয়া হয় পুরো প্রতিবেদন।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার আগ মুহূর্তে ওই প্রতিবেদন হাতে পেয়ে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তা প্রকাশ করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তদন্ত কমিটির প্রধান ফরাসউদ্দিন বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারও সম্পৃক্ততা নেই বলে আগে তারা ধারণা করলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ওই অবস্থান থেকে তারা ‘সামান্য’ সরে এসেছেন।
ভুয়া সুইফট মেসেজ পাঠিয়ে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সাইবার চুরির ওই ঘটনায় কারা কারা জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি কী কী সুপারিশ করেছে- সে তথ্য প্রকাশ করেননি তদন্ত কমিটির প্রধান বা অর্থমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফরাসউদ্দিন শুধু বলেন, “সুইফটেরও দায় দায়িত্ব আছে, সম্পূর্ণ দায় বা মূল দায় তাদের কি না, সেই বিশ্লেষণও প্রতিবেদনে আছে। সুফইট কখনো দায় এড়াতে পারে না। তবে সুইফটের সাহায্য নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতের প্রবলেমটা সলভ করতে হবে।”
চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে কীভাবে টাকা কতোটা আদায় করা সম্ভব- তার একটা চিত্রও প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফরাসউদ্দিন বলেন, “বেশ ভালো একটা আশাব্যাঞ্জক চিত্র আমরা দিয়েছি।