খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৩ আগস্ট ২০১৬: আলিফ হোসেন,তানোর: রাজশাহীর তানোর উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে জনবল সঙ্কট ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দায়িত্বঅবহেলার কারণে স্বাস্থ্য সেবা মূখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এছাড়াও রোগী ধরা দালাল ও ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের চরম দৌরাত্মে রোগীরা সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতাল সংলগ্ন একটি ক্লিনিকের দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে উঠেছে পুরো হাসপাতাল একশ্রেণির চিকিৎসকের যোগসাজস থাকায় দালালদের দৌরাত্ম চরমে উঠেছে।
এদিকে এসব চিকিৎসকরা কমিশনের আশায় হাসপাতালে কোনো রোগী আসামাত্র তাদের কমপক্ষে তিন থেকে চারটি পরীক্ষার জন্য নিদ্রিষ্ট ওই ক্লিনিকে পাঠায়। আর পঞ্চম শ্রেণি পাশ ক্লিনিক মালিক এসব রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রিপোর্ট প্রদানের নামে রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, যার একটি বড় অংশ পাচ্ছেন চিকিৎসকরা বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। হাসপাতালটি ২৯ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি স্বাস্থ্য সেবার মান। এখানে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া অনেকটা সোনার হরিণ। হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসক নিয়মিত অফিস করে না, আবার টাকা নিয়ে রোগী দেখেন ও কমিশনের আশায় হাসপাতাল সংলগ্ন নিদ্রিষ্ট ক্লিনিকে রোগী পাঠায়। এছাড়াও রোগীদের খাবারের মান অত্যন্ত নিুমানের ও খাবার অযোগ্য। কিন্তু তাঁর পরেও রোগীদের সেই খাবার পরিমান মতো দেয়া হয় না। বন্ধ্যাকরণ ও এমআর করতে আসা ভুক্তভোগীদের কাছে থেকে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ আদায় করা হয়। আবার টাকার লোভে অবৈধ গর্ভপাত করানো হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ২৮টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও ১০টি পদ শূণ্য রয়েছে, আর ১৮ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকার কথা থাকলেও এর মধ্যে আবার ১০ জন চিকিৎসক ডেপুটেশনে অন্যত্র রয়েছেন, ফলে যে ৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন তারাও অনিয়মিত। এছাড়াও ১৪ জন নার্সের (সেবিকা) বিপরীতে মাত্র ৭ জন নার্স কর্মরত রয়েছেন ও নার্সের ৭টি পদ শূণ্য রয়েছে।
হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, স¤প্রতি পাঁচন্দর ইউপি এলাকার জনৈক ব্যক্তির স্ত্রীকে (গর্ভবতী) মূমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সারাদিন প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ওই প্রসূতী ছটফট করলেও কোন চিকিৎসকের সাক্ষাত পায়নি। ফলে সন্ধ্যায় প্রসূতীর স্বজনরা বিষয়টি নিয়ে টিএইচও সাহেবকে অভিযোগ করায় চিকিৎসক গভীর রাতে ওই প্রসূতীকে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। গভীর রাতে ভুটভুটি যোগে প্রসূতীকে নিয়ে বাড়ি যাবার পথে রাস্তায় সন্তান প্রসব করে। আবার ক্লিনিক থেকে কমিশনের আশায় হাসপাতালের এক্সরে মেশিন, জেনারেটর ও অধিকাংশ বৈদ্যৃতিক পাখা দীর্ঘদিন ধরে নস্ট করে রাখা হয়েছে এবং অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি প্যাকেট অবস্থায় নস্ট হবার উপক্রম হয়েছে। আর কমিশনের আসায় এসব করা হয়েছে যাতে রোগীরা হাসপাতালে না থেকে ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারি বলেন, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রোগীদের জন্য উন্নত খাবার পরিবেশন করার কথা থাকলেও এসব উন্নত খাবার হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিজেরা হরিলুট করে। একই দিন হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা দুই ওয়ার্ডে মোট ১৮ জন রোগী (ভর্তি) চিকিৎসাধীন থাকলেও খাতায় ২৯ জন রোগী দেখানো হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে একাধিকবার স্থানীয় সাংসদ এমপি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে হাসপাতালের নোংরা ও দুড়ন্ধযুক্ত পরিবেশ এবং চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও হাসপাতালের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
এ ব্যাপারে তানোর হাসপাতালের কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা, ইসমাত আরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি যোগদানের পরে এখানে চিকিৎসা সেবার মাণ অনেকটা উন্নিত করা হয়েছে, তবে জনবল সংকটের কথা স্বীকার করেছেন।