Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

8kআহমেদ জামান।। খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬: আবু করিম (ছদ্মনাম) একটি সি.এন.জি অটো রিক্সা যোগে রাজধানী টিকাটুলী থেকে ধানমন্ডি যাচ্ছিলেন। গাড়ীটাকে জয়কালী মন্দির মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট থামায়। কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে। কোন দোষ ত্রুটি ছিল না। তারপরও উইপার না ঘুরার কারণে ঐ গাড়ীটির বিরুদ্ধে মামলা দেয়। গাড়ীটাকে গুলিস্থান, পল্টন, শাহবাগ, কাটাবন প্রভৃতি পয়েন্টে ট্রাফিক সার্জেন্টরা থামায় এবং কাগজপত্র দেখে ছেড়ে দেয়। তাতে আবু করিমের প্রায় ৪৫ মিনিট সময় নষ্ট হয়।

রহিম চৌধুরীর (ছদ্মনাম) নিজের প্রাইভেট কার যোগে বনানী যাচ্ছিলেন। কাকরাইল মোড়ে সার্জেন্ট গাড়ীটাকে থামিয়ে কাগজপত্র লাইসেন্স দেখে। তাতে কোন দোষ ত্রুটি না পেয়ে সীট বেল্ট না পরার কারণে গাড়ীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়। গাড়ীটা মহাখালী, কাকলী, খিলক্ষেত, এয়ারপোর্ট প্রভৃতি স্থানে সার্জেন্টরা থামায় এবং কাগজ পত্র, লাইসেন্স দেখে গাড়ীটাকে ছেড়ে দেয়। তাতে রহিম চৌধুরী প্রায় ১ ঘন্টা ব্যয় হয়। দু’টি ঘটনা প্রায় একই ধরণের। এটাকে তারা এক ধরণের ভোগান্তি মনে করেন।

সম্প্রতি রাজধানীতে ট্রাফিক সার্জেন্টদের যানবাহনের বিরুদ্ধে যে মামলা দেয়ার যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাতে জরিমানা থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে বটে। কিন্তু জনভোগান্তি প্রকট আকার ধারণ করবে বলে বিজ্ঞমহল মনে করেন। কয়েকজন সার্জেন্ট এর সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করে জানা যায়, আগে প্রতিমাসে প্রত্যেক সার্জেন্টকে ১৫০টি মামলা করতে হতো অর্থাৎ দৈনিক ০৫টি। এখন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের চাপে মামলা দিতে হচ্ছে প্রায় তিন থেকে চারগুন। কমপক্ষে ১৫টি মামলা প্রতিদিন দিতেই হচ্ছে। আর ১৫টি মামলা দিতে হলে কমপক্ষে ৭৫-৮০টি গাড়ী থামাতে হয়। এজন্য অনেক সময় ব্যয় হয়।

সরকার সার্জেন্টদেরকে শুধু মামলা দেওয়ার জন্য চাকুরী দেয় নাই। যানযট নিরসন, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, জনসেবাও তাদের দায়িত্ব। কিন্তু মামলার চাপে দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খাচ্ছে। এর পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে যানজটে আটকেপড়া যাত্রী সাধারণের উপর। সকল প্রকার যানবাহনের কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিকঠাক থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি বিষয়ে ইস্যু করে নুন কম ঝাল বেশি উসিলায় বউ পিটানো কায়দায় মামলা দিচ্ছে। যা এক ধরনের হয়রানির সামিল। প্রবাদ আছে লঘু পাপে গুরুদন্ড। রাজধানীতে দিবালোকে গণ পরিবহনে চলাচলকারী গাড়ীগুলোকে ঘন ঘন থামিয়ে মামলা দিতে গেলে যাত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মারাতœক ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটাতে পারে।

উল্লেখ্য বাস (ব), মিনিবাস (জ), অমিনিবাস, লেগুনা (ঝ), টেম্পু (ছ) প্রভৃতি গণপরিবহনের চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ীর কাগজপত্র তথা রেজিষ্টেশন, ফিটনেস, রুটপারমিট, স্টেট টোকেন, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি কোন একটি না থাকলেও বা যানবাহনের দৃশ্যমান ত্রুটি দেখা গেলেও লোক দেখানো মামলা দেওয়া ছাড়া কার্যত করার কিছু থাকে না। কেননা, এগুলো বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দলীয় নেতাদের ছত্র ছায়ায় প্রশাসনেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের লিয়াজোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সি.এন.জি, অটোরিক্সা ও মটর সাইকেলকে বেছে নিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত আরোহী বা হেলমেট না থাকার কারনে মামলা দিতে হচ্ছে মটর সাইকেলকে। মাঝে মাঝে এ নিয়ে অনেক বচসাও সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় দুই বৎসর আগে ধানমন্ডিতে মটর সাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা দিতে গেলে আশ্রাফ নামের জনৈক সার্জেন্ট ছাত্রদের দ্বারা প্রহৃত হয়। তাই মিনি কভার ভ্যান (ম), পিকআপ (ন), ডেলীভারী ভ্যান (ন/ঠ) প্রভৃতি চলে বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে। এদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে গেলেও নিজেদের ভিতরে নানা কোন্দল দেখা দিতে পারে বলে মামলা দেওয়া হয় না। মামলাগুলো যাচাই বাছাই করলে দেখা যাচেছ ক খ গ ঘ (প্রাইভেট কার) থ দ (অটোরিক্সা) ল হ (মটর সাইকেল) প্রভৃতি সিরিজেরই বেশি।

তাছাড়া রাজধানীতে প্রবেশদ্বার ঘেষা ট্রাফিক জোনে নিষিদ্ধ সময়ে প্রবেশকারী ট্রাক (ট), মিনিট্রাক (ড), কাভার্ড ভ্যান (ট) অ/উ নিজস্ব, লরী (ঢ), লং ভেহিক্যাল (শ/ঢ) এর বিরুদ্ধে মামলা দিতে গেলে সার্জেন্টরা কোন কোন সময় উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন হয়ে থাকেন। বিষয়টি বিবেচনা করে মামলার চাপ কমানোর জন্য এবং মামলার ক্ষেত্রে যানবাহনের আনুপাতিক হার ও সমনীতি প্রয়োগ করার ব্যবস্থা গ্রহনসহ যাত্রী ভোগান্তি রোধ গ্রহণের একান্ত প্রয়োজন বলে বিজ্ঞমহল মনে করেন।
সাংবাদিক ও কলাম লেখক